সুমিত বিশ্বাস, পুরুলিয়া: রাজ্যের মেগা প্ৰকল্প ‘আমাদের পাড়া আমাদের সমাধান’ সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন করতে পুরুলিয়ায় ২৩ আধিকারিককে নিয়ে টাস্ক ফোর্স গঠিত হয়েছে। জেলাশাসক রজত নন্দার তত্ত্বাবধানে রাজ্যের নির্দেশে ওই টাস্ক ফোর্স। শুক্রবার বিকালে পুরুলিয়া জেলা প্রশাসনিক ভবনের কনফারেন্স হলে ওই টাস্ক ফোর্স ও জনপ্রতিনিধিদের নিয়ে বৈঠক করেন জেলাশাসক। যেভাবে রাজ্যের এই বৃহৎ প্রকল্পটি রূপায়িত হবে, তা এই বৈঠকে বিস্তারিতভাবে তুলে ধরেন জেলাশাসক।
প্রত্যেকটি প্রকল্পে ৫ লক্ষ টাকা বরাদ্দ করার বিধি রয়েছে। একটি বুথের ক্ষেত্রে বরাদ্দের পরিমাণ ১০ লক্ষ টাকা। কিন্তু সংশ্লিষ্ট বুথে এমন কিছু গুরুত্বপূর্ণ প্রকল্প যদি থাকে, যার জন্য ১২ লক্ষের কাছাকাছি খরচ হয়ে থাকে, সেক্ষেত্রে বাকি খরচ জেলার সংশ্লিষ্ট দপ্তর থেকে দিতে হবে। রাজ্যের এই নির্দেশ জেলা টাস্ক ফোর্সের পাশাপাশি জনপ্রতিনিধিদের জানিয়ে দেওয়া হয়। তাঁর কথায়, “ওই প্রকল্প রূপায়ণে প্রস্তুতি চূড়ান্ত। টাস্ক ফোর্স ও জনপ্রতিনিধিদের নিয়ে বৈঠক হয়।” পুরুলিয়া জেলা প্রশাসন সূত্রে জানা গিয়েছে, এই জেলায় প্রায় ৮৫০ টি শিবির হবে। এই প্রকল্পের বিধি অনুযায়ী তিনটি বুথ নিয়ে একটি করে শিবির হওয়ার কথা। চলতি বছরের হিসাবে পুরুলিয়ায় বুথের সংখ্যা বেড়ে হয়েছে ২৫২৮ টি। তার ভিত্তিতেই শিবিরের তালিকা তৈরি করা হয়েছে। এই শিবিরের জন্য মাইকিং-এর পাশাপাশি রাজ্যের লোকপ্রসার প্রকল্পেও প্রচার করা হচ্ছে জেলায়। শনিবার জেলায় মোট ২৩ টি ক্যাম্প হবে।
এই প্রকল্পের কাজে জেলায় চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেবে ২৩ জনের ওই টাস্ক ফোর্স। ওই টাস্ক ফোর্সে পুরুলিয়ার পুলিশ সুপার ছাড়া তিন অতিরিক্ত জেলাশাসক, পুরুলিয়া, ঝালদা, রঘুনাথপুর, মানবাজারের মহকুমাশাসক রয়েছেন। এছাড়া জেলা মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক, জেলা গ্রামোন্নয়ন সংস্থার প্রকল্প আধিকারিক, আঞ্চলিক পরিবহণ আধিকারিক, পুরুলিয়া জেলা পরিষদের সচিব, জেলা শিক্ষা আধিকারিক, নির্বাচন দপ্তরের অফিসার ইনচার্জ, বিদ্যুৎ বিভাগের আঞ্চলিক প্রবন্ধক, পূর্ত দপ্তরের সিভিল, মেকানিক বিভাগের কার্যনির্বাহী বাস্তুকার, গ্রামীণ পরিকাঠামো উন্নয়নের কার্যনির্বাহী বাস্তুকার ছাড়া জেলা তথ্য ও সংস্কৃতি দপ্তরের আধিকারিক, প্রাথমিক বিদ্যালয় পরিদর্শক, শিশু বিকাশ প্রকল্পের আধিকারিক, মৎস্য দপ্তরের সহকারী অধিকর্তা ও কৃষি বিপণন দপ্তরের আধিকারিক রয়েছেন। এদিনের বৈঠকে ছিলেন পুরুলিয়া জেলা পরিষদের সভাধিপতি নিবেদিতা মাহাতো-সহ বিধায়করা। জেলা প্রশাসন সূত্রে জানা গিয়েছে, এই প্রকল্পে মোট ১৫ টি বিভাগ সেইসঙ্গে বিবিধ হিসাবে আরেকটি মিলিয়ে মোট ১৬ টি বিভাগের কাজ হবে।
মুখ্যমন্ত্রীর বলা নকশা অনুযায়ী, তিনটি বুথ নিয়ে একটি ক্যাম্প বা শিবির তৈরি হবে। সেই এলাকার মানুষজনের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট ব্লকের বিডিওদের পাশাপাশি এলাকার সমস্ত জনপ্রতিনিধি ও যে সকল কাজ নিয়ে এই প্রকল্প তার আধিকারিকরা উপস্থিত থাকবেন। সংশ্লিষ্ট বুথ এলাকায় সহমতের ভিত্তিতে ওই প্রকল্প নেওয়া হবে। তারপর সেই প্রস্তাবিত প্রকল্প বিডিওর কাছে আসবে। ব্লক স্তরে আলোচনার পর তা মহকুমাশাসকের কাছে এসে সংশ্লিষ্ট বিভাগের নোডাল অফিসারের মধ্যে দিয়ে জেলাশাসকের কাছে আসার পরই জেলা টাস্ক ফোর্সের বৈঠক হবে। তারপর জেলাশাসকের অনুমোদনক্রমে তা যাবে রাজ্য টাস্ক ফোর্সের কাছে। মুখ্যমন্ত্রীর অনুমোদন ক্রমে ওই প্রকল্প রূপায়িত হবে। জেলা স্তরে টাস্ক ফোর্সের পাশাপাশি মহকুমা, ব্লক স্তরেও টাস্ক ফোর্স রয়েছে। বুথ ভিত্তিক এই বৈঠকগুলি চূড়ান্তভাবে সম্পন্ন করতে মহকুমা এবং ব্লকের টাস্ক ফোর্স কাজ করবে। তবে পুরসভা এলাকায় মহকুমাভিত্তিক টাস্ক ফোর্স কাজ করবে। সেখানে মনিটরিং করবেন সংশ্লিষ্ট পুরসভার পুরপ্রধানরা।
২ আগস্ট থেকে ৩ নভেম্বর পর্যন্ত সমস্ত বৈঠক ও প্রস্তাবিত প্রকল্প চূড়ান্ত করতে হবে। ১৫ নভেম্বরের মধ্যে সেই প্রকল্প চূড়ান্ত করার সময়সীমা রয়েছে। তারপর ১৫ ই জানুয়ারির মধ্যে সেই কাজ শেষ করার কথা বলা হয়েছে। রবিবার সহ সমস্ত সরকারি ছুটি বাদ দিয়ে ৬১ দিনের মধ্যে বৈঠক সহ প্রস্তাবিত প্রকল্প চূড়ান্ত করার কথা বলা হয়েছে।