স্বর্ণময়ী মা থেকে যান লক্ষ্মীর আরাধনাতেও, শালতোড়ার বন্দ্যোপাধ্যায় পরিবারের দেবীর ভোগ নজরকাড়া

স্বর্ণময়ী মা থেকে যান লক্ষ্মীর আরাধনাতেও, শালতোড়ার বন্দ্যোপাধ্যায় পরিবারের দেবীর ভোগ নজরকাড়া

বৈশিষ্ট্যযুক্ত/FEATURED
Spread the love


সুমিত বিশ্বাস, পুরুলিয়া: ‘নবমী নিশি যেন আর না পোহায়…।’ মহানবমীর রাতে মনখারাপ হলেও এমন ভাবে এই কথা আওড়ান না তাঁরা। সোনায় মোড়া মা যে থেকে যান মহাদশমীর পরেও। মেয়ে লক্ষ্মীর আরাধনার পরে তবেই কৈলাসে রওনা হন সপরিবারে। তাই নবমী নিশি তো দূর মা-কে আরও কয়েকটা দিন আগলে রাখেন বাঁকুড়ার তালডাংরা ব্লকের শালতোড়া গ্রাম পঞ্চায়েতের ওই শালতোড়া গ্রামের বন্দ্যোপাধ্যায় পরিবার। তাই লক্ষ্মীবারে মহাদশমীতে প্রায় ৫০০ জনের পাত পড়বে ওই পুজোয়। ঘট বিসর্জন হলেও মাকে বিদায় না দেওয়ার আনন্দে পংক্তি ভোজনে কব্জি ডুবিয়ে খাবেন ওই এলাকা তথা পাড়ার ব্রাহ্মণ সহ অন্যান্য মানুষজন। এই পুজোকে ঘিরে মায়ের ভোগ যেমন নজরকাড়া। তেমনই অষ্টমী ও দশমীর পংক্তি ভোজন যেন আলাদা ভাবে চোখ টানে।

ইতিহাস বলছে, ২০০- রও বেশি বছর আগে গ্রামে কোন দুর্গাপুজো ছিল না। ফলে এই গ্রামের মানুষজনকে পুজো দেখতে অন্যত্র যেতে হতো। ফলে খুব স্বাভাবিকভাবে পুজোর সময় গ্রামে ঢাকের আওয়াজ শোনা যেত না। শোনা যেত না মন্ত্র। পূজোর সময় এই খারাপ লাগা থেকেই ওই গ্রামের বাসিন্দা ভৈরব ভট্টাচার্য দুর্গাপূজার সূচনা করেছিলেন। এই বন্দ্যোপাধ্যায় পরিবারের আগে পদবী ছিল ভট্টাচার্য। অতীতের বিভিন্ন দলিল-দস্তাবেজে ভট্টাচার্য পদবী আজও চোখে পড়ে। সেই সময় এই বন্দোপাধ্যায় পরিবারের মানুষজন মাটির মন্দির তৈরি করেন। পরে সেই মাটির মন্দির দালান হয়। ২০১৮ সালে সেই মন্দির নতুনভাবে নির্মাণের পর চলতি বছর সেই ঠাকুরদালানের আমূল সংস্কার করে তা সম্প্রসারণ করা হয়। তাই এবার আলোক সজ্জাও ছিল একেবারে চোখে পড়ার মতো। এখনও এই পুজোয় শামিল এই পরিবারের ৮৭ বছরের বরিষ্ঠ সদস্য অমিয় বন্দ্যোপাধ্যায়। তাঁর কথায়, ” আমাদের মা একেবারে মেয়ের মতোই। তাইতো আমরা মেয়েকে সোনা দিয়ে সাজিয়ে আনন্দে মেতে উঠি। দশমীর পরেও মা থেকে যান। ঠাকুরদালানে ওই মাতৃপ্রতিমায় লক্ষ্মীর আরাধনার পরেই
মাকে ভাসান দেওয়া হয়।”

সপ্তমী পুজো শুরুর আগেই মুকুট, হার, নেকলেস সহ নানা গহনায় স্বর্ণময়ী হয়ে ওঠেন মা। দশ হাতে দশ অস্ত্রও রূপোর। তাই এই পুজোর গল্পও পরতে পরতে সোনায় মোড়া। বন্দ্যোপাধ্যায় পরিবারের কুলদেবতা নারায়ণকে সম্মুখ রেখে মায়ের আরাধনা করা হয়। সন্ধিপুজোয় ঠাকুরদালানে চলে আসে ভ্রমর। আর তারপরেই মায়ের চরণ সহ সাজানো ফুল পড়ে যায় মাটিতে। এবারও তার ব্যতিক্রম হয়নি। এই পরিবারের মানুষজনের কাতর আবেদনেই ফুল ফেলে মা যে সাড়া দেন। এই ফুল মাটিতে পড়ার মধ্য দিয়েই আগামী এক বছর এই এলাকার ব্রাহ্মণ পরিবারের দিন কেমন যাবে তা যেন আগাম নির্ধারণ হয়ে যায়। সন্ধি পূজোর ওই সন্ধিক্ষণেই আটকে থাকে ওই এলাকার ব্রাহ্মণ পরিবারের আনন্দ, নিরানন্দ। তাই এলাকার ব্রাহ্মণ পরিবারের বালক-বালিকা কিশোর-কিশোরী অরণ্য, আরিয়ান, ঐরিন, আরুষী বন্দোপাধ্যায়রা সন্ধি পূজার ওই ক্ষণ পর্যন্ত নির্জলা উপবাস থাকে।

বুধবার নবমীর দিনও বিশেষ রীতি পালন হয় স্বর্ণময়ী মায়ের আরাধনায়। হয় কুমারী পুজো। এই পরিবারের সদস্য বর্তমানে পুরুলিয়ার পুলিশ সুপার অভিজিৎ বন্দ্যোপাধ্যায় সহ কৌশিক বন্দ্যোপাধ্যায়। আসলে এই পুজোয় গ্রামের সমস্ত ব্রাহ্মণ সম্প্রদায়ের মানুষজন শামিল হন। কর্মসূত্রে যে যেখানে থাকেন দূর-দূরান্ত থেকে সবাই এই পুজোয় চলে আসেন। কথায় আছে সপ্তমীর আগেই শালতোড়া গ্রামের ব্রাহ্মণরা যেন তাদের অন্দরমহলে প্রবেশ করে যান। পুজোর সঙ্গে জড়িয়ে থাকা জয় বন্দ্যোপাধ্যায়, সুরজিৎ বন্দ্যোপাধ্যায়, রঞ্জিৎ মুখোপাধ্যায়, সত্যরূপ বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, “মায়ের আরাধোনায় মেতে ওঠে সমগ্র গ্রাম। সপ্তমী থেকে দশমী পর্যন্ত এই গ্রামের ব্রাহ্মণবাড়িতে কোন রান্না হয় না।” মহাষ্টমীতে এই ঠাকুরদালানে যারাই পা রাখেন তাঁরাই খিঁচুড়ি, পায়েস সহযোগে ভোগ পান। এদিন নবমীতে ছিল পোলাও, পনিরের ভোগ। তবে ফি দিনই এখানে অন্ন ভোগ সহকারে পুজো হয়।



Source link

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *