মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প এককথার মানুষ। যা বলেন, করে ছাড়েন। ট্রাম্পের মন জুগিয়ে চলার আপ্রাণ চেষ্টা করেও লাভ কিছু হল না ভারতের। আগেই ভারতীয় পণ্যের ওপর ২৫ শতাংশ শুল্ক চাপিয়েছিল আমেরিকা। তারপর রাশিয়া থেকে তেল কেনা বন্ধ না করার শাস্তিস্বরূপ জরিমানা ধার্য করল আরও ২৫ শতাংশ। ফলে মোট ৫০ শতাংশ শুল্ক চাপল ভারতীয় পণ্যের ঘাড়ে। ২৭ অগাস্ট চালু হচ্ছে এই নতুন শুল্ক। স্বভাবতই অস্বস্তিতে নয়াদিল্লি।
বিরোধীরা এজন্য প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি চুপ বলে সমালোচনার ঝড় তুলেছে। যদিও জরিমানা ধার্যের পর বিদেশমন্ত্রক এক বিবৃতিতে ট্রাম্পের সিদ্ধান্তকে অযৌক্তিক, অন্যায় বলে তকমা দিয়ে জাতীয় স্বার্থে যা করণীয়, করা হবে বলে মৃদু হুংকার দিয়েছে। ট্রাম্প তাঁর প্রিয় বন্ধু- একথা বহুবার ঢোল পিটিয়ে বলেছেন মোদি। কিন্তু কার্যক্ষেত্রে দেশবাসী সেই সখ্যের প্রমাণ পেলেন না।
কিছুদিন ধরেই পারস্পরিক শুল্ক নিয়ে ভারত-আমেরিকা আলোচনা চলছিল। মার্কিন ভাইস প্রেসিডেন্ট জেডি ভ্যান্সের ভারতে সফরকালীনও শুল্ক নিয়ে দ্বিপাক্ষিক আলোচনা হয়েছিল। পহলগামে জঙ্গি হামলার পর ভারত-পাক সংঘর্ষ তাঁর মধ্যস্থতায় থেমেছে বলে ট্রাম্প ২৯ বার দাবি করলেও মোদির বলার সাহস হয়নি যে, মার্কিন প্রেসিডেন্ট মিথ্যা বলছেন।
ভারতের এই নীরবতা সত্ত্বেও ট্রাম্প কিন্তু অনুগ্রহ করলেন না। প্রথমে চড়া হারে শুল্ক, পরে চড়া হারে জরিমানা ধার্য করলেন। ট্রাম্প নিজে অবশ্য হালে ভারতকে সতর্ক করেছিলেন যে, রাশিয়া থেকে জ্বালানি, যুদ্ধাস্ত্র কেনা নয়াদিল্লি বন্ধ না করলে তার ফল ভুগতে হবে। সেই হুঁশিয়ারি অগ্রাহ্য করে ভারত আগের মতোই মস্কোর সঙ্গে বাণিজ্যিক লেনদেন চালিয়ে যাচ্ছিল। কারণ, রাশিয়া থেকে যেরকম সস্তায় জ্বালানি পায় ভারত, সেটা অন্য কোথাও পাবে না।
কিন্তু ট্রাম্পের ব্যাখ্যা, রাশিয়া সব নিয়মনীতি লঙ্ঘন করে ইউক্রেনের সঙ্গে যুদ্ধ চালিয়ে যাচ্ছে। এই পরিস্থিতিতে রাশিয়ার কাছ থেকে তেল কেনার অর্থ হল, মস্কোর অন্যায় আচরণকে সমর্থন। তারপরও বারবার তাঁর বারণ না শুনে ভারত রাশিয়া থেকে তেল কেনা বন্ধ না করায় শুল্ক ও জরিমানা ধার্য করলেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট।
কয়েক মাস ধরে বিদেশমন্ত্রী এস জয়শংকর, বাণিজ্যমন্ত্রী পীযূষ গোয়েল মার্কিন শুল্কহার ১৫-২০ শতাংশের মধ্যে রাখার জন্য ওয়াশিংটনের কাছে তদ্বিরের ত্রুটি রাখেননি। ভারত ছাড়া একমাত্র ব্রাজিলের ওপরেই ৫০ শতাংশ শুল্ক আছে আমেরিকার। অথচ ব্রিটেনের ক্ষেত্রে সেটা ১০, ইউরোপীয় ইউনিয়ন ও জাপানের ক্ষেত্রে ১৫, বাংলাদেশের ওপর ২০ ও পাকিস্তানের ওপর ১৯ শতাংশ মার্কিন শুল্ক।
মার্কিন সিদ্ধান্তের প্রভাবে আমেরিকায় ভারতীয় পণ্যের দাম নিঃসন্দেহে বাড়বে। ফলে বিক্রি কমবে। দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্যে মার খাবে ভারত। সামগ্রিকভাবে তার প্রভাব পড়বে ভারতীয় অর্থনীতিতে। আমেরিকার থাপ্পড় খাওয়ার অভিজ্ঞতা ভারতের আগেও হয়েছে। অবৈধ ভারতীয় অভিবাসীদের হাতে-পায়ে শিকল বেঁধে ফেরত না পাঠানোর অনুরোধ করেছিল নয়াদিল্লি। সেই অনুরোধ রাখেননি ট্রাম্প। হালে ‘ভারতীয় অর্থনীতি মৃত’ বলে মন্তব্য করে ট্রাম্প চরম অস্বস্তিতে ফেলেছেন নয়াদিল্লিকে।
চিন, ইউরোপীয় ইউনিয়ন কিন্তু রাশিয়া থেকে পণ্য কেনা বন্ধ করেনি। এমনকি আমেরিকাও না। ট্রাম্পের দাদাগিরি শুধু ভারতের ওপর। তিনি শুধু ভারতকে জব্দ করার ফন্দিফিকির করে চলেছেন। আরও কড়া পদক্ষেপের ইঙ্গিত দিচ্ছেন। এতে স্পষ্ট মোদি যতই ‘নমস্তে ট্রাম্প’ কর্মসূচি নিন না কেন, ডোনাল্ড ট্রাম্পের কাছে সেসবের কোনও মূল্য নেই।
তিনি যেন ভারতকে উপহাস ও তাচ্ছিল্য করে চলেছেন। ট্রাম্প যখন পরিষ্কার জানিয়ে দিয়েছেন, রাশিয়া থেকে জ্বালানি কেনা বন্ধ না করলে মার্কিন-ভারত সম্পর্কে জটিলতা থেকে যাবে, তখন আমেরিকার চোখরাঙানিকে উপেক্ষা ছাড়া ভারতের সামনে আর কোনও পথ আছে কি?
The publish শুল্কফাঁসে অসম্মান appeared first on Uttarbanga Sambad.