স্টেশনে ভিক্ষে করেই অন্ন জোগান মা, মাধ্যমিক পরীক্ষা দিল ছেলে

স্টেশনে ভিক্ষে করেই অন্ন জোগান মা, মাধ্যমিক পরীক্ষা দিল ছেলে

সিনেমা/বিনোদন/থিয়েটার
Spread the love


শঙ্করকুমার রায়, রায়গঞ্জ: স্বামী অনেক বছর আগেই দুর্ঘটনায় মারা গিয়েছেন। সেসময় মাথায় আকাশ ভেঙে পড়েছিল রায়গঞ্জের দেবীনগরের বাসিন্দা রুমকি দাসের। কোলের ছেলের মুখে অন্ন তুলে দিয়ে ভিক্ষা করাই বেছে নিয়েছিলেন তিনি। এবার সেই ছেলেই মাধ্যমিক পরীক্ষা দিল। পরীক্ষার দিনগুলোতে ছেলেকে প্রস্তুত করে ভিক্ষার জন্য বেরিয়েছিলেন রুমকি। ছেলেকে বড় করতে আগামী দিনেও ভিক্ষা করবেন বলে জানান তিনি। ঘটনাটি উত্তর দিনাজপুরের রায়গঞ্জের দেবীনগরের।

রায়গঞ্জ বিশ্ববিদ্যালয় (সাবেক ‘রায়গঞ্জ ইউনির্ভাসিটি কলেজ’) থেকে ২০১০ সালে দর্শন বিষয়ে অনার্স পাশ করেছিলেন দেবীনগরের রুমকি দাস। ২০১২ সালে রায়গঞ্জ শহরের প্রান্তিক চণ্ডীতলার বাসিন্দা ভূমি সংস্কার দপ্তরের চুক্তিভিত্তিক কর্মী বিকাশ দাসের সঙ্গে তাঁর বিয়ে। পরবর্তী সময়ে এক পুত্রসন্তান হয় তাঁদের। সংসারে আনন্দ ভরে ছিল সবসময়। তবে সুখের সময় বেশি দিন স্থায়ী হয়নি।

বিবাহ সম্পূর্ণ হয়। কিন্তু সেই শুভ পরিণতির মধুময় দীর্ঘস্থায়ী হয়নি। পুত্রসন্তান জন্মের পরের বছরেই ২০১৭ সালে কালিয়াগঞ্জ থেকে বাইকে রায়গঞ্জের বাড়ি পৌঁছনোর পথে উলটো দিক থেকে আসার লরির ধাক্কায় সব শেষ হয়ে যায়। ঘটনাস্থলেই প্রাণ হারান মাত্র পঁয়ত্রিশ বছর বয়সের বিকাশ দাস। বস্তুত তারপরই জীবনযুদ্ধের নতুন অধ্যায় শুরু হয় মা-ছেলের। ভূমি সংস্কার দপ্তরে দীর্ঘদিন ধরে হন্যে হয়ে ঘুরেফিরেও কোনও কাজ পাননি। শেষপর্যন্ত সংসার চালাতে হাতে তুলে নেন ভিক্ষার পাত্র। পাড় ভাঙা শাড়ি ক্রমশ মলিন হয়। রোদ-ঝড়জলে ক্রমশ কালির ছাপ পড়ে চেহারায়।

রুমকি দাস স্টেশন ও বাসস্ট্যান্ড এলাকায় প্রতিদিন ভিক্ষা করতে যান। নির্দিষ্ট সময়ের পর চণ্ডীতলার বাড়ি ফেরেন। এভাবেই একরত্তিতে বড় করেছেন। ছেলে বিনীত দাসকে স্কুলে পড়াশোনাও করিয়ে যাচ্ছেন। এবছর রায়গঞ্জ সুদর্শনপুর দ্বারিকাপ্রসাদ উচ্চ বিদ্যাচক্র স্কুল থেকে মাধ্যমিক পরীক্ষা দিল সে। ছেলেকে নিজের পায়ে দাঁড় করানোর জন্য যত দিন ভিক্ষা করতে হয়, তিনি করবেন। এমনই জানিয়েছেন রুমকি। ছেলের মাধ্যমিক পরীক্ষা ভালো হয়েছে বলেই খবর। মায়ের সম্পর্কে জিজ্ঞেস করতেই চুপ হয়ে যায় বিনীত। প্রধান শিক্ষক অভিজিৎ দত্ত বলেন, “বিনীত আমাদের স্কুলের ছাত্র। মাধ্যমিক পরীক্ষা দিচ্ছে। বাবা নেই। কিন্তু পরিবারের আর্থিক অবস্থা বিশেষ জানা নেই।” অন্যদিকে ভূমি ও ভূমি সংস্কার দপ্তরের রায়গঞ্জ মহকুমা আধিকারিক মহম্মদ মহিউদ্দিন বলেন, “তিনি যোগাযোগ করেছে কিনা, জানা নেই। খোঁজ নিয়ে পরবর্তীতে জানাব।”



Source link

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *