সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটাল ডেস্ক: গয়েশপুরে প্রধান শিক্ষকের নেতৃত্বে কুকুর খুনের ঘটনায় ফুঁসছেন পশুপ্রেমীরা। ঘটনার নিন্দায় গর্জে উঠেছে তসলিমা নাসরিন। অভিযুক্ত শিক্ষকেরা বর্বরতা ছাড়া কিছুই শেখেনি বলেই সোশাল মিডিয়া পোস্টে তোপ দাগেন তিনি। তাঁর আক্ষেপ, আমাদের ছেলেমেয়েদের শেখাবার তেমন বেশি কেউ নেই।
সোশাল মিডিয়ায় তসলিমা লেখেন, “নদিয়ার গয়েশপুর এলাকায় একটি স্কুলের শিক্ষকেরা একটি নিরীহ কুকুরকে পিটিয়ে মেরে ফেলার জন্য ছাত্রদের আদেশ দিয়েছেন। এরপর শিক্ষকদের তত্বাবধানে ছাত্ররা স্কুল চত্বরে পিটিয়ে কুকুরটিকে মেরে ফেলেছে। এতদিন এরা স্কুলে যা শিখেছে অঙ্ক, বিজ্ঞান, ইতিহাস দর্শন, ভদ্রতা, সভ্যতা, নৈতিকতা, উদারতা, মানবতা–সব ধূলিসাৎ হয়ে গিয়েছে সেদিন। এই শিক্ষকরা কোনওদিন কিছু শেখেনি নির্মমতা, নিষ্ঠুরতা আর বর্বরতা ছাড়া। এই শিক্ষকদের নিয়ে আর আশা নেই। শুধু ছাত্ররা যদি নিজেদের অন্যায়কে অনুধাবন করতে পারে। তারা যে অন্যায় করেছে তা তাদের বোঝানোর জন্য ভাল শিক্ষক দরকার। এমন জঘন্য অন্যায় যেন আর কোনওদিন ছাত্ররা না করে, এই শিক্ষাটা দেওয়ার জন্য ভালো শিক্ষক দরকার। আমাদের শেখার ছেলেমেয়ে আছে, শুধু শেখাবার বেশি কেউ নেই।”
মঙ্গলবার সন্ধেয় সোশাল মিডিয়ায় ছড়িয়ে পড়ে একটি ভিডিও। সেখানে দেখা যায়, একটি মাঠে স্কুলের পোশাকে কয়েকজন নাবালক। সঙ্গে ২ -৩ জন ব্যক্তি। একটি সারমেয় মৃতপ্রায় অবস্থায় পড়ে। তাকে লাঠি দিয়ে বেধড়ক মারধর করা হচ্ছে। নির্মম এই ভিডিও দেখে আঁতকে ওঠেন সকলে। রাতেই কল্যাণী থানার দ্বারস্থ হন একদল। অভিযুক্তদের কঠোরতম শাস্তির দাবি জানান সকলে। জানা গিয়েছে, অভিযুক্ত নাবালকেরা কল্যাণীর নেতাজি বিদ্যামন্দির (ফর বয়েজ) স্কুলের ছাত্র। তাদের সঙ্গেই ছিলেন খোদ স্কুলের প্রধানশিক্ষক। একযোগেই সারমেয়র উপর অত্যাচার চালায় সকলে। কিন্তু কেন এই নির্মমতা, তা স্পষ্ট নয়। তবে কারণ যাই হোক, অবলা প্রাণীর উপর এই নারকীয় অত্যাচরে স্তম্ভিত সকলে। পুলিশের তরফে জানানো হয়েছে, বিষয়টা খতিয়ে দেখা হবে। অভিযুক্তরা নির্দিষ্ট আইন মেনে শাস্তি পাবে।
এবিষয়ে অভিযুক্ত প্রধানশিক্ষক বলেন, “ওই সারমেয়টি দীর্ঘদিন ধরে স্কুলের আশেপাশে ঘুরে বেড়াত। কিছুদিন ধরে ওর আচরণ আক্রমণাত্মক হয়ে উঠেছিল। আমরা পুরসভা, প্রশাসন এবং অন্যান্য দপ্তরে জানিয়েও কোন সহযোগিতা পাইনি। মঙ্গলবার একাধিক শিক্ষক ও ছাত্রকে কামড়ে দেয় সারমেয়টি। এরপর আমরা ওকে তাড়ানোর চেষ্টা করি। বিদ্যালয়ের পিছনদিকে তাড়িয়ে দেওয়া হয়। কিন্তু পাশের পাড়ার কিছু লোক ফের বিদ্যালয়ের পাঠিয়ে দেয় ওকে। স্কুলে ঢুকে ফের তাণ্ডব শুরু করে প্রাণীটি। এরপর বিদ্যালয়ের কিছু ছাত্ররা সারমেয়টিকে ফের মেরে বের করে দেওয়ার চেষ্টা করে। তখন পাশের পাড়ার কয়েকজনও মারধর করে। পশু,পাখি বা যে কোন জীবকে বা প্রাণীকে এভাবে মারার পক্ষে আমরা নই।” ঘটনার জন্য ক্ষমাও চেয়ে নেন ওই শিক্ষক।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
নিয়মিত খবরে থাকতে ফলো করুন