ভক্ত টোটো
২১ ফেব্রুয়ারি ভাষা দিবস। বিশ্বজুড়ে এদিন পালিত হবে ভাষা দিবস। পৃথিবীর সব জাতি চায় তাদের নিজেদের ভাষাকে বাঁচিয়ে রাখতে। কেননা সব জাতির ক্ষেত্রেই ভাষা হল তাদের প্রাণ ও পরিচিতি। ভাষা আমাদের মায়ের মতোই হৃদয়ের বড় কাছাকাছি থাকে। আমি চাই আমাদের টোটো ভাষাকে পৃথিবীর বুকে একটা আলাদা পরিচিতি দিতে। কারণ আমরা পৃথিবীর আদিম জনজাতির মানুষ। আমাদের ভাষাকে সংরক্ষণ না করলে ধীরে ধীরে কালের বিবর্তনে বিলুপ্তির পথে চলে যাবে। সেইজন্য আমাদের টোটো ভাষার জন্য বিশেষ যত্ন নেওয়া প্রয়োজন।
বহু বহু বছর ধরে টোটোদের কোনও লিপি ছিল না। দীর্ঘদিন ধরে এই ব্যাপারে গবেষণা করেন পদ্মশ্রী সম্মানপ্রাপ্ত ধনীরাম টোটো। অবশেষে তিনি ২৬টি টোটো ভাষার অক্ষর তৈরি করে ইতিহাস রচনা করেন। রাজ্য তথা কেন্দ্র সরকারের কাছে আমার আবেদন, টোটো ভাষাকে বাঁচিয়ে রাখার জন্য সংরক্ষণের প্রয়োজন। আর সেইজন্য টোটোপাড়ার সব প্রাথমিক স্কুল এবং হাইস্কুলে অন্তত একটি বিষয় টোটো ভাষায় পড়ানোর ব্যবস্থা করা হোক। আর শিক্ষিত টোটো ছেলেমেয়েদের শিক্ষক-শিক্ষিকার পদে রাখা হোক।
আমি নিজে টোটো শব্দ সংগ্রহ করে ‘টোটো শব্দ সংগ্রহ’ নামে একটি বই লিখেছি। বইটিতে টোটো শব্দগুলির বাংলা ও ইংরেজিতে অনুবাদ রয়েছে। আর বাংলা হরফে টোটো শব্দ লেখা রয়েছে। আমার মূল উদ্দেশ্য হল, টোটো ভাষার শব্দগুলি লিখিত আকারে সংরক্ষিত করে রাখা। আর নতুন প্রজন্মের টোটো ছেলেমেয়েদের হাতে তা পৌঁছে দেওয়া।
টোটো ভাষার নতুন লিপি নিয়ে টোটোপাড়ার চিত্তরঞ্জন মেমোরিয়াল এডুকেশন সেন্টারে পড়ানোর ব্যবস্থা চলছে। আমি চাই সরকারি স্কুলেও এই লিপি নিয়ে পঠনপাঠন চালু হোক। আমি টোটোবিকো লোইকো দেরিং নামে একটি ছোট্ট পত্রিকায় নিয়মিত লিখে চলেছি। টোটো শব্দ ব্যবহার করা হচ্ছে এই পত্রিকায়। আবার টোটো ভাষায় গানের মাধ্যমে টোটো ভাষাকে প্রচারের চেষ্টা করছেন টোটো ছেলেমেয়েরা।
অনুলিখন : নীহাররঞ্জন ঘোষ