আয়ুষ্মান চক্রবর্তী, আলিপুরদুয়ার: ন্যাশনাল ক্যারাটে চ্যাম্পিয়নশিপে অংশগ্রহণ করার সুযোগ পেল আলিপুরদুয়ারের (Alipurduar) তিন স্কুল পড়ুয়া। শুভাঙ্গি রায়, শ্রীপর্ণা পাল ও অমিত সাহা নামে ওই তিন খেলোয়াড় সম্প্রতি কলকাতায় ন্যাশনাল খেলার বাছাই পর্বে নির্বাচিত হয়েছে। আগামী ১১ থেকে ১৫ জুন উত্তরাখণ্ডের দেরাদুনে তারা ন্যাশনাল ক্যারাটে চ্যাম্পিয়নশিপে যোগদান করবে। মঙ্গলবারই তারা কলকাতা থেকে আলিপুরদুয়ারে ফিরেছে। খেলায় বাংলা দলের হয়ে প্রতিনিধিত্ব করতে পেরে তিনজনেই উচ্ছ্বসিত। তবে এখন তাদের মূল লক্ষ্য ন্যাশনালে ভালো খেলা। তাদের এই সাফল্যে অন্যান্য ক্যারাটে শিক্ষার্থী, প্রশিক্ষক সহ পরিবার সকলেই বেশ খুশি।
তিনজনের মধ্যে শুভাঙ্গি এই নিয়ে পঞ্চমবার ন্যাশনাল খেলার সুযোগ পেল। প্রথম সুযোগ আসে ২০১৯-এ। ২০২৩-এর দিল্লি ও দেরাদুনে ন্যাশনালে সে সোনা ও ব্রোঞ্জ পেয়েছিল। আলিপুরদুয়ারের ১১ নম্বর ওয়ার্ডের বাবুপাড়ার বাসিন্দা শুভাঙ্গি শহরের একটি বেসরকারি স্কুলে একাদশ শ্রেণিতে পড়ে। তবে তার ধ্যানজ্ঞান হল ক্যারাটে। চার বছর বয়সে শ্যাডো ফাইটিং থেকে তার শেখার শুরু। শুভাঙ্গি জানাল, প্রতিদিন দুই থেকে তিন ঘণ্টা করে সে অনুশীলন করে। ২০১৫ ও ২০১৮ সালে ডুয়ার্স কাপে কাতা ও কুমি বিভাগে সে সোনা জেতে। পাশাপাশি ২০১৯-এ কলকাতায় পঞ্চম ইন্টারন্যাশনাল ওপেন ক্যারাটে চ্যাম্পিয়নশিপেও কাতা ও কুমি বিভাগে সোনা পেয়েছে। শুভাঙ্গি ২০১৭ সালে ব্ল্যাকবেল্টের প্রথম ডিগ্রি এবং ২০২১-এ দ্বিতীয় ডিগ্রি পেয়েছে। শুভাঙ্গির কথায়, ‘এবার নির্বাচিত হওয়ার আগেই খুব উৎসাহিত ছিলাম। তবে একটু ভয়ও ছিল। যখন সোনা পেলাম তখন বাবার কথা মনে পড়ছিল। এই সুযোগে আমার প্রশিক্ষকের গুরুত্বও অপরিসীম। শুভাঙ্গির মা চন্দ্রাণী মুখোপাধ্যায়ও চান মেয়ে ভবিষ্যতে আরও উন্নতি করুক। তবে ওয়ার্ল্ড ক্যারাটে চ্যাম্পিয়নশিপে বেস্ট প্লেয়ার ও অলিম্পিকে সোনা জেতার স্বপ্ন দেখে সে।
অন্যদিকে আলিপুরদুয়ার-২ ব্লকের শামুকতলা এলাকার বাসিন্দা শ্রীপর্ণা পাল এই প্রথম ন্যাশনাল খেলবে। সুযোগ পেয়ে সে উচ্ছ্বসিত। শ্রীপর্ণা বলে, ‘প্রথমে স্বাস্থ্যের কথা মাথায় রেখে বাড়ি থেকে ক্যারাটেতে ভর্তি করিয়েছিল। তারপর এটা ভালো লেগে যায়। আমি পাঁচ বছর ধরে ক্যারাটে শিখছি।’ ২০২২-এ ইস্ট জোন ক্যারাটেতে এবং বেঙ্গল চ্যাম্পিয়নশিপে দু’বার শ্রীপর্ণা সোনা জিতেছে। তার বাবা সুরঞ্জিত পাল ও মা সুতপা পাল মেয়ের সাফল্যে খুশি। এছাড়া তার কোচ চন্দন দেবনাথও উচ্ছ্বসিত। বড় হয়ে আইএএস হতে চায় ওই পড়ুয়া। আরেক প্রতিযোগী অমিত সাহা এনিয়ে দ্বিতীয়বার ন্যাশনাল খেলতে যাবে। আগেরবার সে তৃতীয় রাউন্ডে উঠে আর এগোতে পারেনি। এবার সে সেই অধরা স্বপ্ন পূরণ করতে চায়। শোভাগঞ্জের বাসিন্দা অমিত তিন বছর ধরে ক্যারাটে শিখছে। সে প্রতিদিন ৩ ঘণ্টা ধরে অনুশীলন করে। অমিত এর আগে সিকিম ও ডুয়ার্স কাপে সোনা পেয়েছে। অমিত বলে, ‘আমি নিজের সেরাটা দেব। ভবিষ্যতে ভারতীয় সেনাবাহিনীতে যোগ দিয়ে আমি দেশের সেবা করতে চাই।’ মা অণিমা সাহাও এবার ছেলের সাফল্য নিয়ে আশাবাদী। সুভাঙ্গি ও অমিতের কোচ সুমন্ত দাসও চান, তাঁর দুই খেলোয়াড় আরও এগিয়ে যাক।