আলিপুরদুয়ার: গ্রীষ্মের দুপুর। আলিপুরদুয়ার শহরের চৌপথি মোড়ে তীব্র রোদ, যেন চারপাশের সব কিছুকে ঝলসে দিতে চায়। হঠাৎই চোখে পড়ল তিন তরুণীর দিকে। একজন স্কুটির সাইড মিররে নিজেকে একটু ভালো করে দেখে নিচ্ছেন। জিনস ও কুর্তিতে স্টাইলিশ চেহারা, চোখে বড় ফ্রেমের রঙিন সানগ্লাস। অন্যজনের ক্যাট-আই সানগ্লাস, আর একজনের চোখে রেট্রো রাউন্ড গ্লাস। হাসতে হাসতে তাঁরা বললেন, ‘সানগ্লাস এখন শুধু রোদ আটকানোর জন্য নয়- এটা আমাদের পার্সোনাল স্টাইল স্টেটমেন্ট!’ আর শহরের গরমে ফ্যাশনের অন্যতম অনুষঙ্গ হয়ে উঠেছে এই সানগ্লাস।
কলেজ পড়ুয়া শ্রেয়া দে বলেন, ‘সানগ্লাস এখন আর শুধু রোদ থেকে চোখ বাঁচানোর জন্য নয়। এটা আমার ফ্যাশনের অংশ হয়ে গিয়েছে। রোজের সাজে একেকদিন একেক স্টাইলের সানগ্লাস পরি।’ পাশে থাকা তাঁর বান্ধবী তিতিক্ষা সেন জানান, ক্যাজুয়াল বা ট্র্যাডিশনাল, সবরকমের পোশাকের সঙ্গেই মানানসই সানগ্লাস থাকলে লুকটা একদম কমপ্লিট হয়। আরেক বন্ধু প্রিয়াংকা বিশ্বাস জানালেন, তাঁর কালেকশনে সানগ্লাস রয়েছে পাঁচটা। রোদের দিনে তো লাগেই, এছাড়াও যে কোনও সময় ঝলমলে দিনে পরে নেন।
কিন্তু শুধু তরুণীরাই নন, সানগ্লাসের ফ্যাশনে পিছিয়ে নেই প্রৌঢ়ারাও। বছর ৪৯-এর সরকারি কর্মী শোভা বর্মা বলেন, তাঁর চোখে রোদে জ্বালা করে, তাই ডাক্তার সানগ্লাস পরতে বলেছেন। কিন্তু তিনি এমন স্টাইল বেছে নেন যাতে দেখতেও ভালো লাগে। গৃহবধূ সীমা সাহা বলেন, ‘আগে ভাবতাম সানগ্লাস বুঝি শুধু তরুণীদের জন্য। কিন্তু এখন বাজারে এমন নানারকম ডিজাইন এসেছে যে আমাদেরও পরতে ভালো লাগে। বিশেষ করে বাজারে গেলে বা ছেলেমেয়েকে স্কুলে নিয়ে গেলে পরে নিই।’
এই চাহিদাকে মাথায় রেখেই শহরের দোকানগুলোতে এখন সানগ্লাসের বাহার। আলিপুরদুয়ার হাসপাতাল চৌপথি এলাকার দোকানদার সুমন সাহা বলেন, ‘এই মরশুমে আমাদের সানগ্লাসের বিক্রি প্রায় দ্বিগুণ হয়েছে। আগের তুলনায় এখন ক্রেতারা অনেক বেশি স্টাইল কনসাস। শুধু ব্র্যান্ড নয়, রং, ফ্রেমের গঠন সব কিছুতেই নজর দেন।’ শহরের আরেক দোকানদার রাহুল রায় জানালেন, বয়স যাই হোক, সবার পছন্দ এখন ইউনিক কিছু। কেউ চাইছেন গোল্ডেন ফ্রেম, কেউ চাইছেন মিরর লেন্স। অনেকে চোখের পাওয়ার সহ সানগ্লাসও বানাচ্ছেন।
অনেকের ধারণা এই প্রবণতার পেছনে রয়েছে সোশ্যাল মিডিয়া। ইনস্টাগ্রাম রিল কিংবা ফেসবুক পোস্টে ট্রেন্ডি লুক দেখিয়ে অনুপ্রাণিত হচ্ছেন অনেকেই। একই সঙ্গে চিকিৎসকরা বলছেন, দীর্ঘ সময় রোদের মধ্যে বাইরে থাকলে সানগ্লাস চোখের জন্য উপকারী। আলিপুরদুয়ার শহরের চক্ষু বিশেষজ্ঞ দেবাঙ্কুর রায় বলেন, ‘ইউভি প্রোটেকশন সহ সানগ্লাস চোখকে সূর্যের ক্ষতিকর রশ্মি থেকে বাঁচায়, চোখ শুকিয়ে যাওয়া বা চুলকানি থেকেও রক্ষা করে। তাই প্রত্যেকের উচিত রোদে বেরোলেই সানগ্লাস ব্যবহার করা।’
গরমে নানারকম পোশাক, ছাতা বা স্কার্ফ যেমন দরকার, ঠিক তেমনই সানগ্লাস হয়ে উঠেছে আধুনিক জীবনযাত্রার এক অপরিহার্য অংশ। এখন রোদ মানেই শুধু অস্বস্তি নয়, রোদ মানে ফ্যাশনের নতুন ভাষা। চোখে স্টাইল ভরে রাস্তায় বেরিয়ে পড়ছে শহরের নারীরা। আলিপুরদুয়ারের গ্রীষ্মকাল তাই শুধু ঘাম আর গরমে এখন সীমাবদ্ধ নয়। রোদ্দুর এখন স্টাইল স্টেটমেন্ট, আর সানগ্লাস তার অপরিহার্য হাতিয়ার।