উত্তরবঙ্গ সংবাদ ডিজিটাল ডেস্ক: প্রচণ্ড গরম থেকে বাঁচতে এসির (Air Conditioner) ব্যবহার ক্রমশ বাড়ছে। ভ্যাপসা গরমে স্বস্তি পেতে বাড়িতে, গাড়িতে, অফিসে এসি ব্যবহার না করলে চলেই না। অথচ খুব কম লোকই জানেন, দীর্ঘক্ষণ শীতাতপনিয়ন্ত্রিত পরিবেশে থাকলে চোখের শুষ্কতা, লালচে ভাব, চোখ জ্বালা, চুলকানি বা অস্বস্তি হতে পারে। দীর্ঘসময় এসি ঘরে থাকা, কম্পিউটার বা স্মার্টফোনের স্ক্রিনে কাজ করা থেকে চোখে একাধিক সমস্যা হতে পারে। লিখেছেন শিলিগুড়ির দ্য হিমালয়ান আই ইনস্টিটিউটের আই সার্জন ডাঃ অরণি চক্রবর্তী।
এসি যেভাবে প্রভাবিত করে –
শুষ্ক চোখ বা ড্রাই আইঃ এয়ার কন্ডিশনিং বাতাস থেকে আর্দ্রতা দূর করে একে শুষ্ক করে তোলে, যা আপনার চোখের সুরক্ষা প্রদানকারী টিয়ার ফিল্মকে প্রভাবিত করে। ফলে শুষ্ক চোখের সমস্যা দেখা দেয়। এর লক্ষণের মধ্যে রয়েছে, চোখের জ্বালাভাব, চোখ লাল হয়ে যাওয়া, ঝাপসা দৃষ্টি, চোখের ভিতর কিছু আটকে থাকার অনুভূতি প্রভৃতি।
চোখের ওপর চাপ বৃদ্ধিঃ শীতাতপনিয়ন্ত্রিত পরিবেশে দীর্ঘসময় ধরে কম্পিউটার বা যে কোনও ডিজিটাল ডিভাইসে কাজ করলে চোখে অতিরিক্ত চাপ পড়ে। ফলে চোখে ক্লান্তি, মাথাব্যথা প্রভৃতি সমস্যা হতে পারে।
অ্যালার্জির ঝুঁকি বৃদ্ধিঃ এয়ার কন্ডিশনিং সিস্টেমগুলি বাতাস সঞ্চালনের সঙ্গে সঙ্গে কখনও ধুলো, ছত্রাক এবং অ্যালার্জেন বহন করে। এসির ফিল্টার নিয়মিত পরিষ্কার না করা হলে এগুলি অ্যালার্জির প্রতিক্রিয়া তৈরি করতে পারে। ফলে চোখ থেকে জল পড়া, চোখে লালভাব, চুলকানি হয়। বিশেষ করে যাঁরা কনট্যাক্ট লেন্স ব্যবহার করেন, তাঁদের ক্ষেত্রে এই সমস্যা বেশি দেখা যেতে পারে।
এসিতে থেকেও চোখ সুরক্ষিত রাখার উপায়
চোখের সুরক্ষার জন্য আপনাকে এসির ব্যবহার বন্ধ করতে হবে না। নিম্নলিখিত পদ্ধতির মাধ্যমে আপনি চোখ সুস্থ রাখতে পারেন –
হাইড্রেটড থাকুন – প্রচুর পরিমাণে জল খেলে চোখ সহ শরীরের আর্দ্রতার মাত্রা বজায় থাকে। তাই দিনে কমপক্ষে ২-৩ লিটার জল খাওয়া উচিত।
হিউমিডিফায়ার ব্যবহার – হিউমিডিফায়ার বাতাসে আর্দ্রতা যোগ করে, অতিরিক্ত শুষ্কতা রোধ করে। আপনার ঘরে বা অফিসে এটি রাখলে বাতাসে আর্দ্রতার পরিমাণ বজায় থাকে এবং শুষ্ক চোখের সমস্যাকেও প্রতিহত করতে সাহায্য করে।
এসির তাপমাত্রা – বিশেষজ্ঞদের মতে, এসির তাপমাত্রা কখনোই ২৩ ডিগ্রির থেকে কম করা উচিত নয়। যে ঘরে এসি রয়েছে, সেখানে একটি জলের পাত্র রাখতে পারেন। এতে ঘরে আর্দ্রতার ভারসাম্য বজায় থাকবে। এসি ব্লোয়ারের কাছ থেকে দূরে থাকার চেষ্টা করুন।
স্ত্রিন টাইম থেকে বিরতি নিন – কম্পিউটারে কাজ করার সময় বা টিভি দেখার সময় আমরা কম চোখের পলক ফেলি, যা শুষ্ক চোখকে আরও খারাপ করে তুলতে পারে। এক্ষেত্রে ২০-২০-২০ নিয়মটি মেনে চলার চেষ্টা করুন। প্রতি ২০ মিনিট অন্তর ২০ ফুট দূরে থাকা কোনও কিছুর দিকে ২০ সেকেন্ডের জন্য তাকান ও চোখের পলক ফেলুন। এতে চোখের চাপ কম হবে এবং শুষ্কভাবও কমবে।
নিয়মিত চোখের ড্রপ ব্যবহার– লুব্রিকেটিং আইড্রপ চোখকে আর্দ্র রাখতে এবং শুষ্কতা দূর করতে সাহায্য করে। আপনি যদি চোখে ঘনঘন জ্বালা অনুভব করেন, তাহলে একজন ডাক্তারের সঙ্গে পরামর্শ করে আপনার জন্য উপযুক্ত আইড্রপ ব্যবহার করুন।
প্রতিরক্ষামূলক চশমার ব্যবহার – আপনি যদি দীর্ঘসময় ধরে এয়ার কন্ডিশনিং ঘরে বসে কম্পিউটারে কাজ করেন, তাহলে চোখের চাপ কমাতে ব্লু লাইট ফিল্টারযুক্ত চশমা ব্যবহার করুন।
কনট্যাক্ট লেন্সের ব্যবহার সীমিত করা – এসি ঘরে দীর্ঘসময় ধরে কনট্যাক্ট লেন্স পরে থাকলে শুষ্ক চোখের লক্ষণগুলি আরও বেড়ে যেতে পারে। তাই মাঝমধ্যে চশমা পরার অভ্যাস করুন এবং লুব্রিকেটিং আইড্রপ ব্যবহার করুন।
নিয়মিত চোখ পরীক্ষা করান – যদি আপনি চোখে জ্বালাপোড়া বা শুষ্কভাব অনুভব করেন তাহলে চক্ষু বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নিন। প্রাথমিক পর্যায়ে রোগনির্ণয় এবং চিকিৎসা আপনার চোখকে সুস্থ রাখতে এবং জটিলতা প্রতিরোেধ সাহায্য করবে।
চোখের স্বাস্থ্যের জন্য পুষ্টিকর খাদ্যাভ্যাস
ওমেগা-থ্রি ফ্যাটি অ্যাসিড, ভিটামিন-এ এবং অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট সমৃদ্ধ খাবার চোখ সুস্থ রাখতে সাহায্য করে। ওমেগা-থ্রির উৎস মাছ, তিসির বীজ, আখরোট, ভিটামিন-এ যুক্ত খাবার যেমন গাজর, পালং শাক, মিষ্টি আলু, হাইড্রেটিং খাবার যেমন শশা, কমলা, তরমুজ, বিভিন্ন মরশুমি ফল, শাকসবজি আপনার দৈনন্দিন খাদ্যতালিকায় রাখুন।
বর্তমান যুগে এয়ার কন্ডিশনিং দৈনন্দিন জীবনযাপনের জন্য অপরিহার্য। তাই এসি ব্যবহার করেও চোখ সুস্থ রাখতে হলে জীবনযাত্রার সামান্য পরিবর্তন করে অনায়াসেই চোখের সমস্যা থেকে মুক্তি পেতে পারেন।