সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটাল ডেস্ক: পূর্ব মেদিনীপুরের প্রাচীন ঐতিহাসিক শহর তাম্রলিপ্ত বা তমলুকের অধিষ্ঠাত্রী দেবী হলেন মা বর্গভীমা। কয়েক হাজার বছর ধরে উগ্রতারা রূপে মা বর্গভীমার পুজো হয়ে আসছে এখানে। আশ্চর্যের বিষয় হল অতীতের সবকিছু ধ্বংস হলেও দেবীর মন্দিরটি আজও স্বমহিমায় মাথা উঁচু করে দাঁড়িয়ে রয়েছে। যেকোনও পুজোর আগে আজও তমলুকের অধিবাসীরা সবার আগে মা বর্গভীমার পুজো দিয়ে থাকেন। দেবী খুবই জাগ্রতা। স্থানীয় বিশ্বাস মতে, মায়ের কাছে কিছু চাইলে তাঁর সন্তানদের ফেরান না তিনি। দেবী পার্বতীর বাম পায়ের গোড়ালি বিষ্ণু-চক্রে খণ্ডিত হয়ে এই স্থানেই পতিত হয়েছিল বলে শাস্ত্রে উল্লেখ রয়েছে।
তমলুকের এই প্রসিদ্ধ মন্দিরটি গড়ে ওঠার পিছনে একটি প্রাচীন কাহিনি রয়েছে। শোনা যায়, রাজা গরুড়ধ্বজের আদেশে একজন জেলে তাঁকে প্রতিদিন জীবন্ত শোলমাছ জোগাড় করে দিত। একদিন জেলে অনেক খুঁজেও কোনও শোলমাছ খুঁজে পেল না। এদিকে মাছ না পেয়ে রাজা রেগে গিয়ে ধীবরকে প্রাণদণ্ডের আদেশ দিলেন। জেলে প্রাণভয়ে পালিয়ে জঙ্গলে আশ্রয় নেয়। সেখানে নিজের দারিদ্র ও দুর্দশার কথা ভেবে নিঃশব্দে চোখের জল ফেলতে থাকে। সেইসময় এক সাধারণ নারী এসে তার দুর্দশার কথা জানতে চাইলে জেলে সবটা খুলে বলে। নারী রূপে দেবী ভীমা উপায় বাতলে দিয়ে বলেন, বেশি করে মাছ ধরে তা শুকিয়ে রাখতে। জঙ্গলের এক কুয়োর জল শুকনো মৃত মাছে ছিঁটিয়ে দিলে সেই মাছ প্রাণ ফিরে পাবে।
কথামতো কাজ হল। জেলে ফিরে গিয়ে রাজাকে রোজ শোল মাছের জোগান দিতে লাগল। কিন্তু এতে রাজার মনে ক্রমশ সন্দেহ তৈরি হল। তিনি জেলেকে চেপে ধরতেই আসল রহস্য প্রকাশ করে ফেলল জেলে। রাজা তখন সদলবলে চললেন জঙ্গলের সেই কুয়োর জল পরীক্ষা করতে। কিন্তু কিছুতেই কূপের কাছে পৌঁছতে পারলেন না তিনি।
এদিকে ধীবরের প্রতি করুণাবশত এতদিন দেবী তার গৃহে বিরাজ করছিলেন। কিন্তু রাজার কাছে রহস্য ফাঁস করায় ধীবরের প্রতি ক্রুদ্ধ হয়ে সেই স্থান ত্যাগ করে কূপের কাছেই এক প্রস্তরমূর্তিতে অধিষ্ঠিত হলেন। এই কূপের কাছেই রাজা গরুড়ধ্বজ দেবীর প্রস্তর মূর্তির উপর বিরাট মন্দিরটি তৈরি করে দিলেন।
দেবীর মন্দিরটি অনেকটা ওড়িশি স্থাপত্যের আদলে নির্মিত। উচ্চতা প্রায় ৬০ ফুট। মন্দিরের গর্ভগৃহে কালো পাথরে তৈরি মায়ের মূর্তি আজও বিরাজ করছে। মা এখানে ভিন্ন ভিন্ন রূপে পূজিতা হলেও কালীপুজোর সময়েই সবচেয়ে বেশি ভক্ত সমাগম হয়। একান্নপীঠের অন্যতম পীঠ হিসেবে তমলুকে দেবী বর্গভীমা পূজিতা হয়ে আসছেন। তবে, এই মন্দিরের প্রকৃত বয়স কত প্রাচীন তা অনুমান করা বেশ কঠিন।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
নিয়মিত খবরে থাকতে ফলো করুন