আলিপুরদুয়ার: উত্তরে এখনও তীব্র গরমের পূর্বাভাস নেই। দিনকয়েক ধরে দিন বা রাতে মিলছে বৃষ্টির দেখা। এই আবহে ৩০ এপ্রিল থেকে রাজ্যের সরকারি স্কুলগুলিতে গরমের ছুটি ঘোষণা করা হয়েছে। দক্ষিণবঙ্গের মতো উত্তরবঙ্গের বিভিন্ন জেলায় তাপমাত্রা তেমন চরম না হওয়ায় ছুটির ঘোষণায় সরব হয়েছে বিভিন্ন শিক্ষক সংগঠন। তাদের অভিযোগ, দক্ষিণবঙ্গের তাপমাত্রা বাড়তেই গ্রীষ্মের ছুটি দেওয়া হয়। উত্তরবঙ্গে তখন গরম থাক আর না থাক। বাস্তবে উত্তরবঙ্গে এখন গরমের ছুটি ঘোষণা করার মতো পরিস্থিতি তৈরি হয়নি। সেইসঙ্গে গ্রীষ্মের ছুটি ঘোষণা করতেই পঠনপাঠনেও ব্যাঘাত ঘটছে।
এবিষয়ে ডিপিএসসির চেয়ারম্যান পরিতোষ বর্মনের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, ‘৩০ এপ্রিল থেকে ছুটি ঘোষণা করা হয়েছে। একই সময় ছুটি ঘোষণা না হলে একই নিয়মে বিদ্যালয় পরিচালনা সম্ভব হবে না। তাই এই ছুটি বদল সম্ভব নয়।’
নিখিলবঙ্গ প্রাথমিক শিক্ষক সমিতির আলিপুরদুয়ার সম্পাদক প্রসেনজিৎ রায় বলেন, ‘উত্তরবঙ্গে তাপমাত্রা এখনও পঠনপাঠনের উপযোগী রয়েছে। দক্ষিণবঙ্গের তাপমাত্রা বৃদ্ধি পেতেই সারা রাজ্যে ছুটি ঘোষণা ঠিক হচ্ছে না। কারণ ছুটির পর যখন স্কুল খোলার সময় হয় তখন উত্তরবঙ্গে তাপমাত্রা বেড়ে যায়। সেই সময় আলিপুরদুয়ার সহ উত্তরবঙ্গের পড়ুয়াদের ক্লাস করতে হয়। তাই আলিপুরদুয়ার সহ উত্তরবঙ্গভিত্তিক ছুটির ঘোষণা হলে সুবিধা হবে।’ তাঁর আরও দাবি, প্রতিটি ডিপিএসসিতে এবিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়ার অধিকার দিলে পঠনপাঠন চালিয়ে যাওয়া সম্ভব। অতিরিক্ত ছুটির কারণে অভিভাবকদের একাংশের বেসরকারি বিদ্যালয়ের প্রতি ঝোঁক বৃদ্ধি পাচ্ছে।
যদিও এই দাবি ভিত্তিহীন বলে মনে করছে তৃণমূল মাধ্যমিক শিক্ষক সমিতি। রাজ্যে একাধিক জেলাতে আলাদা আলাদা সময় ছুটি দিলে সামেটিভ সহ অন্যান্য পরীক্ষায় প্রভাব পড়তে পারে মনে করছেন তারা। এবিষয়ে সংগঠনের জেলা সভাপতি ভাস্কর মজুমদার বলছেন, ‘একই সময় ছুটি ঘোষণা না হলে একই নিয়মে বিদ্যালয় পরিচালনা সম্ভব হবে না। তাই একই সময় ছুটি ঘোষণা করা হয়ে থাকে।’
অনির্দিষ্টকালের ছুটির ঘোষণায় অভিভাবকদের মধ্যে বিরূপ প্রভাব পড়ছে। বিশেষ করে দিনেরবেলা তাপমাত্রা বেশি থাকলে সকালের দিকে ক্লাস চালু রাখার পরামর্শ দিয়েছেন অনেকে।
রিতা দাস নামে এক অভিভাবক জানান, চলতি বছরে এখনও তেমন গরম পড়েনি। তারমধ্যেই গরমের ছুটি ঘোষণা হয়েছে। সম্প্রতি পরীক্ষা শেষ হয়েছে। তারপরেই ছুটি। এতে পঠনপাঠনে প্রভাব পড়তে পারে।
রাজু সাহা নামে আরেক অভিভাবক বলছেন, ‘উত্তরবঙ্গে এপ্রিল-মে মাসে ততটা গরম পড়ে না। অথচ স্কুল ছুটি দেওয়া হয়েছে মে মাসে। যখন এখানে গরমের মাত্রা বৃদ্ধি পাবে তখন স্কুল খুলবে। সত্যি বলতে কী, সরকারি স্কুলে ছুটি ছুটি করে কেটে যায়! তাই অনেকে বেসরকারি স্কুলে ছেলেমেয়েদের পড়ান।’
আবহাওয়া দপ্তর সূত্রে খবর, আলিপুরদুয়ার জেলায় এখন সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ২৮ ডিগ্রি থেকে ৩০ ডিগ্রি সেলসিয়াসে। তবে মাঝেমধ্যেই বৃষ্টির জন্য সেই তাপমাত্রা অনেকটাই কমে যাচ্ছে। এছাড়াও হালকা বাতাস থাকছে। এই আবহে পঠনপাঠনে অসুবিধা হওয়ার কথা নয় বলে দাবি শিক্ষক সংগঠন থেকে অভিভাবকদের।
অখিল ভারতীয় রাষ্ট্রীয় শৈক্ষিক মহাসংঘের জেলা সম্পাদক পিরাজ কিরণের বক্তব্য, ‘অযাচিত ছুটিতে পড়াশোনার স্বার্থ বিঘ্নিত হচ্ছে। উত্তরবঙ্গে তাপমাত্রা ততটা প্রখর নয়, ফলে এই ছুটির যৌক্তিকতা কতটা রয়েছে তা বোঝা যাচ্ছে না। আমরা উত্তরবঙ্গে আলাদা করে ছুটির দাবি করছি।’