স্কুলে পশুদের মিড–ডে মিল ও কিছু প্রশ্ন

স্কুলে পশুদের মিড–ডে মিল ও কিছু প্রশ্ন

আন্তর্জাতিক INTERNATIONAL
Spread the love


 

  • শর্মিষ্ঠা ঘোষ

শ্রীমতি মানেকা গান্ধির ইচ্ছায় সম্প্রতি আমাদের রাজ্য সরকার একটি নির্দেশিকা জারি করেছে। যেখানে বলা হয়েছে সরকারি বিদ্যালয়গুলির মিড-ডে মিলের উদ্বৃত্ত খাদ্য খাওয়াতে হবে পথকুকুরদের এবং বিষয়টি দেখাশোনার দায়িত্ব একজনকে দিতে হবে। এটা যে খুবই ভালো উদ্যোগ তাতে কোনও সন্দেহ নেই| পথের কুকুর, বিড়াল, গোরু, ছাগল সকলের প্রতি আমাদের মনুষ্যজাতির কিছু দায়িত্ব রয়ে গিয়েছে। আমরা অবশ্যই আমাদের সন্তানদের ছোট থেকেই শিক্ষা দিয়ে এদের ভালোবাসতে এদের ওপর অত্যাচার না করতে এবং পারলে এদের সঙ্গে খাবার ভাগ করতে শেখাই| এবং আমরা ব্যক্তিগতভাবে, পাড়াগতভাবে এবং বহু মানুষ এনজিও স্থাপন করে এই ধরনের কাজগুলো করেন। এখন প্রশ্ন হল সরকারি নির্দেশিকা জারির অর্থ ‘বাধ্যতামূলকভাবে’ প্রতিটি স্কুলের মিড–ডে মিলের উদ্ধৃত্ত খাবার পথকুকুরদের খাওয়াতে হবে। উদ্বৃত্ত অন্ন খাওয়ানোর নির্দেশিকা নিয়ে বলার কিছু নেই।

কিন্তু প্রশ্ন অন্য জায়গায়। পশ্চিমবঙ্গের অধিকাংশ স্কুলে সীমানা প্রাচীর বলতে কিছু নেই। একই সঙ্গে মিড–ডে মিল খাওয়ার মতো ঘর নেই বাচ্চাদের। বাচ্চারা রোদে জলে ধুলোবালির ওপর বসে, দাঁড়িয়ে মিড–ডে মিল নামক বস্তুটি খায়। সামান্য বরাদ্দে খাবারদাবারের গুণমান নিয়ে নাইবা বললাম। আবার এই সামান্য খাবারটি ও পশ্চিমবাংলার বহু বাচ্চার কাছে মহার্ঘ। সে যাই হোক এবার সীমানা প্রাচীর না থাকায় রান্না করা থেকে খাবার সময় পর্যন্ত তাদের বিরক্ত করবার জন্য কুকুর, ছাগল, গোরু অবাধে প্রবেশ করতে থাকে। অধিকাংশ ক্ষেত্রেই স্কুলগুলির কর্মীরা লাঠি হাতে এদের তাড়ানোর দায়িত্ব নেন। না, শারীরিকভাবে কোনও আঘাত করা উদ্দেশ্য মোটেই নয়। বরং শিশুগুলি শান্তিতে যাতে খেতে পারে তার ব্যবস্থা করা।

মানেকা গান্ধি একটু এগিয়ে ভেবেছেন। তিনি পশুপ্রেমী সবাই জানে। আমাদের চেয়ে নিশ্চয়ই তার পশুপ্রেমের গভীরতা অনেক বেশি। এবং ক্ষমতাও। সেজন্য তিনি আইন প্রণয়ন করার ক্ষমতা রাখেন। কাজেই তাঁর ইচ্ছা অনুসারে এই আইন। বদলে আমাদেরও কিছু আর্জি আছে। প্রথম শ্রেণি থেকে দ্বাদশ শ্রেণি পর্যন্ত পড়ুয়াদের মিড–ডে মিলের আওতায় আনা হোক। পুরসভা ও পঞ্চায়েতগুলি এই উদ্বৃত্ত খাদ্য সংগ্রহ করে নিয়ে যাক। পথে বিড়াল, ছাগল, গোরু সকলকে খাওয়ানোর দায়িত্ব এই পুরসভা বা পঞ্চায়েতগুলি নিক। স্কুলগুলো সীমানা প্রাচীর দিয়ে ঘিরে দেওয়া হোক। নির্দিষ্ট সীমানার মধ্যে ছোটরা নিরাপদে স্কুল করুক। পথকুকুর, বিড়ালদের চিকিৎসার দায়িত্ব সরকার নিক। স্থানীয় প্রশাসনকে এসব দায়িত্ব দেওয়া হোক।

খুব বেশি চাইলাম? এখন তো স্কুলগুলিতে পড়াশোনা বাদে আর সবকিছুকেই খুব গুরুত্ব দেওয়া হয়। যে কারণে সরকারি স্কুলগুলির ছাত্রসংখ্যা কমতে কমতে তলানিতে। অনেক স্কুল উঠেই গিয়েছে। কর্মচারী নিয়োগের বালাই নেই। নিয়োগ দুর্নীতির ঠেলায় তার নাভিশ্বাস উঠেছে। বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলো ক্রমশ পুষ্ট হচ্ছে এবং ভবিষ্যতেও হবে। সরকারি স্কুলের সামগ্রিক পরিকাঠামো উন্নতির দিকে বরং সরকার মন দিক। স্কুলের শিক্ষকরা  পড়ুয়াদের পশুপ্রেম শিক্ষা দিয়ে থাকেন। সেটা নিয়ে এত চিন্তিত হবার কিছু হয়নি। সবাই সবার কাজটা মন দিয়ে করলে বরং সমাজের সামগ্রিকভাবে মঙ্গল হবে।

(লেখক পেশায় শিক্ষিকা রায়গঞ্জের বাসিন্দা) 



Source link

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *