টিটুন মল্লিক, বাঁকুড়া: শীতের মরশুম শেষের পথে। তার আগে বাঁকুড়ার খাদি মেলায় বাজার মাতাচ্ছে ঝালকাঠির বহুকালের পুরনো ঐতিহ্যের শীতলপাটি। মেলায় আট দিনে এখনও পর্যন্ত লক্ষাধিক টাকার পাটি বিক্রি হয়েছে। এক সময় ছিল যখন গ্রামের বাড়িতে অতিথি এলে তাঁকে শীতলপাটিতেই বসতে দিয়ে জলমিষ্টি হাতে তুলে দেওয়া হত। অতিথির সঙ্গে গেরস্তও এই বিশেষ পাটিতে বসতেন। তবে আজকের প্লাস্টিক ও কাঠের চেয়ার, সোফার যুগে সেই শীতলপাটি বাজার হারিয়েছে। তাছাড়া গ্রীষ্মে এখন অনেক বাড়িতেই শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত যন্ত্রের জন্য এই পাটির সেদিন গিয়েছে। তাই শীতলপাটি দিয়ে জুতো, টুপি, ব্যাগের মতো নানা সামগ্রী তৈরি করে সুদিন ফেরানোর আশায় লড়াই চালাচ্ছেন বাংলার এই বিশেষ শিল্পের দক্ষ কারিগররা।
গরমের হাত থেকে বাঁচতে এসি মেশিন চলে আসার পর থেকেই শীতল পাটিতে মন্দার দিন শুরু। তবে আজও গরম আসতেই চাহিদা দেখা যায় এই বিশেষ পাটির। বর্তমানে চাহিদার ধরনের সঙ্গে ঝালকাঠির তৈরির উপকরণগুলিও বদলেছে। আর তাই পাটির সঙ্গে তৈরি হচ্ছে ব্যাগ, জুতো, ফাইল, টুপি-সহ ঘর সাজানোর হরেক উপকরণ। তাই ঘর সাজানোর বিভিন্ন উপকরণে ভর করে ঘুরে দাঁড়াতে চাইছে বাংলার এই কুটির শিল্প।
চলতি ফেব্রুয়ারির ৪ তারিখ থেকে বাঁকুড়া কুড়া শহরের জেলা পরিষদের অডিটোরিয়াম সংলগ্ন মাঠে শুরু হওয়া খাদি মেলায় বাজার মাতাচ্ছে বাংলার এই প্রাচীন শীতলপাটি। শীতলপাটির এই সম্ভার নিয়ে কোচবিহার থেকে এই মেলায় এসেছেন শিল্পী সুনীল দে। সুনীলবাবু বলছেন, “অন্যান্য বছরের তুলনায় এবছর বাঁকুড়ায় শীতলপাটির বিক্রি ভালো। শীতলপাটির সিঙ্গল মাদুরের দাম ৭৫০-৮০০ টাকা। ডাবল মাদুরের দাম ১৮০০- ২০০০ টাকা। ব্যাগের দাম ১৫০-৭০০ টাকা।”
কিন্তু রাঙামাটির এই বাঁকুড়া জেলায় কোচবিহারের এই শিল্পকর্ম বিক্রি হচ্ছে কেমন? এই প্রশ্নের উত্তরে সুনীলবাবু বলেন, “প্রতিদিন গড়ে ১০- ১৫ হাজার টাকার পাটি বিক্রি হচ্ছে মেলায়।” শুধু মাত্র শীতলপাটি নয়, এই মেলায় বিক্রি হচ্ছে পিওর সিল্ক, ঘিচা, তসর, সুতির তৈরি শাড়ি, সালোয়ার কামিজ, কুর্তি আরও কত কী। এছাড়া মেলায় বিক্রি হচ্ছে হাতে তৈরি হরেক অলংকার। সোনা-রুপার অগ্নিমূল্যের বাজারে কৃত্রিম এই অলঙ্কার দিয়েই দুধের সাধ ঘোলে মেটাচ্ছেন অনেকে। আর হবে নাই বা কেন? কলেজ পড়ুয়া চয়নিকা বন্দোপাধ্যায়, শ্রুতি কুণ্ডুরা বাঁকুড়ার খাদি মেলায় দলবেঁধে ডিজাইন অলঙ্কারের স্টলে কেনাকাটা করছিলেন।
চয়নিকা বললেন, “হাতে তৈরি এই অলঙ্কার এখন ট্রেন্ড তৈরি করেছে। এই উন্মাদনা দেখে পশ্চিম মেদিনীপুরের সবং থেকে মাদুরের সম্ভার নিয়ে আগত মাদুর শিল্পী চন্দন মুলা বলছেন বাঁকুড়ায় হস্তশিল্পের চাহিদা রয়েছে বেশ ভালোই। খাদির সার্কেল ইন্সপেক্টর বসুদেব কুন্ডু জানাচ্ছেন, গত ৬ দিনে এই মেলায় ১কোটি ৪ লক্ষ ৫৮ হাজার টাকার হস্তশিল্প বিক্রি হয়েছে।