সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটাল ডেস্ক: ফাইনালে ফেভারিট বলে কিছু হয় না। প্রাচীন এই ‘প্রবাদ’ যে কতটা মোক্ষম, তা আবার প্রমাণিত। ক্লাব বিশ্বকাপের ফাইনালে ‘ফেভারিট’ হিসেবে চেলসির বিরুদ্ধে মাঠে নেমেছিল পিএসজি। মরশুমে পঞ্চম ট্রফি জয়ের সামনে দাঁড়িয়েছিল ‘লেস প্যারিসিয়েন্স’রা। ফাইনালের মহা লড়াইয়ের বহু আগে থেকেই নিউ ইয়র্কের টাইমস স্কোয়ার দখল নিয়েছিলেন পিএসজি’র সমর্থকরা। তাঁদের আত্মবিশ্বাস আরও বাড়িয়ে দিয়েছিল সেমিফাইনালে বিশ্বের অন্যতম সেরা ক্লাব রিয়াল মাদ্রিদের বিরুদ্ধে দলের অভূতপূর্ব জয়। তাই উৎসবের প্রস্তুতিও সেরে রেখেছিলেন তাঁরা। কিন্তু স্বপ্নভঙ্গের হতাশা নিয়ে মুখ বেজার করেই তাঁদের ফিরতে হল। নিউ জার্সির মেটলাইফ স্টেডিয়ামে ফরাসি ক্লাবকে সোজাসাপটা ৩ গোলের মালা পরিয়ে ক্লাব বিশ্বকাপ চ্যাম্পিয়ন হল চেলসি।
শুরু থেকেই প্রেসিং ফুটবলে পিএসজি রক্ষণকে ব্যস্ত রাখে চেলসি। ৮ মিনিটে জোয়াও পেদ্রোর বুদ্ধিদীপ্ত ফ্লিকে বক্সের ভিতর বল পেয়ে যান কোল পালমার। পড়িমড়ি করে ঝাঁপিয়েও ইংলিশ তারকার মাটি ঘেঁষা শটের কোনও নাগাল পাননি পিএসজি গোলরক্ষক জিয়ানলুইজি দোন্নারুমা। শুরুতেই গোল খেয়ে খানিকটা বেসামাল হয়ে পড়ে পিএসজি। প্রথম গোলের ধাক্কা সামলে উঠতে না উঠতেই ৩০ মিনিটে চেলসির ব্যবধান দ্বিগুণ করেন পালমার। মরশুমে এটা ছিল তাঁর ১৮তম গোল। বক্সের মধ্যে বাঁ-পায়ের শটে ফের বিপক্ষের জাল কাঁপান তিনি। প্রথমার্ধ শেষ হওয়ার ঠিক আগে, ৪৩ মিনিটে ইংলিশ ক্লাবকে ৩-০ গোলে এগিয়ে দেন ব্রাজিলীয় তারকা হোয়াও পেদ্রো। পিএসজি গোলরক্ষকের মাথার উপর দিয়ে বল গোলে পাঠান তিনি।
দ্বিতীয়ার্ধে পিএসজি’র ম্যাচে ফেরার যাবতীয় চেষ্টাকে রুখে দেয় চেলসি ডিফেন্স। তবে এক্ষেত্রে তাদের রক্ষণ দুর্গের শেষ স্তম্ভ গোলকিপার রবার্ত সানচেজের কথা আলাদা করে বলতেই হবে। ৪৭ মিনিটে জর্জীয় তারকা খভিচা কাভারাটস্খেলিয়ার জোরাল শট রুখে দেন সানচেজ। ৫২ মিনিটে সুযোগ পেয়ে গিয়েছিলেন দেম্বেলে। মাথা ঠান্ডা রেখে সেই গোলও বাঁচান তিনি। এর ছ’মিনিট পর ভিতিনহার আগুনে শট কোনও ক্রমে রক্ষা করেন চেলসি কিপার। দ্বিতীয়ার্ধে এভাবেই একাধিক গোল বাঁচিয়ে হিরো বনে যান ইংলিশ ক্লাবের অতন্দ্রপ্রহরী সানচেজ।
যদিও খেলার গতির বিরুদ্ধে গিয়ে ৮০ মিনিটেই গোল পেয়ে যেতে পারতেন চেলসিকে চার গোলে এগিয়ে দিতে পারতেন পরিবর্ত হিসেবে মাঠে নামা লিয়াম ডেলাপ। যদিও কিঞ্চিৎ তাড়াহুড়োতে পিএসজি গোলরক্ষক দোন্নারুমার পায়ে মেরে বসেন তিনি। গোল না পেয়ে একটু বেশিই হতদ্যম হয়ে পড়েছিল পিএসজি। ৮৫ মিনিটে চেলসির স্প্যানিশ ডিফেন্ডার মার্ক কুকুরেয়াকে চুল ধরে ফেলে দেওয়ার জোয়াও নেভেসকে লাল কার্ড দেখান রেফারি। বাকি সময় ১০ জনে খেলতে হয় পিএসজি’কে। ম্যাচের একেবারে অন্তিমে গঞ্জালো রামোস পিএসজি’র হয়ে ব্যবধান কমানোর সুযোগ পেলেও হেলায় হারান। ৬৭ শতাংশ বল নিজেদের দখলে রেখেছিল পিএসজি। কিন্তু ‘গোল দখলে’র লড়াইয়ে শুরু থেকে পিছিয়ে পড়েই পিছলে যেতে হল চ্যাম্পিয়ন্স লিগ জয়ীদের। উল্লেখ্য, ২০২৪-২৫ মরশুমে লুইস এনরিকের দল চারটি ট্রফি জিতেছে। যার মধ্যে আছে ফরাসি লিগ, কুপে দে ফ্রান্স, ফ্রেঞ্চ সুপার কাপ ও চ্যাম্পিয়ন্স লিগ। পঞ্চম ট্রফি হিসেবে ক্লাব বিশ্বকাপ জিততে চেয়েছিল তারা। যদিও চেলসির কাছে পরাজয়ের পর মরশুমে পঞ্চম ট্রফি জয়ের স্বাদ থেকে বঞ্চিত থাকতে হল পিএসজি’কে।
ম্যাচের সেরা হয়ে পালমার বলেন, “অসাধারণ একটা অনুভূতি। ম্যাচের আগে তো আমাদের দল নিয়ে অনেকেই সংশয়ে ছিলেন। যেভাবে লড়াই করেছি আমরা, তা এককথায় দুর্দান্ত।” চেলসি কোচ এনজো মারেস্কার কথায়, “আমার মনে হয়, প্রথম ১০ মিনিটেই ম্যাচটা আমরা জিতে নিয়েছি। কঠিন আবহে ছেলেরা দারুণ ফুটবল উপহার দিয়েছে। এই জয়ের ভাগিদার সবাই। স্মরণীয় মুহূর্ত। আনন্দ বোঝানোর মতো কোনও শব্দ নেই।”
FIFA CLUB WORLD CUP WINNERS!!! 🏆 pic.twitter.com/KnbFOjfqzg
— Chelsea FC (@ChelseaFC) July 13, 2025
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
নিয়মিত খবরে থাকতে ফলো করুন