আলিপুরদুয়ার: অপেক্ষার অবসান। অবশেষে জেলা লাইব্রেরির স্বীকৃতি পেল আলিপুরদুয়ার এডওয়ার্ড লাইব্রেরি। সম্প্রতি কোচবিহারে একটি বিশেষ বৈঠকে বিষয়টি ঘোষণা করেছেন জনশিক্ষা প্রসার ও গ্রন্থাগার পরিষেবামন্ত্রী সিদ্দিকুল্লাহ চৌধুরী। জেলা গ্রন্থাগার আধিকারিক শিবনাথ দে বলেন, ‘ধীরে ধীরে পরিকাঠামো গড়ে তোলা হবে। পর্যাপ্ত কর্মী নিয়োগ করা হবে। পাঠকরা উন্নতমানের পরিষেবা পাবেন।’
১৯১৭ সাল নাগাদ এডওয়ার্ড লাইব্রেরি স্থাপিত হয়েছিল। আলিপুরদুয়ার জেলা গঠিত হওয়ার পরেও কিন্তু এই লাইব্রেরি জেলা লাইব্রেরির তকমা পায়নি। জেলাবাসীর এই দাবি ছিল দীর্ঘদিন ধরে। এমনকি একবার জেলা লাইব্রেরির সাইনবোর্ডও লাগানো হয়েছিল। তবে খাতায়-কলমে তা বাস্তবায়িত না হওয়ায় বোর্ড খুলেও ফেলা হয়। এবার অবশ্য গ্রন্থাগারমন্ত্রীর ঘোষণায় সমস্ত জল্পনায় ইতি পড়ল। আলিপুরদুয়ারের পাশাপাশি কালিম্পং ও ঝাড়গ্রামেও জেলা লাইব্রেরি তৈরির ঘোষণা করেছেন সিদ্দিকুল্লাহ।
কিন্তু শুধু ঘোষণা হলেই তো হল না, প্রয়োজন উপযুক্ত পরিকাঠামো। এডওয়ার্ড লাইব্রেরিতে পরিকাঠামোগত একাধিক সমস্যা রয়েছে। নেই পর্যাপ্ত কর্মী। সেক্ষেত্রে লাইব্রেরির দ্বিতল বা ত্রিতল নতুন ভবন নির্মাণ করা হবে। ১০ জন কর্মী নিয়োগ সহ অন্যান্য পরিষেবাও গড়ে তোলা হবে। আধুনিক লাইব্রেরির মতো আগামীতে ওই লাইব্রেরির সম্পূর্ণ তথ্য সংরক্ষণ কম্পিউটারের মাধ্যমে হবে। পাঠকরা ওয়াই-ফাই পরিষেবা পাবেন। বসানো হবে ফোটোকপি মেশিন। এছাড়া স্পেশাল কেরিয়ার গাইডেন্স কোর্স ও আলাদা বিভাগ চালু করা হবে। বই পড়ার জন্য একটি বিশাল হলঘর তৈরির পরিকল্পনা রয়েছে। বাইরে থাকবে সাইকেলস্ট্যান্ড।
এডওয়ার্ড লাইব্রেরিতে এখন মাত্র একজন স্থায়ী নৈশপ্রহরী রয়েছেন। কামাখ্যাগুড়ির লাইব্রেরিয়ান সহ ঢালকর ও নিউটাউন লাইব্রেরির কর্মীরা দু’দিন করে এডওয়ার্ড লাইব্রেরির অতিরিক্ত দায়িত্ব সামলান। কর্মীসংকট ছাড়াও পরিকাঠামোগত একাধিক সমস্যা বড় আকার নিয়েছে। তবে জেলা গ্রন্থাগারের জন্য পরিকাঠামোগত উন্নয়ন ও অর্থবরাদ্দ হলে সেইসব সমস্যা মিটবে বলে বিশ্বাস সকলের। ইতিমধ্যেই সরকারিভাবে কাগজপত্র তৈরির কাজ শুরু হয়ে গিয়েছে বলে সূত্রের খবর।
জেলার বিশিষ্ট নাগরিক অর্ণব সেন বলেন, ‘প্রায় ৩০ বছর লাইব্রেরি কমিটির সভাপতি ছিলাম। কমিটির সকলে চাঁদা তুলে লাইব্রেরির পরিষেবা চালু রাখার ব্যবস্থা করেছিলাম। কর্মীসংখ্যা বৃদ্ধি ও পরিকাঠামো গড়ে তোলা হলে তবেই পাঠকরা উপকৃত হবেন।’ আরেক বিশিষ্ট নাগরিক প্রমোদ নাথ বলেন, ‘বিভিন্ন সময় জেলা গ্রন্থাগারে উন্নীত করার দাবি ছিল। সেই দাবি পূরণ হওয়ায় আমরা খুশি। তবে পরিষেবা বজায় রাখতে পারলে তবেই পাঠকদের সংখ্যা বৃদ্ধি পাবে এবং তাঁরা নিয়মিত আসবেন।’
অন্যদিকে, জেলার ৩৭টি লাইব্রেরির মধ্যে বড় অংশের পরিকাঠামো গড়ে তোলা হয়েছে। বাকি বেহাল লাইব্রেরি সংস্কারের আশ্বাসও দিয়েছেন মন্ত্রী। জেলায় প্রায় ৮০ জন লাইব্রেরি কর্মীর প্রয়োজন থাকলেও এখন রয়েছেন মাত্র ৩০ জন। অবিলম্বে সেখানে অস্থায়ী কর্মী নিয়োগ করা হবে।