সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটাল ডেস্ক: এখন বদলার রাজনীতি ‘নতুন’ বাংলাদেশে। মহম্মদ ইউনুসের অন্তর্বর্তী সরকার ব্যস্ত আওয়ামি লিগের নেতা-কর্মীদের ধরে ধরে জেলে ভরতে। নির্বাচনের মতো গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ই এখন যেন ব্রাত্য হয়ে গিয়েছে। দোহাই দেওয়া হচ্ছে রাষ্ট্র সংস্কারের। ফলে ভোট ডিসেম্বর কিংবা সামনের বছরের জুনেও গড়াতে পারে। আবার বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন নেতাদের হুঁশিয়ারি, শেখ হাসিনার বিচার না হওয়া পর্যন্ত ভোট হতে দেবেন না। এই পরিস্থিতিতে ধৈর্যের বাঁধ ভাঙছে বিএনপির। আজ সমাবেশ থেকে দলের নেতারা বলেন, সরকারের পচন ধরেছে। এভাবে চললে আওয়ামি লিগ যা করেছে তার চেয়ে বেশি ক্ষতি হবে। ইউনুসকে তোপ দাগতে গিয়ে হাসিনার দলের তুলনা টানায় প্রশ্ন উঠছে, ইউনুসের থেকে মুজিবকন্যার শাসনকালই ভালো ছিল, এবার কি সেটাই মেনে নিচ্ছে খালেদা জিয়ার দল?
আজ বুধবার বিকেলে ঢাকার নয়াপল্টনে বিএনপির তিন সংগঠন ছাত্রদল, যুবদল ও স্বেচ্ছাসেবক দলের আয়োজনে ‘তারুণ্যের রাজনৈতিক অধিকার প্রতিষ্ঠার সমাবেশে’ বক্তব্যে দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস। তখনই নির্বাচন নিয়ে ইউনুস সরকারের গরিমসিকে তোপ দেগে তিনি বলেন, “এই সরকার যদি এভাবে চালায় তাহলে আওয়ামি লিগ যা ক্ষতি করেছে, তার চাইতে অনেক বেশি ক্ষতি হয়ে যাবে। যে কোনও দল আসুক, নির্বাচিত সরকারের হাতে এই দেশের স্বাধীনতা–সার্বভৌমত্ব ও ভৌগোলিক অখণ্ডতা নিরাপদ থাকবে বলে বিশ্বাস করি। এই সরকার গণমানুষের আকাঙ্ক্ষা ও আস্থার সরকার ছিল। কিন্তু ১০ মাসের কার্যক্রমে এই সরকার থেকে কিছুই পাইনি আমরা। শুধু পেয়েছি অবজ্ঞা।”
এদিকে, নির্বাচন নিয়ে টালবাহানা শুরু হয়েছে অভিযোগ তুলে ফের ডিসেম্বরেই নির্বাচন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তথা খালেদা জিয়ার ছেলে তারেক রহমান। আজ ঢাকার সমাবেশে ভার্চুয়ালি যোগ দিয়ে তিনি বলেন, “নিরপেক্ষতা ও বিশ্বাসযোগ্যতাই অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান পুঁজি। তাই তাদের প্রতি আমাদের আহ্বান থাকবে, জনগণের বিশ্বাস-ভালোবাসা নষ্ট হয় অন্তর্বর্তী সরকারের এমন কোনও পদক্ষেপ নেওয়া ঠিক হবে না। জনগণ ও গণতন্ত্রের পক্ষের রাজনৈতিক দলগুলোকে দয়া করে প্রতিপক্ষ বানাবেন না। যদি আপনাদের কেউ রাষ্ট্র পরিচালনায় থাকতে চায়, তাহলে সরকার থেকে পদত্যাগ করে জনগণের কাছে এসে নির্বাচন করুন। অতীতে বিভিন্ন সময় তত্ত্বাবধায়ক সরকার তিন মাসের মধ্যেই সফলভাবে জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠান সম্পন্ন করেছে। কিন্তু আমরা দেখছি ১০ মাস পার হয়ে গেলেও অন্তর্বর্তী সরকার নির্বাচনের দিনক্ষণ ঘোষণা করছে না।” দেশবাসীর উদ্দেশে তিনি আরও বলেন, আগামী ডিসেম্বরের মধ্যে আপনারা জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠান যেন হয় তার প্রস্তুতি নিতে শুরু করুন। কারা রাষ্ট্র পরিচালনা করবে, কারা আপনাদের প্রতিনিধি হবে জাতীয় নির্বাচনে, আপনারা ভোট দিয়ে আপনাদের সেই প্রতিনিধিকে আপনারা নির্বাচিত করবেন।”
সম্প্রতি লন্ডনে চিকিৎসার জন্য গিয়েছিলেন বিএনপির চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়া। সর্বক্ষণ মায়ের পাশে ছিলেন তারেক। তারপর থেকেই তাঁর বাংলাদেশে ফেরার সম্ভাবনা জোরাল হয়েছে। বিএনপির নেতারাও বলছেন তারেক খুব শ্রীঘ্রই দেশে ফিরছেন। আওয়ামি লিগ নিষিদ্ধ হওয়ার পর ফাঁকা মাঠে গোল দিতে প্রস্তুত বিএনপি। কিন্তু তাদের চ্যালেঞ্জ করছে বৈষম্যবিরোধী ছাত্রদের নতুন রাজনৈতিক দল জাতীয় নাগরিক পার্টি। এর মাঝেই জল্পনা তৈরি হচ্ছে শেখ হাসিনার পুত্র সজীব ওয়াজেদ জয়ের ঢাকায় আসা নিয়ে। ফলে বিএনপি আর অপেক্ষা করতে রাজি নয়। দ্রুত নির্বাচনের সঠিক দিন না জানালে বড় আন্দোলনে নামার হুঁশিয়ারি দিয়েছে তারা।