নন্দিতা রায়, নয়াদিল্লি: সংসদের দুই কক্ষে অপারেশন সিঁদুর নিয়ে আলোচনায় আক্রমণাত্মক ভূমিকায় তৃণমূল কংগ্রেস। একদিকে রাজ্যসভায় তৃণমূলের উপ-দলনেতা সাগরিকা ঘোষ, ঋতব্ত বন্দ্যোপাধ্যায় অন্যদিকে লোকসভায় যাদবপুরের সাংসদ সায়নী ঘোষ তিনজনেই বাংলাতেই মোদি-শাহ-র দিকে নিশানা সেধে কাঠগড়ায় তুলেছেন কেন্দ্রকে। তৃণমূলের তরফ থেকে পহেলগাঁও জঙ্গি হামলা নিয়ে এতদিন ধরে যে সমস্ত প্রশ্ন করা হয়েছে , জঙ্গিরা কোথায়, কেন সংঘর্ষ বিরতি হয়েছে, কেন প্রধানমন্ত্রী পহেলগাঁও যাননি, পাক -র সঙ্গে ক্রিকেট ম্যাচের অনুমতি দেওয়া হল কেন এই প্রশ্নগুলিকেই সংসদে জোরালো কণ্ঠে তুলে ধরেছেন তৃণমূল সাংসদরা। তৃণমূলের তরফ থেকেই যে প্রথম কোনো প্রতিনিধিদল পাক গোলায় বিধ্বস্ত পুঞ্চ, উরি , রাজৌরিতে গিয়েছেন সেকথাও স্মরণ করিয়ে দিয়েছে তৃণমূল।
স্বল্প সময়ের ভাষণে কী করে চারজন জঙ্গি ঢুকল, সীমান্ত অতিক্রম করে দুশো কিলোমিটার ভিতরে এসে জঙ্গিরা ২৬ জন নিরীহ মানুষের প্রাণ কেড়ে নিল? জাতীয় নিরাপত্তার ক্ষেত্রে এতবড় ব্যর্থতার দায় কার বলেও কেন্দ্রের দিকে নিশানা করেছেন ঋতব্রত। এপ্রসঙ্গে তিনি আরও বলেছেন, “সরকারের ইনটেলিজেন্স ফেলিওরের কারণেই এত বড় ঘটনা ঘটেছে। অথচ দেখা গিয়েছে, হামলার ১ মাসের মাথায় আইবি প্রধানের মেয়াদ আরও একবছর বাড়ানো হয়েছে। তাঁকে দায়ি করার বদলে কেন পুরষ্কৃত করা হল?”
পেগাসাসের কথা উল্লেখ করে সরকারের দিকে কটাক্ষ করে ঋতব্রত আরও বলেছেন, “পেগাসাস স্পাইওয়ার ব্যবহার করার ক্ষেত্রে পারদর্শী সরকার কেন জঙ্গি নেটওয়ার্ক ও সন্দেহভাজনদের উপর পেগাসাস ব্যবহার করছেন না? জঙ্গিদের বিষয়ে কেন সরকার এতদিন মুখে কুলুপ দিয়ে ছিল? প্রশ্ন তুলে কেন এই নীরবতা কটাক্ষও ছুঁড়ে দিয়েছেন তৃণমূল সাংসদ। পাক অধিকৃত কাশ্মীর কবে ফেরত পাবে সেকথাও জানতে চেয়েছেন ঋতব্রত। বক্তব্যর শেষে রাজ্যের শহিদ জওয়ান ঝন্টু আলি শেখ থেকে শুরু করে দেশের ক্ষেত্রে বাংলা ও বাঙালিদের অবদানের ইতিহাস তুলে ধরেন তিনি। তাতে সেনাবাহিনীর সম্মানে তৃণমূলনেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের মিছিল থেকে শুরু করে ১৮৫৭ সালের মহাবিদ্রোহ, কাজী নজরুল ইসলাম হাবিলদার থাকাকালীন লেখা বিদ্রোহী কবিতা বলে বক্তব্য শেষ করেছেন তিনি। ঋতব্রতর বাংলা ভাষণ প্রশংসা কুড়িয়েছে এদিন।
ঋতব্রতের পাশাপাশি রাজ্যসভায় কেন্দ্রীয় সরকারকে নিশানা করেছেন সাগরিকা। সরকার পক্ষের শিরায় সিঁদুর নয় রাজনীতি বইছে বলে কটাক্ষ করে তিনি বলেন,”আপনার শিরায় সিঁদুর নয়, শুধুমাত্র রাজনীতি বইছে। তা নাহলে এশিয়া কাপে পাকিস্তানের সঙ্গে ক্রিকেট ম্যাচের অনুমতি দেওয়া হল কেন? পাকিস্তানকে বিচ্ছিন্ন করার কথা হয়েছিল। তার বদলে কেন তাদের সঙ্গে ক্রিকেট ম্যাচ খেলার সিদ্ধান্ত? এরমধ্যে কূটনীতি কোথায়? প্রধানমন্ত্রী বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্তে ঘুরে বেড়ালেও কেন জম্মু ও কাশ্মীরের সীমান্তবর্তী গ্রামে গিয়ে সেখানকার ভুক্তভোগী পরিবারের বাচ্চাদের জড়িয়ে ধরলেন না? মক ড্রিল করার সময় সীমান্তবর্তী গ্রামগুলি খালি করা হয়নি কেন? অথচ সেই গ্রামগুলি ছিল সবচয়েয়ে ঝুঁকিপূর্ণ। এই সমস্ত জায়গাগুলিকে উপেক্ষা করছে কেন্দ্র।”
পাকিস্তান এবং সেখানকার জঙ্গিদের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে সেনাবাহিনীর সঙ্গে রয়েছে তৃণমূল বলে দাবি করে মোদি সরকার সেনা-র কৃতিত্বকে খাটো করার চেষ্টা করেছে বলেও ঘুরিয়ে অভিযোগ করেছেন সাগরিকা। তিনি বলেছেন, “যখন সারা দেশে যুদ্ধের আবহ, সেই সময় সেনা বাহিনীর পোশাকে প্রধানমন্ত্রী মোদির ছবি দেওয়া পোস্টার ছড়ানো হয়েছে। এমনভাবে সেই ছবি লাগানো হয়েছে, যেন প্রধানমন্ত্রীই যুদ্ধ করেছেন। এটা রাজনীতি ছাড়া কিছুই নয়। অথচ কাশ্মীরে দৈনিক প্রশাসনিক ব্যর্থতা ও নিরাপত্তার ত্রুটির কারণেই কাশ্মীরে জঙ্গি হামলা হয়েছে।” পাশাপাশি কেন্দ্র সরকার মার্কিন প্রশাসনের কাছে মাথা নত করেছে বলেও অভিযোগ করেছেন তৃণমূল সাংসদ। এপ্রসঙ্গে তিনি বলেছেন, “কেন কেন্দ্রীয় সরকার ট্রাম্পের দাবির বিরোধিতা করল না। ইন্দিরা গান্ধী তৎকালীন মার্কিন প্রেসিডেন্ট নিক্সনের কথা মানেননি। অথচ এখনকার সরকার মার্কিন প্রশাসনের সামনে মাথা নত করেছে। এর কারণ কী?” সব মিলিয়ে অপারেশন সিঁদুর নিয়ে আলোচনায় রাজ্যসভায় কড়া ভাষায় আক্রমণ করেছে তৃণমূল।