- সম্পা পাল
১
১৫ জুন, ১৯৬৯। মাঝরাত। দুজন ছুটছে। মাথার উপর সরকারি নির্দেশ। পেছনে পুলিশ। কয়েক ঘণ্টা ধরে চলছে এই দৌড়। সুভাষপল্লি, সাহু নদী, বৈকুণ্ঠপুরের জঙ্গলটাও প্রায় শেষের পথে। জানে না আর কতক্ষণ! ভারী বুটের শব্দ ক্রমশ এগিয়ে আসছে। পরপর দুটো গুলির শব্দ! কে যেন কাকে বাঁচাতে গিয়ে নিজের বুক এগিয়ে দিল। তারপর গগনভেদী চিৎকার। রক্ত ছিটকে বেরিয়ে গেল ঘন কালো জঙ্গলের দিকে। আকাশে তখন আষাঢ়ের রাজ্যাভিষেক!
রক্তমাখা দেহটা ক্রমশ কাঁধের উপর নিস্তেজ হতে শুরু করেছে। সুবিমল বুঝতে পারে জীবনমৃত্যুর ব্যবধান কমে আসছে। কানের কাছে ভেসে উঠছে বোনটাকে এবছরের মধ্যে বিয়ে দিতে হবে। দোকানটাকেও একটু বড় করতে হবে! কয়েক কিলোমিটার ঊর্ধ্বশ্বাসে ছোটার পর ভোর হবে হবে, এমন সময় স্বাস্থ্যকেন্দ্রে এসে সুবিমল কাঁধ থেকে শ্যামলকে নামায়। কিন্তু ততক্ষণে প্রতিবিপ্লব বিজয়ী।
সুবিমল ঝাপসা চোখে তাকিয়ে থাকে মৃত শ্যামলের মুখের দিকে; যে মুখে এখনও বিপ্লব, বুকে লেগে থাকা চাপ চাপ কাঁচা রক্ত থেকে যেন ঠিকরে বের হচ্ছে– ভোরের রক্তিম আলো। যে আলোয় মিশে যাচ্ছে পাখিদের আড়মোড়া ভাঙা শব্দ। বৈকুণ্ঠপুরের গভীর জঙ্গলে মাঝরাতে চিতা জ্বলে উঠল দাউদাউ করে। শ্যামলের মা, বোন একে অপরকে জড়িয়ে অসহায়ভাবে বসে থাকে গনগনে চিতার সামনে।
দিন সাতেক সুবিমল সংগঠনে আসেনি, ভীষণ জ্বরে ভুগেছে। বাড়ি ফেরার পথে শ্যামলদের দুই কামরার ধুপি কাঠের ঘর ও বারান্দার সামনে এসে দাঁড়ায়। বারান্দায় একা কুপি আলো দেবার জন্য দাঁড়িয়ে। কিন্তু ভীষণ নেমে আসা এ অন্ধকার সূর্যের আলোতেও যেন অসহায়! সেখানে কুপির আলো তো খুব সামান্য। অথচ শ্যামল একদিন সূর্যের আলোয় বিপ্লব লিখতে চেয়েছিল! ওর বোন ঘরে সেলাই করছে, মা দরজার কাছে নির্বাক দৃষ্টি মেলে হয়তো শ্যামলের ফেরায় অপেক্ষায়। সুবিমল এগিয়ে এসে বারান্দায় বসে কিন্তু কথা হয় না, কিছুক্ষণ বাদে ওর মায়ের হাতে একমুঠো টাকা গুঁজে দিয়ে বলে, ‘মাসিমা রাখুন।’ এতক্ষণে ওর মায়ের সংবিৎ ফেরে। মুখে একটাই শব্দ সুবিমল! স্বাগতা মেশিন ছেড়ে উঠে আসে, মায়ের হাত থেকে টাকা নিয়ে সুবিমলের সামনে রেখে মাথা নীচু করে বলে, ‘আমরা খেটেখাওয়া মানুষ, এতে অভ্যেস নষ্ট হয়ে যাবে! পারলে মাঝেমাঝে মায়ের কাছে এসে বসবেন, মা হয়তো বাঁচতে পারবে।’
সুবিমল যখন বাইরে বেরিয়ে এল তখন আকাশ ততটা ঘোলাটে নয়, বিকেলে বৃষ্টি হয়ে গেছে একপ্রস্থ। ছিটেফোঁটা সাদা মেঘ আর মিলেমিলে হাওয়ায় ভেসে যাচ্ছে এ শহরের ছোট ছোট কাঠের বাড়িগুলি। ভাটিয়ালি গান, বর্ষার জল, কাদা, ব্যাঙের ডাক, রিকশাওয়ালার ভেঁপু বাজিয়ে বাড়ি ফেরা সবটাই যেন বিপ্লব! বাড়ির গেটে ঢুকতেই কানে আসে মালতীর মায়ের আওয়াজ। আজ সুবিমলের বিয়ে ঠিক হল। সুবিমল নিঃশব্দে দোতলার ঘরে আসে, মালতীও পেছনে এসে দাঁড়ায়। বছর দুয়েক ওর অপেক্ষাই তো করেছে সুবিমল। দেখতে সুন্দরী, অবস্থাসম্পন্ন একমাত্র মেয়ে হওয়ায় সুবিমলের মা-ও ছেলেকে সংসারে বেঁধে দিতে চায়। সুবিমল বলে, ‘এমন ভবঘুরে মানুষের সঙ্গে সুখী হতে পারবে!’ মালতীর ঝরঝরে জবাব, ‘দায়িত্ব বাড়লে নতুন পেশাও খুঁজে নেবে।’
২
বীভৎস গুলির শব্দে মাঝরাতে সুবিমলের ঘুম ভেঙে যায়। ভেতরটা ছ্যাঁৎ করে ওঠে। ভেসে ওঠে শ্যামলের সঙ্গে নদীর পাড়ের সাংসারিক গল্প, যে গল্পে প্রায়ই উঠে আসত স্বাগতার বিয়ের কথা, পণের কথা। সুবিমল বিছানা ছেড়ে জানলার কাছে আসে! যে গুলিতে শ্যামল মারা গেল, সেটা আসলে ওর দিকেই ছুটে এসেছিল। শ্যামল জীবন দিয়ে প্রমাণ করে গেল বন্ধুত্ব এমনই হয়।
হেমন্ত পেরিয়ে শীতকাল এল। সেইসঙ্গে ভাঁড়ে ভাঁড়ে জিনিস এল। বাড়িতে প্যান্ডেল হল। বাবা, ঠাকুরদার রেলে চাকুরি আর মায়ের পরিবারের জমিদারির সুবাদে সুবিমলদের অবস্থা ভালো। ছোট ভাই কলকাতায় ডাক্তারি পড়ে, এদিকে হয়তো আর ফিরবে না, জলকাদার উত্তরবঙ্গকে সে ভালোবাসে না। কিন্তু এই বিয়ে থেকে সুবিমল পালাতে চায়। যা ভাবনা তাই কাজ। সন্ধ্যা নামে। বরযাত্রীরা তৈরি। কিন্তু যার বিয়ে তার পাত্তা পরবর্তী কয়েক দিনেও মিলল না!
দিন সাতেক বাদের সন্ধ্যায় সুবিমল বাড়ি ফেরে। সঙ্গে নতুন বৌ। এ ক’দিন সংগঠনের কাজে বাইরে ছিল। বাড়ি ফেরার পথে অনেক ভাবনাচিন্তা করে একটাই সমাধান পেয়েছিল, শ্যামলের বোনকে বিয়ে করা। দরিদ্র পরিবারের শ্যামলা মেয়েকে দেখতেই সুবিমলের মা ঘরে দরজা দিয়ে শোকের কান্না শুরু করে। সুবিমল পরিস্থিতি জানতই। সুতরাং নিজেই দরজা খুলে স্বাগতাকে ঘরে নিয়ে আসে। ঘরে তখন বাসি ফুল আর বিয়ের যাবতীয় জিনিস। বিছানার এক কোনা পরিষ্কার করে স্বাগতাকে বসতে দিয়ে সেই যে ঘর থেকে বের হল, তারপর রাত পার হয়ে পরের দিনটাও শেষ হয়ে গেল। পরদিন সন্ধ্যায় যখন ঘরে এল তখন নতুন বৌ ঘর পরিষ্কার করে এক কোনায় দাঁড়িয়ে। সুবিমল ঘরে এসে গলায় কাশি দেয়। স্বাগতা শাড়ির আঁচল টেনে নেয়। সুবিমল ঘরের চারিদিকে তাকায়, মনে পড়ে না কতদিন বাদে এই সুনিপুণ গোছানো ঘর! বিছানায় গা এলিয়ে দেয়। একটু বাদে একটা নরম স্বর কানে আসে– আমাকে কিছু খেতে দিন। সুবিমল ধপ করে বিছানায় উঠে বসে। বলে, ‘কালকের পর আর কিছু খাওনি?’ স্বাগতা ঘাড় নাড়ে। সুবিমল তাড়াহুড়ো করে রান্নাঘরে নেমে আসে। যা কিছু পায়, কাঁসার থালায় সাজিয়ে স্বাগতার হাতে দিয়ে বলে, ‘তোমাকে নিয়ে খেতে শিখতে হবে।’
পরদিন সকালবেলা ওর মা যখন কয়লার উনুনে আঁচ দিতে ব্যস্ত, সুবিমল পেছনে দাঁড়িয়ে বলে, ‘আমার বৌয়েরও খিদে পায়, আজকের থেকে ওর জন্যও যেন রান্না হয়।’ সুবিমলের মা চোখের জল মুছে ঝাঁঝের সঙ্গে বলে, ‘এমন মেয়ে আনলি কেন? মেয়ে কি কম পড়েছিল!’ সুবিমল হেসে বলে, ‘সবাই যে বলল ভালো কাজ করেছি, স্বাগতা নাকি লক্ষ্মীমেয়ে! তাছাড়া ও শুধু শ্যামলা, তুমি তো ওর চেয়েও কালো!’ শ্যামলের মা উনুন নিয়ে তাড়াতাড়ি রান্নাঘরে চলে যায়, একসময় রান্নাঘর থেকে চিৎকার করে বলে, ‘আমি কাউকে বসিয়ে খাওয়াতে পারব না। কাজ করে খেতে হবে।’ স্বাগতা স্নান করে সিঁদুর পরে সেই ঘরের এক কোণে দাঁড়িয়ে। সুবিমল ঘরে এসে দ্বিধা নিয়ে বলে, ‘তুমি কি রান্না জানো তাহলে মাকে…’
সংগঠনে এখন জোরকদমের কাজ। সামনে অনেকগুলো কর্মসূচি। এ মাসেই পুলিশের কনভয়ে বোম ফেলতে হবে। সুতরাং, সংগঠন থেকে বের হতে হতে সুবিমলের রাত বারোটা হয়ে যায়। এদিকে শীতের রাত। কনকনে ঠান্ডা। নদীর পাশ দিয়ে হেঁটে আসার সময় হঠাৎই শ্যামলের কথা মনে পড়ে। এসব সময়ে ওরা বাড়ি ফিরত। সেই ছোটবেলার বন্ধুত্ব, হাজার হাজার গল্প, চোখটা ঝাপসা হয়ে আসে। অবশেষে নদীর চরে বসে পড়ে। কিন্তু শ্যামলের বোনটাকে আজও ভালোবাসতে পারেনি। চোখে এখনও মালতীর মুখ। গত মাসে ওর বিয়ে হয়েছে কলকাতার এক বনেদি পরিবারে। দ্বিরাগমনে দেখা। মালতী সেদিন ব্যঙ্গ করে বলেছে, বৌ নাকি খুব কালো। কলকাতায় ফর্সা হবার ক্রিম পাওয়া যায়, তবে অনেক দাম!
৩
এভাবেই বছর চলে গেল। সেদিন দুপুরে সুবিমল ঘরে এসে স্বাগতার চাপা কান্নার আওয়াজে জানতে চাইল, ‘মা কি কিছু বলেছে?’ অনেকক্ষণ চুপ থাকার পর এক সময় স্বাগতা ফুঁপিয়ে উঠল, ‘মা আপনাকে আবার বিয়ে দেবে।’ সুবিমল তাকিয়ে থাকে স্বাগতার অসহায় চাহনির দিকে। তারপর জিজ্ঞেস করে, ‘কী কারণে?’ স্বাগতা চোখের জল মুছতে মুছতে বলে, ‘আমার তো কোনও সন্তান নেই!’ সুবিমল হনহন করে নীচে নেমে আসে মায়ের ঘরে। এদিক-ওদিক কোনও দিক না দেখেই বলে ওঠে, ‘মা, তোমার কি এ বছরই নাতি-নাতনির মুখ দেখতে হবে?’ ঘরে তখন জনাকয়েক বয়স্ক মহিলা পাড়ার নামসংকীর্তনের আলোচনায় ব্যস্ত। ওর কথায় ঘরজুড়ে অসীম নীরবতা নেমে এল। লোকজন চলে যেতেই সুবিমলের মা-ও দুমদাম করে ওপরে উঠে এল— ‘স্বামীর মুখে একটু লাগাম লাগাও, সময় থাকতে তাকে আঁচলে বাঁধো, নইলে আমার মতো কপাল চাপড়াতে হবে।’ সুবিমল তখন ছাদে হাওয়া খাচ্ছিল। স্বাগতা জানে ওর শ্বশুরমশাইয়ের দ্বিতীয় বিয়ের কথা। সুতরাং, একা হাতে সংসার, দুটো ছেলেকে মানুষ করা, এসব কারণেই শ্বাশুড়ি এত কঠিন! কিন্তু স্বাগতা এই কঠিন প্রাণের ভেতরে একটা অন্তঃসলিলা নদীর সন্ধান পেয়েছে। তাই রাত, দুপুর, সন্ধ্যা শ্বাশুড়ির পাশে বসে, জীবনের গল্প শোনে, হাতে হাতে সব কাজ সেরে নেয়। অদ্ভুতভাবে সুবিমলের মা সারাজীবন যে সংসার খুঁজে গেছে স্বাগতার শ্যামলা রূপের আড়ালে কোথাও যেন সেই সংসারেরই হাতছানি। তাছাড়া মাঝের তিন মাস বিছানায় থাকার সময় স্বাগতার এত সেবা-শুশ্রূষা পেয়েছে যে বাঁচার তাগিদটা আজ দ্বিগুণ। আজকাল হলুদ, চন্দন থেকে শুরু করে ফর্সা হবার গাছ, পাতা খুঁজে নিয়ে এসে স্বাগতার মুখে লাগিয়ে দেওয়াটা তার নতুন দায়িত্ব। মালতীর জন্য কেনা বেনারসি, গহনা দিয়ে সেদিন সন্ধ্যায় নিজেই স্বাগতাকে সাজিয়ে নিয়ে রওনা দিলেন বিয়েবাড়ির উদ্দেশে। সুবিমল দোতলার অন্ধকার সিঁড়িতে দাঁড়িয়ে স্বাগতাকে কতবার যে দেখেছিল মনে নেই! হয়তো একটা আত্মসমীক্ষা। সারা জীবনের জন্য যাকে ঘরে নিয়ে এল সে কি সত্যিই ওর জীবনে জায়গা পাবার মতো নয়! ইদানীং স্বাগতা ঘুমিয়ে গেলে পড়ার টেবিল থেকে সুবিমল বিছানার দিকে তাকিয়ে থাকে। স্বাগতার নড়াচড়া, আঁচল সরে যাওয়া বুক, কোমরের ভাঁজ— এ সবের সঙ্গে ও বিপ্লবকে মেলাতে চায়।
নদীর কাছে এসে সুবিমল একটা ডাক শুনতে পায়। যে ডাকে আজকাল ঘুরে তাকায়। স্বাগতা জোরে শ্বাস নিতে নিতে ওর দিকে পুঁটুলি বাঁধা খুচরো পয়সা এগিয়ে দিয়ে বলে, ‘কয়েকদিনের জন্য বাইরে যাচ্ছেন, না খেয়ে থাকবেন না।’ সুবিমল নির্বাকভাবে তাকিয়ে থাকে তন্বী হয়ে ওঠা এই মায়ার দিকে। শ্যামলের রেখে যাওয়া দায়িত্ব ভেবে যাকে ঘরে এনেছিল তার কাছেই যে অমরত্বের খোঁজ সেদিন জানত না। নদীর হাওয়ায় স্বাগতার চুল ওড়ে। আকাশে তখন এক ঝাঁক সাদা বক। যাদের সাদা ডানায় ওড়ার স্বপ্ন। কোথায় যেন এক অদ্ভুত প্রশান্তি। সুবিমল কিছু বলতে চায়। কিন্তু গলাটা ধরে আসে। নিঃশব্দে স্বাগতার গালে হাত রাখে, তারপর অস্ফুটে বলে ওঠে, ‘দেখে থেকো।’ পুরুলিয়ার গভীর জঙ্গলে গুলিটা যখন বুকের ভেতর দিয়ে বেরিয়ে গেল, সুবিমলের ঝাপসা হয়ে ওঠা চোখে তখন স্বাগতার এই মুখটাই ভেসে ওঠে।
মাস ছয়েক বাদের এক সন্ধ্যায় উঠোনে সাদা সুতোর বেড়ি করা বেদিতে প্রদীপ দিয়ে পেছন ঘুরতেই ‘সুবিমল’ বলে চিৎকার করে ওঠে ওর মা। কিন্তু সুবিমল নির্বাকভাবে তাকিয়ে থাকে উঠোনের সাদা সুতোর দিকে! ভেতরে নির্মম হাহাকার। বাড়ির চারিদিকে তাকায় কত ছোট ছোট জামাকাপড়। শরীরটা কেমন অবশ হয়ে আসে, সে কই! একসময় দৌড়ে দোতলার ঘরে আসে। বিছানার কাছে এসে থেমে যায়। ঝাপসা হয়ে ওঠা চোখ বারবার মুছে স্পষ্ট দেখার চেষ্টা করে। আরও ঝুঁকে পড়ে। অবিশ্বাস্যভাবে স্বাগতাকে দেখতে পায়। পাশে ছোট্ট একটা শিশু। পাগলের মতো দুজনের দিকে তাকিয়ে থাকে। ইচ্ছে হয়, ওর ভবঘুরে জীবনের সবটা দিয়ে স্বাগতাকে জড়িয়ে ধরতে। দরজার কাছ থেকে আওয়াজ আসে, ‘বাবা তোমার ঘরে মেয়ে এসেছে। কিন্তু এত দিন কোথায় ছিলে একবারও মনে পড়ল না!’ এতক্ষণে সুবিমলের সংবিৎ ফেরে। বুক দেখিয়ে বলে, ‘গুলি লেগেছিল। হসপিটালে ছিলাম। ছুটি পেতেই চলে এসেছি।’ সুবিমলের মা এগিয়ে এসে বুকে হাত রেখে বলে, ‘এবার এসব ছেড়ে দে বাবা।’ এতক্ষণে মায়ের দিকে তাকায়, কপাল থেকে সিঁদুর মুছে গেছে, পরনে সাদা থান, বিস্ময়ের সঙ্গে বলে, ‘বাবা!’ সুবিমলের মা ছোট্ট করে বলে, ‘শেষ দু’মাস এখানেই ছিলেন, তবে তুমি তাড়াতাড়ি স্নান করে এসো, মেয়ে কোলে নেবে না!’ সুবিমল এক দৌড়ে নীচে এসে ভালো করে সাবান মেখে স্নান করে। ততক্ষণে স্বাগতা জেগে পেয়েছে সুবিমলের ফেরার খবর। সেই থেকে কেঁদেই চলেছে। সুবিমল ঘরে এসে তাড়াতাড়ি ওর বিয়ের পাঞ্জাবি থেকে সোনার বোতাম ছিঁড়ে নিয়ে স্বাগতার সামনে পাগলের মতো হাত বাড়ায়, সোনা দিয়ে মেয়ের মুখ দেখবে। স্বাগতার ভেজা চোখে অব্যক্ত আনন্দ, চোখের জল মুছে মেয়েকে সুবিমলের কোলে দেয়। তেলে-জলে পরিপুষ্ট দু’মাসের মেয়েকে বুকের মধ্যে নিয়ে সুবিমল চোখ বন্ধ করে মনে মনে বলে, ‘শ্যামল, আমি মেয়ের বাবা হয়েছি!’
The publish সংসারের হাতছানি appeared first on Uttarbanga Sambad.