সেভিংস অ্যাকাউন্টে টাকা রেখে নিশ্চিন্ত থাকেন না, এমন মানুষ খুঁজে পাওয়া কঠিন। কিন্তু অনেক সময়ই সেখানে আমাদের টাকা দীর্ঘ সময় ধরে স্রেফ পড়েই থাকে। অথচ সেই গচ্ছিত রাখা, অতিরিক্ত টাকাও কিন্তু বুদ্ধি করে ব্যবহার করা যায় অন্যভাবে। লেখা ভালো, লাভজনকভাবে। কী রকম? তারই সূত্রের সন্ধান দিলেন পার্সোনাল ফিনান্স প্র্যাকটিশনার সোমনাথ পাল।
ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টে যথেষ্ট টাকা থাকলে শরীর ও মন দুটোই বেশ ফুরফুরে থাকে, তাই না? যখন তখন এবং আজকাল যেখানে সেখানে (আগামী দিনে এর প্রয়োজন আরও বাড়বে) ডেবিট কার্ড বা UPI দিয়ে সেই ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টে থেকে খরচ করতে পারবেন। এবার আসল কথায় আসি। এই যে খরচের কথা বললাম, মাঝে মাঝেই দেখতে পাই, তা তেমন খুব একটা বেশি নয়। নিজের অভিজ্ঞতার ভিত্তিতে বলছি, কিছু সংখ্যক ইনভেস্টরদের জন্য উপার্জনের সিংহভাগটাই তো মাসের পর মাস পড়ে থাকে সেভিংস অ্যাকাউন্টে। শুনে অবাক হবেন না যেন, এমন ইনভেস্টররা কিন্তু আছেন আমাদের চারপাশেই।
এদিকে ব্যাঙ্কের সেভিংস অ্যাকাউন্টে সুদের হার কত? সাধারণত রাষ্ট্রায়ত্ত এবং প্রাইভেট ব্যাঙ্কে ২.৫% থেকে ৩% বাৎসরিক সুদ পাওয়া যায়। মানছি, কিছু কিছু প্রাইভেট ব্যাঙ্কে গড়ে (month-to-month common stability) ৫ লক্ষ বা ১০ লক্ষ টাকার বেশি রাখলে ৫% থেকে ৭% সুদও পাওয়া যায়। নানা কারণে আমরা অনেকেই সেভিংস অ্যাকাউন্টে একটু বেশি টাকা রাখতে স্বস্তি বোধ করি। এর মূলে আছে একটি একমাত্রিক চিন্তা–টাকাটা যখন তখন খরচ করা বা তোলা যায়। কিন্তু অনেক সময়ই বুঝতে পারি, আলস্যের শিকার হয়ে পড়েন মানুষ। তাই সেভিংস অ্যাকাউন্টে পড়ে থাকা অতিরিক্ত টাকাটা সঠিক ভাবে বিনিয়োগ (যাকে চলতি ভাষায় ‘খাটানো’ বলে থাকি আমরা) করে ওঠা হয় না।
এই প্রসঙ্গে আমার পরিষ্কার বক্তব্য শুনে নিন। সেভিংস অ্যাকাউন্টে থাকা বাড়তি টাকাটা রাখা যেতে পারে যে কোনও মিউচুয়াল ফান্ডের লিকুইড বা আলট্রা শর্ট টার্ম ফান্ডে। বাৎসরিক রিটার্ন কত হবে, তা নিশ্চয় জানতে চাইবেন? দেখুন, মোটামোটি ৫% থেকে ৭% মতো আশা করা যেতে পারে। কোনও গ্যারান্টি নেই কিন্তু। তবে এও বলি, এর জন্য বেশি টাকা রাখার দরকার নেই। নূন্যতম হাজার টাকা থেকে এইরকম ফান্ডে বিনিয়োগ শুরু করা যেতে পারে। হ্যাঁ, প্রথম সাত দিন অতি সামান্য exit load থাকে।
তারপর থেকে টাকা তোলার জন্য আর কোনও খরচ নেই। যেদিন টাকা প্রয়োজন, তার একদিন আগে ‘রিডিম’ করলে, পরের দিন (ছুটির দিন না হলে) টাকা ঠিক নিজের অ্যাকাউন্টে চলে আসবে। কিছু ফান্ড আছে যা আপনার বিনিয়োগ করা টাকার ৫০% অবধি তাৎক্ষণিক ভাবেও তুলতে দেয়। সে সব ক্ষেত্রে অনলাইন পদ্ধতি মেনে ‘রিডিম’ করলে টাকা তখনই আপনার ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টে ঢুকে যাবে। খুব স্বচ্ছ ও সুবিধাজনক পদ্ধতি। মিউচুয়াল ফান্ডে যেমন অনেক বেশি রিটার্নের লোভনীয় হাতছানি, তেমনি আবার শেয়ার বাজারের অস্থির মতিগতির ফাঁদে লোকসান। কিন্তু লিকুইড বা আলট্রা শর্ট টার্ম ফান্ডে শেয়ার বাজারের নাগরদোলা নেই।
এই সমস্ত ফান্ডের একটা অংশে আপনার আমার টাকা বিনিয়োগ হয় অতি অল্প মেয়াদী AAA rated বন্ড এবং সরকারি বন্ডে (sovereign হিসাবে পরিচিত)। সেখানে বাজারের ওঠাপড়া নেই। ফলত এখানে বড় বড় কোম্পানি থেকে শুরু করে সাধারণ মানুষ স্বল্পদিনের জন্য টাকা রাখতে পারেন। আবার বলি, বেশি টাকা যে রাখতেই হবে তার কোনও মানে নেই।
কম টাকা রাখলেও, ব্যাঙ্কের তুলনায় প্রাপ্তির সম্ভবনা অনেক বেশি। আর সব থেকে বড় কথা, যখন ইচ্ছে ও যতটা ইচ্ছে, তা তোলা যায়। ব্যাঙ্কের সুদের মতোই, এই ধরনের স্বল্পমেয়াদি মিউচুয়াল ফান্ডের রিটার্নও যার যা ইনকাম ট্যাক্সের স্ল্যাব, সেই আওতায় আসবে। এখানে বলে রাখি, ব্যাঙ্কে বছরে দশ হাজার টাকা সুদ অবধি কোনও ট্যাক্স লাগে না। ‘‘তরল তহবিল’’, অর্থাৎ লিকুইড ফান্ডে আপনার টাকাকে যথাসম্ভব বেশি কাজে লাগান। তবে অবশ্যই বিনিয়োগের আগে, আপনার আর্থিক উপদেষ্টার সাথে পরামর্শ করুন।
এরই সঙ্গে জেনে নিন নিচে লেখা পয়েন্টগুলি নিয়ে :
১। কোনও জাতীয় ফান্ডে লগ্নি করতে পারবেন, তা বুঝে নিন। বাজারে ‘চয়েস’ কম নেই।
২। কোনও প্রতিশ্রুত রিটার্ন নেই। এই ধারণার কোনও অদলবদল যেন না হয়।
৩। আয়কর আইনের সঙ্গে জড়িত বিষয় জেনে নেবেন, তাতে লাভ আপনারই।
৪। সাধারণত খুব দীর্ঘকাল ধরে এই ধরনের ফান্ডে টাকা বরাদ্দ করে রাখার কথা নয়। কীভাবে সব থেকে ভাল ভাবে এই শ্রেণির ফান্ড আপনার কাজে লাগবে, তা বোঝা অবশ্যই দরকার। এই শেষ পয়েন্টটি খুব গুরুত্বপূর্ণ।