লন্ডন: প্রথম ইনিংসে চার উইকেট। দ্বিতীয় ইনিংসে ছয়। সবমিলিয়ে ম্যাচে মোট দশ উইকেট। সঙ্গে চেতন শর্মাকে টপকে যাওয়া। এজবাস্টন টেস্টে অভিশাপ কাটিয়ে টিম ইন্ডিয়া সিরিজে সমতা ফিরিয়েছে। ম্যাচের সেরা হয়েছেন অধিনায়ক শুভমান গিল। দশ উইকেট নিয়ে আকাশও ম্যাচের সেরা হতে পারতেন। কিন্তু ম্যাচ সেরা না হওয়ার কোনও আক্ষেপ নেই বাংলার আকাশের। বদলে রয়েছে আগামীর সাফল্যের স্বপ্ন। সঙ্গে পরিবারের প্রতি দায়িত্বও। সেই দায়িত্ববোধ থেকেই ক্যানসার আক্রান্ত দিদির প্রতি রয়েছে সমবেদনা। এজবাস্টন টেস্টে টিম ইন্ডিয়ার জয়ের পর মাঠে চেতেশ্বর পূজারাকে একান্ত সাক্ষাৎকার দিয়েছিলেন আকাশ। সেখানেই তাঁর দশ উইকেট নেওয়া ও টিম ইন্ডিয়ার এজবাস্টন জয়ের সাফল্য ক্যানসার আক্রান্ত দিদিকে উৎসর্গ করার কথা ঘোষণা করেছেন আকাশ। বলেছেন, ‘একটা কথা আমি আগে কখনও কাউকে বলিনি। আজ বলছি। এজবাস্টন টেস্টের এই সাফল্য আমার ক্যানসার আক্রান্ত দিদিকে উৎসর্গ করতে চাই। শেষ দুই মাস ধরে দিদি ক্যানসার আক্রান্ত। এখন অবশ্য অনেকটা ভালো আছে ও। আমি দিদিকেই এই সাফল্য উৎসর্গ করতে চাই।’
বছর কয়েক আগে প্রথমে বাবা ও পরে দাদাকে ছয় মাসের ব্যবধানে হারিয়েছিলেন আকাশ। এমন ঘটনার পর তিনি মানসিকভাবে অনেকটাই ভেঙে পড়েছিলেন। কিন্তু ক্রিকেটার হয়ে জাতীয় দলের প্রতিনিধিত্ব করার স্বপ্ন ছাড়েননি। এজবাস্টনের আকাশ প্রমাণ করেছেন, নিষ্ঠা, ইচ্ছা থাকলে অসম্ভবকে সম্ভব করা যায়। এহেন আকাশের মুখে তাঁর কথা শুনে আবেগে ভেসে গিয়েছেন দিদি আখণ্ড জ্যোতি সিংহও। ভাইয়ের পারফরমেন্সে তিনি গর্বিত। আর সেই গর্বের রেশ আজ ধরা পড়েছে সর্বভারতীয় এক সংবাদমাধ্যমে দেওয়া সাক্ষাৎকারে। যেখানে আকাশের দিদি বলেছেন, ‘ভাইকে নিয়ে আমি গর্বিত। দেশকে ও ম্যাচ জিতিয়েছে। আমি চাই আমাদের দেশের জন্য এমন সাফল্য ও আরও নিয়ে আসুক।’ ইংল্যান্ডে থাকা ভাইয়ের জন্য আবেগঘন বার্তাও দিয়েছেন ক্যানসার আক্রান্ত দিদি। বলেছেন, ‘আমি এখন ঠিক আছি। আমার জন্য চিন্তা করতে হবে না ওকে। আকাশ শুধু মাঠে নিজের সেরাটা দিয়ে যাক। আমার ও আমাদের পরিবারের সমর্থন সবসময় ওর সঙ্গে থাকবে।’
এজবাস্টন টেস্ট জয়ের পর ভাইয়ের সঙ্গে ভিডিও কলে কথা হয়েছে দিদির। কিন্তু তিনি ভাবতে পারেননি দুনিয়ার দরবারে ভাই আকাশ তাঁর কথা তুলে ধরবেন। সেই আবেগে ভেসে আকাশের দিদি আজ বলেছেন, ‘এজবাস্টন টেস্টের প্রতিটা মুহূর্ত দারুণ উপভোগ করেছি। বাড়ির সবাই একসঙ্গে সারাদিন ধরে খেলা দেখেছি। পরের ম্যাচগুলোও দেখব। আর চাইব আকাশের সাফল্য। ম্যাচ জয়ের পর সম্প্রচারকারী চ্যানেলে আকাশ যে আমার কথা তুলে ধরবে, ভাবতে পারিনি। ও আমায় ও আমাদের পরিবারকে কতটা ভালোবাসে, সেটা প্রমাণ করে দিয়েছে। দিদি হিসেবে আমি চাই, আকাশ আরও সফল হোক।’ শেষ আইপিএলে আকাশ যখন লখনউ সুপার জায়েন্টসের হয়ে খেলছিলেন, সেই সময় গুরুতর অসুস্থ হয়ে পড়েছিলেন দিদি জ্যোতি। ভর্তি হতে হয়েছিল হাসপাতালে। খবর পাওয়ার পরই দ্রুত সেখানে হাজির হয়েছিলেন আকাশ। চিকিৎসার যাবতীয় দায়িত্ব তুলে নিয়েছিলেন নিজের কাঁধে। সেকথা শুনিয়ে তাঁর দিদি বলেছেন, ‘আমাদের ভাইবোনদের মধ্যে বরাবরই সম্পর্কটা দারুণ। আকাশ বিহারের বাড়িতে এলে আমার হাতের রান্না ছাড়া খায় না। ইংল্যান্ড থেকে ও ফেরার পর আকাশের পছন্দের যাবতীয় পদ রান্না করে দেব আমি।’
এদিকে, গতকাল এজবাস্টন টেস্ট জয়ের মাধ্যমে সিরিজে সমতা ফিরিয়ে আজই লন্ডন পৌঁছে গেল টিম ইন্ডিয়া। বৃহস্পতিবার থেকে ‘দ্য হোম অফ’ ক্রিকেটে শুরু সিরিজের তিন নম্বর টেস্ট। মঙ্গলবার থেকে লর্ডসে অনুশীলন রয়েছে ভারতীয় দলের। সাময়িক বিশ্রামের পর্ব মিটিয়ে লর্ডস টেস্টে টিম ইন্ডিয়ার প্রথম একাদশে ফিরতে চলেছেন জসপ্রীত বুমরাহ। বড় অঘটন না হলে বুমরাহর সঙ্গে সম্ভবত নতুন বলটা ভাগ করে নেবেন আকাশই। বিলেতের আকাশে ভারতীয় ক্রিকেটের সূর্যোদয় যে ঘটে গিয়েছে।