উত্তরবঙ্গ সংবাদ ডিজিটাল ডেস্ক: যৌন মিলনে সম্মতির বয়স ১৮ থেকে কমিয়ে ১৬ বছর করার জন্য সুপ্রিম কোর্টে আবেদন জানিয়েছেন সিনিয়র আইনজীবী ইন্দিরা জয়সিং। জয়সিং পকসো আইন ২০১২ এবং আইপিসি-র ধারা ৩৭৫-এর অধীনে, ১৬ থেকে ১৮ বছর বয়সী কিশোর-কিশোরীদের মধ্যে সম্মতিমূলক যৌন কার্যকলাপকে অপরাধ হিসেবে গণ্য করার বিষয়টিকে চ্যালেঞ্জ করে লিখিত আবেদন জমা দিয়েছেন শীর্ষ আদালতে।
ইন্দিরা জয়সিং যুক্তি দিয়েছেন যে, বর্তমান আইনটি কিশোর-কিশোরীদের মধ্যে সম্মতিমূলক রোমান্টিক সম্পর্ককে অপরাধ হিসেবে চিহ্নিত করে, যা তাদের সাংবিধানিক অধিকার লঙ্ঘন করে। তিনি বলেন, ‘আইনি কাঠামো ভুলভাবে কিশোর-কিশোরীদের সম্মতিমূলক সম্পর্ককে যৌন নির্যাতনের সমতুল্য বলে মনে করে, তাঁদের স্বায়ত্তশাসন, পরিপক্কতা এবং সম্মতি দেওয়ার ক্ষমতাকে উপেক্ষা করে।’ জয়সিং আরও বলেন, ‘সম্মতির বয়স ১৬-এর বদলে ১৮ বছর করার কোনও যৌক্তিক কারণ নেই।’ তিনি জানান, ৭০ বছরেরও বেশি সময় ধরে এই বয়স ১৬ ছিল, যা ২০১৩ সালের ফৌজদারি (সংশোধন) আইন দ্বারা বাড়ানো হয়।
তিনি এও দাবি করেন যে, বর্তমান সময়ে কিশোর-কিশোরীরা দ্রুত বয়ঃসন্ধিকালে পৌঁছায় এবং তাঁরা তাদের পছন্দের রোমান্টিক ও যৌন সম্পর্ক স্থাপনে সক্ষম। তিনি জাতীয় পরিবার স্বাস্থ্য সমীক্ষা সহ বিভিন্ন বৈজ্ঞানিক ও সামাজিক তথ্য উল্লেখ করে বলেন, ‘কিশোর-কিশোরীদের মধ্যে যৌন কার্যকলাপ অস্বাভাবিক নয়।’
জয়সিংয়ের তথ্য অনুযায়ী, ২০১৭ থেকে ২০২১ সালের মধ্যে ১৬-১৮ বছর বয়সী নাবালকদের পকসো মামলায় জড়িয়ে পড়ার মতো ঘটনার সংখ্যা ১৮০ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে। তিনি বলেন, ‘বেশিরভাগ অভিযোগই অভিভাবকদের দ্বারা দায়ের করা হয়, প্রায়শই মেয়েটির ইচ্ছার বিরুদ্ধে, বিশেষ করে আন্তঃবর্ণ বা আন্তঃধর্মীয় সম্পর্কের ক্ষেত্রে।’ তিনি আরও বলেন, ‘সম্মতিমূলক যৌনতাকে অপরাধ হিসেবে গণ্য করার বিষয়টি, তরুণ যুগলদের লুকিয়ে থাকতে, বিয়ে করতে বা আইনি ঝামেলায় পড়তে বাধ্য করে, যা গঠনমূলক আলোচনা ও শিক্ষাকে উৎসাহিত করে না।’
এই সমস্যা সমাধানের জন্য, তিনি আইনে একটি ‘ক্লোজ-ইন-এজ এক্সেপশন’ (close-in-age exception) অন্তর্ভুক্ত করার অনুরোধ করেছেন। এর মাধ্যমে ১৬ থেকে ১৮ বছর বয়সী কিশোর-কিশোরীদের মধ্যে সম্মতিমূলক যৌন কার্যকলাপকে পকসো এবং আইপিসি-র অধীনে ফৌজদারি বিচার থেকে অব্যাহতি দেওয়া যাবে। এই প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘কিশোর-কিশোরীদের মধ্যে যৌনতাকে অপরাধ হিসেবে গণ্য করা স্বেচ্ছাচারী, অসাংবিধানিক এবং শিশুদের সর্বোত্তম স্বার্থের পরিপন্থী।’