দামিনী সাহা, আলিপুরদুয়ার: রবিবার জামাইষষ্ঠী। বিবাহিত বাঙালির জন্য দিনটি বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ। শাশুড়ি আর জামাইয়ের সম্পর্ককে মজবুত করে তুলতে এই দিনটি বরাবরই এক বিশেষ তাৎপর্য বহন করে। তবে এবার শুধুমাত্র মাছমাংস বা মিষ্টির পাতে নয়, আলাদা করে নজর থাকছে উপহারে। কে কাকে কী উপহার দেবে- সেই ভাবনায় এখন শহরের (Alipurduar) ঘরে ঘরে আলাদা প্রস্তুতি।
নিউটাউনের নতুন জামাই সৌরভ পাল বললেন, ‘আমার প্রথম জামাইষষ্ঠী। আমি ঠিক করেছি আমার শাশুড়িমাকে একটা রেশমের শাড়ি আর একটা ডিজিটাল ব্লাডপ্রেশার মাপার মেশিন দেব। উনি সুগার, প্রেশারের রোগী। তাই ভাবলাম স্বাস্থ্য আর ভালোবাসা, দুইই একসঙ্গে হোক।’ স্ত্রী স্নেহা হেসে বলেন, ‘মা শুনেই খুব খুশি হয়েছেন। বললেন, জামাই না, যেন নিজের ছেলে!’
নিউটাউনের সুকান্ত সাহা গান ভালোবাসেন, আর তাঁর শাশুড়িও তাই। বললেন, ‘শাশুড়িকে ভালো ব্লুটুথ স্পিকার দেব। পেনড্রাইভে কিছু পুরোনো বাংলা ও হিন্দি গানও তুলে রেখেছি। উৎসবটা সুরেই ভরে উঠুক, এটাই চাই।’
বীরপাড়ার অনির্বাণ সরকার এবার তাঁর শাশুড়িমাকে দিতে চলেছেন একেবারে অভিনব উপহার। একটি হাতে আঁকা পোর্ট্রেট। এই ছবিটি নিজেই এঁকেছেন অনির্বাণ। তিনি বলেন, ‘শুধু দোকান থেকে কিছু কিনে দেওয়া নয়, নিজের হাতে বানানো উপহারে আলাদা ভালোবাসা থাকে। উনি জানেনই না যে আমি ছবি এঁকেছি- চমকটা দেখার জন্য আমিও অপেক্ষায় আছি।’
নিউ আলিপুরদুয়ারের অভীক দাস গিফট হিসেবে বেছে নিয়েছেন স্মৃতি আর সংবেদন। একটি ফোটোফ্রেমে বাঁধানো ‘পাঁচটি বিশেষ মুহূর্ত’র কোলাজ। প্রতিটি ছবির সঙ্গে থাকবে হাতে লেখা ছোট্ট নোট। অভীক বলেন, ‘উপহার যদি মন থেকে হয়, টাকার মূল্য তার প্রধান নয়। আমি চাই, উনি বুঝুন- আমি তাঁকে কতটা ভালোবাসি আর সম্মান করি।’
অন্যদিকে, শাশুড়িরাও তাঁদের জামাইদের জন্য নানান উপহারের পরিকল্পনা করেছেন। নিউ আলিপুরদুয়ারের চন্দনা চক্রবর্তী বলেন, ‘আমার জামাই বই ভালোবাসে। তাই ওর জন্য এনেছি একটা ইংরেজি থ্রিলার সিরিজ আর একটা সুন্দর পাঞ্জাবি। জামাইষষ্ঠী পাঞ্জাবি ছাড়া কল্পনাই করা যায় না।’
কলেজপাড়ার প্রভা সেনগুপ্ত বলেন, ‘জামাই এখন নতুন চাকরি করছে। অফিস ব্যাগ দরকার ছিল। ভালোমানের একটা ব্যাগ এনেছি। আর তার সঙ্গে নিয়েছি একটা ঘড়ি। সঙ্গে মিষ্টি তো থাকছেই। সে শুধু আমার মেয়ের জামাই নয়, সে আমার ছেলের সমান।’
এভাবেই আলিপুরদুয়ার শহরের নানা পরিবারের মধ্যে চলছে জামাইষষ্ঠীর উৎসবের প্রস্তুতি। শুধু উপহার নয়, এই দিনটি শাশুড়ি ও জামাইয়ের সম্পর্কের নবজীবন দিতে বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ। উপহারে যেন মিশে থাকে শ্রদ্ধা, ভালোবাসা আর পরিবারের মমত্ববোধ। প্রত্যেকটা উপহারেই লুকিয়ে থাকে সম্পর্কের গভীরতা।