‘শিশমহল’, মদ কেলেঙ্কারি থেকে ভোট কাটাকাটি! কেন যমুনায় ‘সলিল সমাধি’ আম আদমির?

‘শিশমহল’, মদ কেলেঙ্কারি থেকে ভোট কাটাকাটি! কেন যমুনায় ‘সলিল সমাধি’ আম আদমির?

রাজ্য/STATE
Spread the love


সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটাল ডেস্ক: দিল্লিতে পরাজিত আম আদমি পার্টি। হারলেন খোদ অরবিন্দ কেজরিওয়াল। ২৭ বছর বাদে রাজধানীতে গেরুয়া নিশান ওড়াল বিজেপি। বলা ভালো, অবশেষে ভারতের ‘দিল’ জিতলেন নরেন্দ্র মোদি। কিন্তু কোন ফ্যাক্টরে? কেন হারতে হল অরবিন্দ কেজরিওয়ালকে। দেখে নেওয়া যাক সম্ভাব্য কারণগুলি।

১। আবগারি দুর্নীতি: এখনও কোনও দুর্নীতি প্রমাণিত হয়নি। প্রায় সব অভিযুক্তই জামিনে মুক্ত। আদৌ প্রমাণিত হবে কিনা সংশয় রয়েছে। কিন্তু দিল্লিতে আপের হারে বিরাট ফ্যাক্টর আবগারি দুর্নীতির অভিযোগ। কারণ এই দুর্নীতির অভিযোগে মাস ছয়েক জেলে থেকেছেন খোদ অরবিন্দ কেজরিওয়াল, মণীশ সিসোদিয়া থেকে সত্যেন্দ্র জৈনের মতো একের পর এক হেভিওয়েট নেতা। একটা দীর্ঘ সময় দিল্লির প্রায় অধিকাংশ প্রভাবশালী মন্ত্রী একসঙ্গে জেলে ছিলেন। যার প্রভাব পড়েছে প্রশাসনেও। প্রশাসনের বিভিন্ন স্তরে অরাজকতা, দায়িত্বজ্ঞানহীনতা চোখে পড়েছে। পরে জেল থেকে বেরলেও দুর্নীতির দাগ পুরোপুরি মুছতে পারেননি কেজরি। বরং ধুয়েমুছে গিয়েছে তাঁর স্বচ্ছ্ব দুর্নীতিমুক্ত ভাবমূর্তি। আর সেটাই এতদিন ছিল কেজরিওয়ালের মূল ইউএসপি।

২। শিশ মহল: ২০১৩ সালে দিল্লিতে অরবিন্দ কেজরিওয়াল ক্ষমতায় এসেছিলেন শীলা দীক্ষিত জমানার দুর্নীতির বিরোধিতা করে। দুর্নীতি বিরোধী স্বচ্ছ্ব ভাবমূর্তি, আমআদমির মতো জীবনযাপন, এই ছিল কেজরির ইউএসপি। কিন্তু গত ১২ বছরে সেই ভাবমূর্তি বদলে গিয়েছে। ২০১৩ সালে অরবিন্দ কেজরিওয়াল ছিলেন সত্যিকারের আমআদমি। দিল্লির নিম্ন মধ্যবিত্ত এবং মধ্যবিত্তরা তাঁকে নিজেদের প্রতিনিধি মনে করতেন। কিন্তু ২০২২ সালে তিনি দিল্লির মুখ্যমন্ত্রীর ঝাঁ চকচকে বাসভবনে গিয়ে উঠতেই ভেঙে চুরমার হয়ে যায় কেজরিওয়ালের সেই ভাবমূর্তি। বিজেপি প্রায় ৩৫ কোটি টাকা ব্যয়ে তৈরি হওয়া মুখ্যমন্ত্রী আবাসকে ‘শিশ মহল’ হিসাবে দেগে দেয়। এবারের ভোটপ্রচারে এই ‘শিশমহলের’ প্রচার বেশ জনপ্রিয়তা পেয়েছিল। বিজেপিতে তো বটেই কংগ্রেসও শিশমহল নিয়ে বারবার আক্রমণ করেছে আপকে। যার কোনও জবাব আপ দিতে পারেনি।

৩। প্রতিষ্ঠান বিরোধিতা: দিল্লিতে অরবিন্দ কেজরিওয়ালকে এ বছর লড়তে হয়েছে ১০ বছর প্রতিষ্ঠান বিরোধিতাকে সঙ্গী করে। ক্ষমতায় আসার পর ১২ বছরে কিছু কিছু প্রতিশ্রুতি পূরণ করলেও বহু কাজ বাকি রয়ে গিয়েছে। দিল্লির মতো রাজ্যে শুধু খয়রাতির উপর ভরসা করে কেজরিওয়াল ভোটে জয়ের আশায় ছিলেন। কিন্তু দেশের রাজধানীতে ভোটে জিততে হলে রাস্তাঘাট, পরিকাঠামোগত উন্নয়ন দরকার, সর্বস্তরের মানুষের কাছে উন্নয়নের আলো পৌঁছে দেওয়া দরকার, সেটা বোধ হয় ভুলে গিয়েছিলেন তিনি। দিল্লির বহু প্রান্তে রাস্তাঘাটের বেহাল দশা, নর্দমায় জল জমা, অপরিচ্ছন্ন আবর্জনার স্তুপ মাথাচাড়া দিচ্ছিল। এমনকী কেজরির গর্বের সরকারি স্কুল, মহল্লা ক্লিনিকেরও বেহাল দশা। তাছাড়া স্থানীয় বিধায়কদের বিরুদ্ধেও দীর্ঘদিন ধরে ক্ষোভ পুঞ্জীভূত হচ্ছিল।

৪। ভোট কাটাকাটি: দিল্লির ফলাফলে দেখা যাচ্ছে আপ এবং কংগ্রেসের মধ্যে ভোটের পার্থক্য কমবেশি ৩ শতাংশ। আর দিল্লিতে কংগ্রেস ভোট পেয়েছে প্রায় ৬ শতাংশ। আগের বার হাত শিবির ভোট পেয়েছিল ৪ শতাংশের কাছাকাছি। এবার দলের হেভিওয়েটদের আসরে নামিয়ে কেজরির বিরুদ্ধে জোরালো প্রচার করে কংগ্রেস প্রায় আড়াই তিন শতাংশ ভোট বাড়িয়েছে। দিনের শেষে সেটাই ফ্যাক্টর হয়ে দাঁড়াল। কংগ্রেস অবশ্য ‘ভোট কাটুয়া’ হতে পেরেই খুশি। 

৫। যমুনা এবং দূষণ: দিল্লিতে ভোটের ঠিক আগে আগে সবচেয়ে বড় ইস্যু হয়ে দাঁড়িয়েছিল যমুনার দূষণ। কেজরির বিরুদ্ধে অভিযোগ দিল্লিবাসীকে স্বচ্ছ্ব পানীয় জলটুকুও দিতে পারেননি তিনি। সেই অভিযোগ খানিক ঘুরিয়ে স্বীকারও করে নেন আপ সুপ্রিমো। এছাড়া প্রতিবছর শীতকাল এলেই দিল্লির বাতাসে যেন বিষ ছড়িয়ে পড়ে। টানা ১০ বছর ক্ষমতায় থেকেও এ সমস্যার কোনও সমাধান কেজরিওয়াল করতে পারেননি। যার ফলে দিল্লির মধ্যবিত্তরা খাপ্পা ছিলেন। এই মধ্যবিত্তদের ভোটই শেষে ফ্যাক্টর হয়ে গেল।

এর বাইরে কেন্দ্রীয় বাজেটে মধ্যবিত্তদের জন্য করছাড়ের ঘোষণা, জাতিগত সমীকরণের মাধ্যমে প্রার্থী বাছাই, এবং কেজরিওয়ালের অতি আত্মবিশ্বাস সবই ফ্যাক্টর হয়েছে দিল্লি নির্বাচনে।



Source link

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *