সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটাল ডেস্ক: শুরুটা হয়েছিল ১৯৬৩ সালে, একটি ছোট রকেটের হাত ধরে। এরপর বহু ঘাত-প্রতিঘাত পেরিয়ে বিশ্ব মহাকাশ গবেষণায় এক উজ্জ্বল নক্ষত্র হয়ে উঠে এসছে ইসরো। সেই লক্ষ্যে এক অনন্য নজির গড়তে চলেছে ভারতের এই মহাকাশ গবেষণা সংস্থা। নাসা-ইসরো সিন্থেটিক অ্যাপারচার রাডার (এনআইএসএআর)-এর পর এবার ভারতের মাটি থেকে ৬,৫০০ কেজি ওজনের মার্কিন স্যাটেলাইট মহাকাশে পাঠাচ্ছে ইসরো। রবিবার এই তথ্য প্রকাশ্যে এনেছেন ইসরো চেয়ারম্যান ভি নারায়ণন। তাৎপর্যপূর্ণ বিষয় হল, ভারত-মার্কিন শুল্কযুদ্ধের মাঝেই এই মিশন দুই দেশের কূটনৈতিক ক্ষেত্রে নতুন আলো দেখাতে পারে বলে মনে করা হচ্ছে।
রবিবার চেন্নাইয়ের কাছে কাত্তানকুলাথুরে এসআরএম ইনস্টিটিউট অফ সায়েন্স অ্যান্ড টেকনোলজির ২১তম সমাবর্তনে উপস্থিত হয়েছিলেন নারায়ণন। সেখানেই তিনি বলেন, “গত ৩০ জুলাই ভারত জিএসএলভি-এফ১৬ রকেটে ‘এনআইএসএআর’ সফলভাবে উৎক্ষেপণ করেছে। এটি ছিল বিশ্বের সবচেয়ে ব্যবহুল উপগ্রহ। যেখানে আমেরিকার এল-ব্যান্ড এসএআর এবং ভারতের এস-ব্যান্ড পেলোড অন্তর্ভুক্ত রয়েছে। এবার আমরা আমাদের রকেট দিয়ে আমেরিকার ৬৫০০ কেজি ওজনের উপগ্রহ মহাকাশে পাঠাব। যা আমাদের কাছে গর্বের বিষয়।”
অতীত স্মরণ করিয়ে ইসরো প্রধান বলেন, “১৯৬৩ সালে যখন ইসরো প্রতিষ্ঠিত হয়, তখন ভারত প্রযুক্তিগতভাবে উন্নত দেশগুলির থেকে ছয়-সাত বছর পিছিয়ে ছিল। ওই বছর আমেরিকা ভারতকে একটি ছোট রকেট দিয়েছিল, যা ইসরোর মহাকাশ কর্মসূচির ভিত্তি স্থাপন করে। ১৯৭৫ সালে আমেরিকা থেকে পাওয়া স্যাটেলাইট ডেটার মাধ্যমে ৬টি রাজ্যের ২,৪০০ গ্রামে টিভি সেট স্থাপন করে ‘গণযোগাযোগ’ প্রদর্শন করা হয়েছিল। তখন আমরা আমেরিকার থেকে রকেট নিয়েছিলাম। আজ আমাদের রকেটে মহাকাশে যাবে মার্কিন স্যাটেলাইট।”
উল্লেখ্য, রাশিয়ার থেকে তেল কেনার অভিযোগে সম্প্রতি ভারতের উপর ৫০ শতাংশ শুল্ক চাপিয়েছে আমেরিকা। এই ঘটনায় উত্তাল দুই দেশের কূটনৈতিক সম্পর্ক। তবে বিজ্ঞানের দুনিয়ায় নাসা ও ইসরোর মধ্যে এখনও কোনও সংঘাত নজরে আসেনি। গত কয়েক বছরে স্যাটেলাইট উৎক্ষেপণের ভারতের উপর আস্থা রেখেছে গোটা বিশ্ব। রিপোর্ট বলছে, গত কয়েক বছরে ইসরোর রকেটে বিশ্বের ৩৪টি দেশের ৪৩৩টি স্যাটেলাইট সাফল্যের সঙ্গে মহাকাশে পাঠানো হয়েছে। এই সাফল্য প্রমাণ করে ভারত এখন শুধু নিজেদের জন্য নয়, বরং বিশ্বের জন্যও একটি নির্ভরযোগ্য মহাকাশ অংশীদার হয়ে উঠেছে। এবার ৬৫০০ কেজি ওজনের মার্কিন উপগ্রহ উৎক্ষেপণ শুল্কের লড়াইকে পিছনে ফেলে দুই দেশের অংশীদারিত্বকে আরও শক্তিশালী করতে পারে বলে মনে করা হচ্ছে।