ভাস্কর শর্মা, ফালাকাটা: এ যেন রূপকথার গল্প! বুধবার সকালে ঘরের বারান্দায় বসে চা-মুড়ি খাচ্ছিল ক্লাস সেভেনের সায়ন বিশ্বাস। হঠাৎ বাড়িতে ঢুকে পড়ল ছয়-সাতজন লোক, সঙ্গে আবার পুলিশ! সায়ন পুলিশ দেখে ভয় পেয়ে বাবাকে ডাকতে শুরু করে। সে তো আর জানত না, পুলিশের সঙ্গে ছিলেন রানুবালা, সম্পর্কে তার ঠাকুরমা। আর জানবেই বা কী করে? সায়নের জন্মের আগেই তো বাড়ি ছেড়ে চলে গিয়েছিলেন ঠাকুরমা রানুবালা বিশ্বাস। বুধবার প্রায় এক যুগ পর মুম্বইয়ের একটি এনজিও এবং আলিপুরদুয়ারের (Alipurduar) ফালাকাটা থানার পুলিশের সহযোগিতায় রানুবালা বাড়ি ফিরলেন।
সায়নের ডাক শুনে ততক্ষণে তার বাবা সঞ্জয় বিশ্বাস ঘর থেকে বেরিয়ে আসেন। নিজের মা’কে হঠাৎ উঠোনে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে হতভম্ব হয়ে যান। ততক্ষণে প্রতিবেশীদের মধ্যে খবর ছড়িয়ে পড়েছে। বাড়িতে ভিড়ও বাড়তে শুরু করেছে।
ফালাকাটা থানার আইসি অভিষেক ভট্টাচার্য বলেন, ‘দিন কয়েক আগে মুম্বইয়ের একটি এনজিও আমাদের ফোন করে রানুবালাদেবীর বিষয়ে খোঁজখবর দেয়। আমি কাউন্সিলারের মাধ্যমে তার পরিবারের সঙ্গে যোগাযোগ করি। পরে আমাদের সবার প্রচেষ্টায় ওই বৃদ্ধাকে বাড়ি ফেরানো সম্ভব হল।’
সঞ্জয়ের কথায়, ‘১২ বছর আগে অষ্টমীপুজোর দিন মা বাড়ি ছেড়ে চলে যায়। আমরা বহু জায়গায় খোঁজাখুঁজি করি। শেষে আশাই ছেড়ে দিয়েছিলাম। কিন্তু কয়েকদিন আগে খবর আসে মা’কে পাওয়া গিয়েছে। এতদিন পর মা’কে পাব, তা ভাবতেও পারিনি।’
২০১৩ সালে অষ্টমীর দিন রাগ করে বাড়ি ছেড়েছিলেন রানুবালা। ফালাকাটা রেলস্টেশন থেকে ট্রেনে চেপে সোজা শিলিগুড়ি। এরপরে কোনওভাবে ঢুকে পড়েন নেপালে। সেখানে একটি আশ্রমে আশ্রয় নেন। প্রায় ৩ বছর সেখানে তাঁর মানসিক সমস্যার চিকিৎসাও চলে। পরে মুম্বইয়ের একটি সংস্থা নেপাল থেকে রানুবালাকে সোজা মুম্বই নিয়ে যায়। পরে সেখানেই গত ৯ বছর তিনি ছিলেন। সেখানেই তাঁর চিকিৎসা চলতে থাকে। মুম্বইয়ের স্বেচ্ছাসেবী সংস্থার অন্যতম সদস্য সমর বসাক বলেন, ‘ওই বৃদ্ধা যখন আমাদের কাছে আসেন, তখন তিনি পুরানো কথা বলতে পারতেন না। কয়েক বছর আগে ঠিকানা জানতে চাইলে জলপাইগুড়ি জেলার নাম বলতে পারেন। আস্তে আস্তে আরও সুস্থ হয়ে ওঠেন। গত বছর ফালাকাটার কলেজপাড়ায় তার বাড়ি বলে জানান। তখন আমরা প্রশাসনের সঙ্গে যোগাযোগ করি। শেষমেশ এদিন পুলিশের সহযোগিতায় ওই বৃদ্ধাকে পরিবারের হাতে তুলে দিই।’
এদিন বাড়ি ফেরার পরই তাঁকে দেওয়া হয় চা-বিস্কুট। পরে দুপুরে ভাত-মাছ দিয়ে পেটপুরে খাওয়াদাওয়া করেন তিনি। বাড়ি ফিরে কেমন লাগছে? অস্পষ্টভাবে রানুবালা বলেন, ‘বহুদিন পর চেনা মুখগুলো দেখছি। খুব ভালো লাগছে। আমি আর পরিবার ছেড়ে যাব না।’