পরাগ মজুমদার, বহরমপুর: পরিকল্পনা ছিল সুদূর মধ্যপ্রাচ্য কিংবা চিনে হাতবদল করে পাচার করার। কিন্তু বহরমপুর মহকুমার বেলডাঙ্গার এসডিপিও উত্তম গড়াইয়ের অভিযানে ভেস্তে যায় সেই পরিকল্পনা। উদ্ধার হল বস্তাবন্দি কোটি টাকা মূল্যের বিরল প্রজাতির আফ্রিকান ‘গোল্ডেন মাঙ্কি’। এই ঘটনায় এলাকায় ব্যাপক শোরগোল পড়ে যায়। উৎসুক মানুষের ঢল নামে থানা চত্বরে। সকলেই অন্তত একবার ওই বিরল প্রজাতির প্রাণীটিকে চাক্ষুষ করতে চেয়েছিলেন। যদিও পুলিশি তৎপরতার কারণে শেষপর্যন্ত অনেককেই নিরাশ হয়ে ফিরে যেতে হয়। এদিকে এই বিশাল পশু পাচার সিন্ডিকেটের সঙ্গে জড়িত থাকার অভিযোগে ছয়জনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। ধৃতদের নাম মিঠু দাস, টিটু দাস, শামিল হোসেন, রফিকুল মণ্ডল, হাসিবুল মণ্ডল এবং বিশ্বজিৎ বাগ। প্রাথমিক তদন্তে পুলিশ জেনেছে এরা সকলেই আন্তর্জাতিক পশু পাচারচক্রের সঙ্গে যুক্ত। এই বিষয়ে এসডিপিও বলেন, ‘এই গোল্ডেন মাঙ্কি মুর্শিদাবাদ, নদিয়া হয়ে পাচারের ছক কষা হচ্ছিল। ধৃতরা আন্তজার্তিক পাচারচক্রের সঙ্গে জড়িত। এদেরকে একসঙ্গে জেরা করে বহু তথ্য মিলতে পারে, যা থেকে আরও বড় ধরনের চক্রের সন্ধানও মিলতে পারে।’
ধৃতদের মধ্যে নদিয়ার বাসিন্দা মিঠু এই পাচারচক্রের মূল পান্ডা। গোপন সূত্রে খবর পেয়ে এসডিপিও-র নেতৃত্বে পুলিশ বেলডাঙ্গার রেলগেট সংলগ্ন এলাকায় ১২ নম্বর জাতীয় সড়কে ফাঁদ পেতে বসেছিল। এরপরই সেখানে সন্দেহজনক দুটি গাড়ি এসে হাজির হতেই সেটিকে ঘিরে ফেলে আটক করা হয়। এরপর ওই গাড়িতে তল্লাশি চালাতেই এক এক করে উদ্ধার করা হয় দুটি মুখবন্ধ বস্তা। সেখানেই বন্দি অবস্থায় রয়েছে চারটি বাঁদর। পরে জানা যায় সেগুলি বিরল প্রজাতির আফ্রিকান ‘গোল্ডেন মাঙ্কি’। আন্তর্জাতিক বাজারে সেগুলির দাম আনুমানিক কয়েক কোটি টাকা। এরপরই গাড়িতে থাকা ছ’জনকে গ্রেপ্তার করা হয়।
তদন্তকারীরা জানিয়েছেন, পৃথিবীতে বাঁদরের যে প্রজাতিগুলো সর্বপ্রথম আবির্ভূত হয়েছিল এই সোনালি বাঁদর তার মধ্যে অন্যতম। মূলত দক্ষিণ–মধ্য আফ্রিকা, উগান্ডা সহ আরও কয়েকটি দেশের জঙ্গলের মধ্যে এই প্রজাতির বাঁদরকে দেখতে পাওয়া যায়। এর পাশাপাশি ভারত সরকারের বন দপ্তরের ‘শিডিউল-১’ তালিকায় রয়েছে এই গোল্ডেন মাঙ্কি। জেলা পুলিশের এক উচ্চ আধিকারিক জানান, বিরল প্রজাতির এই গোল্ডেন মাঙ্কি ভারতবর্ষের কোনও নাগরিক নিজের ব্যক্তিগত চিড়িয়াখানায় বা বাড়িতে কোনওভাবেই রাখতে পারেন না। এর পাশাপাশি এই গোল্ডেন মাঙ্কির শরীরের কিছু অঙ্গপ্রত্যঙ্গের সঙ্গে মানুষের অ্যানাটমির মিল থাকায় বেশ কিছু দেশে এই সমস্ত বিরল প্রজাতির প্রাণীকে নিয়ে গোপন গবেষণা চালানো হচ্ছে। তাদের কাছে এই গোল্ডেন মাঙ্কির ব্যাপক চাহিদা রয়েছে। উদ্ধার হওয়া ওই গোল্ডেন মাঙ্কিগুলিকে আলিপুর চিড়িয়াখানায় ‘সেফ কাস্টডিতে’ প্রাথমিকভাবে পাঠানোর ভাবনাচিন্তা চলছে বলে খবর।