Alipurduar | ওদের মর্মে লাগে বসন্তের রং

Alipurduar | ওদের মর্মে লাগে বসন্তের রং

খেলাধুলা/SPORTS
Spread the love


প্রণব সূত্রধর, আলিপুরদুয়ার: রবীন্দ্রনাথ লিখেছিলেন, ‘রঙ যেন মোর মর্মে লাগে’। আর একথা আক্ষরিক অর্থেই সত্যি ওদের জন্য। ওদের মধ্যে কারও একদম জন্ম থেকে, কারও আবার একটু বড় হওয়ার পর এই পৃথিবীর আলো, রং, রূপের সঙ্গে কোনও পরিচিতি ঘটেনি। কোনটা সবুজ আবির, কোনটা লাল, তা তারা বুঝবে কী করে? চোখে দেখতে না পেলেও রাজেশ, দেবাশিসরা কিন্তু দিব্যি রংয়ের খেলায় মেতে ওঠে। রং মাখিয়ে ভূত বানিয়ে দেয় বন্ধুদের। হোলি ওদের কাছেও আসে।

কিন্তু কীভাবে? আলিপুরদুয়ারের (Alipurduar) সুবোধ সেন স্মৃতি দৃষ্টিহীন বিদ্যালয়ের দ্বিতীয় শ্রেণির পড়ুয়া রাজেশ ওরাওঁ বাকিদের সঙ্গে ‘খেলবো হোলি রং দেব না’ গানে মেতে উঠেছিল। তারই এক ফাঁকে জানায়, আবিরের গন্ধ তাদের রং চিনিয়ে দেয়। সবুজ আবিরের একরকম গন্ধ, লালের আরেকরকম। নীল, হলুদ প্রত্যেকটি আবিরেরই আলাদা আলাদা গন্ধ আছে নাকি! তবে রং চিনলেই তো হল না, ধরে মাখাতে হবে তো। নাকের মতোই তখন কাজে লাগে কান। বাকিরা যখন ছুটে পালাচ্ছে তখন তাদের পায়ের শব্দ, কোথাও ধাক্কা লাগলে সেটার শব্দ কিংবা কোথাও লুকিয়ে থাকলে তাদের নিঃশ্বাসের শব্দ খুব মন দিয়ে শোনে তারা। ব্যাস। একবার যদি কেউ ‘ধরা পড়ে’ যায়, তখন আর কোনও ছাড়াছাড়ি নেই, এমন রং মাখানো হয় যাতে সহজে কিছুতেই না ওঠে।

ওদিকে তখন বাজতে শুরু করেছে, ‘ফাগুনেরও মোহনায়’। তাতে পা মেলাতে মেলাতে চতুর্থ শ্রেণির দেবাশিস খেরওয়ার, অষ্টম শ্রেণির বিরাজ ভাগওয়ার, হাবিল কুশমা, বিপ্লব বর্মনরা শিক্ষকদের এনে দেওয়া ভেষজ আবিরে রাঙিয়ে দিচ্ছিল একে-অপরকে। তাছাড়া পিচকারি দিয়ে জল ছেটানো তো রয়েছেই।

আর পড়ুয়াদের এই দোল খেলার মধ্যেই যে সমস্ত আনন্দ লুকিয়ে, এমনটা নয়। ওই স্কুলের শিক্ষকরা জানালেন, রং খেলার পর সেটা ধুয়ে ফেলাও যেন রীতিমতো আরেকটা উৎসব। চুলে হলুদ রং লেগে, নাকি বাঁদিকের গালে লাল আবির, আয়না দেখে তা বোঝার উপায় তো নেই অনেকেরই। তখন সাহায্য করে বন্ধুরাই। ক্ষীণ দৃষ্টির পড়ুয়ারা বাকিদের জানিয়ে দেয়, শরীরের কোথায় রং লেগে আছে।

স্কুলের ভারপ্রাপ্ত শিক্ষক সুবল রায়ের কথায়, ‘প্রতিবছর পড়ুয়াদের ভেষজ আবির এনে দেওয়া হয়। এছাড়া পিচকারিও থাকে। খোলা মাঠে তাদের খেলার উপকরণ দেওয়া হয়। ওরা খুব আনন্দ করে।’

এই স্কুলে রং খেলা পড়ুয়াদের মনের এতটাই কাছাকাছি যে, অনেকে স্কুল ছেড়ে দেওয়ার পর আর কখনও দোলই খেলেনি। বলছিলেন এখানকার প্রাক্তনী ললিতা পাল। ললিতা বর্তমানে উত্তরবঙ্গ বিশ্ববিদ্যালয়ে বাংলায় পিএইচডি করছেন। স্কুল ছাড়ার পর আর হোলি খেলেননি, এমনকি বিশ্ববিদ্যালয়ের বসন্ত উৎসবেও কখনও শামিল হননি। তবে স্কুলের দোল খেলার প্রসঙ্গ উঠলেই এখনও তাঁর গলায় উচ্ছ্বাস। ললিতার কথায়, ‘কোনও রকম শব্দ পেলেই সহপাঠীরা কোথায় আছে তা জেনে যেতাম।’

অন্য কাহিনীও আছে। এই স্কুলেরই প্রাক্তনী আলিপুরদুয়ার জংশনের কৃষ্ণা মৃধা এখন গ্র্যাজুয়েশনের পর চাকরির প্রস্তুতি নিচ্ছেন। তিনি এখন বাড়িতে পরিবারের সঙ্গে দোল খেলেন। এখনও গন্ধ শুঁকেই আবিরের রং চিনতে পারেন। আর মনের চোখের সামনে ফুটে ওঠে স্কুলের বন্ধুদের সঙ্গে রং নিয়ে হুটোপাটি করার স্মৃতি।



Source link

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *