নন্দন দত্ত ,সিউড়ি: ‘জীবে জীবে খাদ্য-খাদক সম্পর্ক সে তো সৃষ্টির গোড়ার কথা হে। ওই যে টিকটিকিটা ওত পেতে রয়েছে, দেখেছ?’ মনে পড়ছে লাইনগুলো। সত্যজিৎ রায়ের সেই, ‘সেপ্টোপাসের খিদে’। দিনে দিনে যে গাছের খিদে বেড়েই চলেছিল। দিশা হারিয়ে ছিলেন কান্তিবাবু…।
কল্পনার সেই গাছ আজ বীরভূমের মাটিতে? বাঁকুড়ার পর বীরভূমের রাজনগরের গভীর জঙ্গলে দেখা গেল মাংসভুক উদ্ভিদ। যারা কীট পতঙ্গ ধরে ধরে খেয়ে দিব্যি বেঁচে আছে। সত্যি কি সেই সেপ্টোপাসের দেখা মিলল? না তা নয়! এই পতঙ্গভুক্ত গাছের প্রকৃত নাম ড্রসেরা বা সূর্যশিশির।
পৃথিবীতে বেশ কিছু উদ্ভিদ রয়েছে যেগুলো কীট-পতঙ্গ খেয়ে থাকে, ড্রসেরা বা সূর্যশিশির এরকমই একটি উদ্ভিদ। আফ্রিকার আমাজনের জঙ্গলে মাংসাশী বেশ কিছু গাছ রয়েছে যেগুলো ছোট ছোট কীটপতঙ্গ এমনকী ব্যাঙ, ইঁদুর ধরে খেয়ে ফেলে। ইঁদুর, ব্যাঙ খাওয়া এসব উদ্ভিদের দেখা না মিললেও পতঙ্গভুক এই উদ্ভিদের দেখা মিলল বীরভূমের ঝাড়খণ্ড সীমান্তবর্তী রাজনগরের জঙ্গলে। স্যাঁতস্যাঁতে একটি জায়গায় এই পতঙ্গভুক উদ্ভিদের দেখা মিলল।
রাজনগর উচ্চ বিদ্যালয়ের বিজ্ঞান বিষয়ের প্রাক্তন শিক্ষক গৌরহরি দত্ত জানালেন, ড্রসেরা বা সূর্যশিশিরের গা থেকে এক ধরনের এনজাইম নির্গত হয়। এর ওপরে সকালের সূর্যের আলো পড়লে শিশির বিন্দুর মতো দেখতে মনে হয়। উদ্ভিদের গায়ে থাকে অসংখ্য কর্শিকা। যখনই ছোট ছোট কোনও কীটপতঙ্গ এই সূর্যশিশির উদ্ভিদের গায়ে বসে তখনই এই কর্সিকাগুলো থেকে বেরোনো এক ধরনের এনজাইম এই ছোট্ট ছোট্ট কীট-পতঙ্গ গুলিকে মেরে ফেলে। এই কীটপতঙ্গ খেয়েই বেঁচে থাকে উদ্ভিদ।
আশ্চর্যজনক এই উদ্ভিদের সচরাচর বীরভূমের মতন উষ্ণ ও খরা প্রবণ রাজনগর এলাকায় সাধারণত দেখা মেলে না। বনদপ্তরের পক্ষ থেকে এলাকা ও গাছটিকে চিহ্নিত করা হয়েছে। বিরল প্রজাতির এই গাছটিকে বাঁচাতেই জঙ্গলের সঠিক পরিচয় বনদপ্তর জানাতে চাইছে না। তবে তারা জানান, এই গাছ নিজেই গজিয়ে ওঠে আবার নিজেই বিলুপ্ত হয়ে যায়।সেই গাছের হদিশ মেলায় জেলাজুড়ে আগ্রহ চরমে।