নব্যেন্দু হাজরা: কলকাতা মেট্রোর হাজারো সমস্যায় জেরবার হচ্ছেন নিত্যযাত্রীরা। এক মাসের ওপর হয়ে গেল, দক্ষিণের একেবারে প্রান্তিক কবি সুভাষ স্টেশনের একটি অংশে ভাঙনের পর থেকেই একাধিক সমস্যা মাথাচাড়া দিয়েছে, যার খেসারত দিচ্ছেন তাঁরা। আধ ঘণ্টার যাত্রাপথ শেষ হতে লেগে যাচ্ছে প্রায় দেড় ঘণ্টা। আবার রাতের মেট্রোর নিয়ম অনুসারে বাড়তি খরচ হয়ে যাচ্ছে!
উদাহরণ সোমবার রাত ৯টা ৪৫ মিনিটে চাঁদনী থেকে মেট্রোয় উঠেছিলেন বেসরকারি সংস্থার কর্মী অভি দাস। থমকাতে থমকাতে শহিদ ক্ষুদিরাম স্টেশনে যখন তাঁর ট্রেন পৌঁছল, তখন ১১টা বেজে গিয়েছে। যে দূরত্ব যেতে মেট্রোয় রোজ আধ ঘণ্টা লাগে, সেই দূরত্বই পেরতে লাগল প্রায় দেড় ঘণ্টা। দুর্ভোগের শেষ এখানেই নয়। স্টেশন থেকে বেরনোর মুখে ফের সমস্যা। ২০ টাকার বদলে ৩০ টাকা কেটে নেওয়া হল কার্ড থেকে। বাড়তি ১০ টাকা।
কিন্তু কেন? মেট্রোর নিয়ম অনুযায়ী রাতের ‘বিশেষ’ মেট্রো ১০টা ২০ মিনিটে যেটা ছাড়ে সেজন্য অতিরিক্ত ১০ টাকা সারচার্জ নেওয়া হয়। তাই রাত সাড়ে ১০টা বেজে গেলেই গেট দিয়ে বেরতে এই অতিরিক্ত টাকা কেটে নিচ্ছে কর্তৃপক্ষ। যারা কাগজের টিকিট কেটে যান, তঁাদের গেটের পাশ দিয়ে বের করে দেওয়া হচ্ছে। কিন্তু স্মার্ট কার্ড পাঞ্চ করে বেরতে গেলেই যাত্রীদের পকেট থেকে কাটা যাচ্ছে অতিরিক্ত ১০ টাকা। এ নিয়ে সোমবার রাতে শহিদ ক্ষুদিরাম স্টেশনে বিক্ষোভও দেখালেন বেশ কয়েকজন যাত্রী। বিপাকে পড়ে নিজের পকেট থেকেই অতিরিক্ত ১০ টাকা করে ফেরত দিলেন স্টেশন মাস্টার।
যাত্রীদের বক্তব্য, রাতে এই পাতাল দুর্ভোগের জেরে গন্তব্যের স্টেশন ছেড়ে বেরতে তাঁদের রাত সাড়ে ১০টা বেজে যাচ্ছে। তাড়াহুড়ো করে বেরচ্ছেন প্রত্যেকে। আর কার্ড ছোয়ালেই কেটে নিচ্ছে বাড়তি ১০ টাকা। অনেকেই তা খেয়াল করছেন না। এক ব্যক্তি সেখানে দাঁড়িয়ে কিছু মানুষকে সতর্ক করছেন ঠিকই, কিন্তু তাতে তো আর যাত্রীদের পকেট কাটা থেমে থাকছে না। ওই কর্মীরা জানাচ্ছেন, কেউ চাইলে কার্ড পাঞ্চ না করেও বেরিয়ে যেতে পারছেন। তবে পরদিন তাঁকে কার্ডের লক খোলাতে আসতে হচ্ছে। যাত্রীদের বক্তব্য, সকালে অফিস টাইমে টিকিট কাউন্টারে লাইন থাকে। তখন কারও সময় থাকে না কার্ডের লক খুলতে লাইনে দাঁড়ানোর। তাই বাধ্য হয়েই নিত্য যাত্রীরা রোজ এই ১০ টাকা বাড়তি খসিয়েই বেরিয়ে যান। ফলে গত কয়েকদিনের হিসাবে প্রায় ১৫টি স্টেশন থেকেই এই বাবদই মেট্রোর কোষাগারে কয়েক লক্ষ টাকা ঢুকেছে।
যাত্রীদের অভিযোগ, এমনিতেই রোজ মেট্রোয় ওঠা এখন আতঙ্কের হয়ে দাঁড়িয়েছে। প্রতি স্টেশনে থমকাতে থমকাতে ছুটছে ট্রেন। মেট্রোর কারণেই হচ্ছে দেরি। অথচ তারাই কাটছে পকেট। রাতের শেষ তিন চারটি মেট্রোর যাত্রীদের থেকে রোজ এভাবে টাকা লুঠছে কর্তৃপক্ষ।