সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটাল ডেস্ক: মসনদে বসার আগেই হুঙ্কার দিতে দেখা গিয়েছিল ডোনাল্ড ট্রাম্পকে। আর শপথ নেওয়ার পর সেই কথারই পুনরাবৃত্তি ঘটিয়ে মার্কিন প্রেসিডেন্ট জানিয়েছেন, মার্কিন ডলার ব্যবহার না করলেই ১০০ শতাংশ শুল্কের বোঝা চাপিয়ে দেওয়া হবে ব্রিকস গোষ্ঠীভুক্ত দেশগুলির উপরে। সদস্য দেশগুলির মধ্যে রয়েছে ভারতও। এমনকী তাদের ‘শত্রুভাবাপন্ন দেশ’ বলতেও ছাড়েননি তিনি। এই পরিস্থিতিতে শনিবারের বাজেট ভাষণে ‘আত্মনির্ভর ভারত’-এর কথা শুনিয়ে কার্যত ট্রাম্প ঘোষিত শুল্ক যুদ্ধকেই চ্যালেঞ্জ জানালেন নির্মলা সীতারমণ। তেমনটাই মনে করছে ওয়াকিবহাল মহল।
এদিন বাজেট ভাষণে অর্থমন্ত্রী ১০টি ‘ফোকাস এরিয়া’র কথা বলেছেন। আলাদা করে উল্লেখ করেছেন দরিদ্র, কৃষক, যুবা ও মহিলাদের কথা। কৃষকদের জন্য একটি নতুন প্রকল্পের ঘোষণাও করা হয়েছে। পিএম ধন ধান্য কৃষি যোজনা। উন্নয়নের চারটি ইঞ্জিনের কথা বলতে গিয়ে উল্লেখ করেছেন কৃষি, MSME, বিনিয়োগ ও রপ্তানির কথা। রপ্তানির ক্ষেত্রে ২ হাজার ২৫০ কোটি টাকা বরাদ্দ করা হয়েছে এবারের বাজেটে। এর মধ্যে MSME ছাড়াও অন্যান্য ক্ষেত্রেও রপ্তানির ক্ষেত্রে ছাড়ের কথা বলা হয়েছে। নির্মলা বলেছেন, ”আমরা বাণিজ্য, ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্প ও অর্থমন্ত্রকের যৌথ উদ্যোগে নির্দিষ্ট লক্ষ্যমাত্রা নিয়ে একটি রপ্তানি উন্নয়ন মিশন গঠন করব।” পরিসংখ্যান বলছে বর্তমান অর্থবর্ষের প্রথম ৯ মাসে ৩২১.৩৭ বিলিয়ন ডলার অর্থমূল্যের রপ্তানি করেছে ভারত। যা আগের বছরের প্রথম ৯ মাসের হিসেবের চেয়ে ১.৬ শতাংশ বেশি। এবার রপ্তানির ক্ষেত্রে শুল্ক ছাড়ের কথা বলে রপ্তানিতে আরও জোর দিতে চাইছে মোদি সরকার।
এদিকে ট্রাম্প নিজস্ব সোশাল মিডিয়া ‘ট্রুথ’-এ লিখেছেন, ‘ব্রিকস গোষ্ঠীভুক্ত দেশগুলির ডলার থেকে সরে যাওয়ার বিষয়টিকে স্রেফ নজরে রাখার দিন শেষ। এবার এই আপাতভাবে শত্রুভাবাপন্ন দেশগুলিকে কথা দিতে হবে যে তারা কোনও নতুন ব্রিকস মুদ্রা প্রচলনের চেষ্টা করবে না, কিংবা অন্য কোনও মুদ্রা এনে শক্তিশালী মার্কিন ডলারকে প্রতিস্থাপিত করার চেষ্টা করবে না। অন্যথায় তাদের ১০০ শতাংশ শুল্কের বোঝার মুখে পড়তে হবে। এবং সুন্দর মার্কিন অর্থনীতির সঙ্গে লেনদেনের আশা ছাড়তে হবে।’
প্রসঙ্গত, মার্কিন ডলারই বিশ্ববাণিজ্যে সবচেয়ে বেশি ব্যবহৃত মুদ্রা। কিন্তু বহু দেশই বারবার অভিযোগ করেছে যে বিশ্ব অর্থনীতিতে আমেরিকার ‘দাদাগিরি’তে তারা ক্লান্ত। গত অক্টোবরে রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন আমেরিকাকে কাঠগড়ায় তুলে অভিযোগ জানিয়েছিলেন যে ওয়াশিংটন ডলারকে ‘অস্ত্র’ হিসেবে ব্যবহার করে ‘বড় ভুল’ করছে। তারপর থেকেই ট্রাম্পকে হুঁশিয়ারি দিতে দেখা গিয়েছে এই নিয়ে। এবার মসনদে বসেই চূড়ান্ত আক্রমণাত্মক মেজাজে ট্রাম্প। তারপরই বাজেটে রপ্তানিতে শুল্ক ছাড়ের ঘোষণা তাৎপর্যপূর্ণ বলেই মনে করছে ওয়াকিবহাল মহল।