সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটাল ডেস্ক: শেখ হাসিনাহীন বাংলাদেশের কূটনৈতিক চিত্র আমূল বদলে গিয়েছে। যে দেশ এক সময়ে ‘ভারতবন্ধু’ ছিল তারাই চিন, পাকিস্তানকে কাছে টানছে। বেজিংয়ের সঙ্গে হাত মিলিয়ে উত্তর-পূর্ব ভারত (সেভেন সিস্টার) ভেঙে ফেলার আকাশকুসুম স্বপ্ন দেখছে ঢাকা। উত্তর-পূর্বের ৭ রাজ্যের সঙ্গে গোটা ভারতের সংযোগ করে ‘চিকেন নেক’ বা শিলিগুড়ি করিডর। এবার ভৌগোলিক দিক দিয়ে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ এই অঞ্চলের কাছাকাছিই বাংলাদেশ সীমান্তে বায়ুসেনা ঘাঁটি তৈরির পরিকল্পনা করছে মহম্মদ ইউনুসের সরকার। এমনকী চিনের আধিকারিকরা এসে জায়গাটি পরিদর্শনও করে গিয়েছে। সূত্রের খবর এমনই।
হাসিনা সরকারের পতনের পর থেকে বাংলাদেশে আনাগোনা বেড়েছে চিনা আধিকারিকদের। বিএনপি, জামাত-সহ বিভিন্ন দলের পাশাপাশি প্রধান উপদেষ্টা ইউনুসের সঙ্গেও বিভিন্ন সময়ে বৈঠক করেছেন তাঁরা। পহেলগাঁও হামলা ও অপারেশন সিঁদুর নিয়ে ভারত-পাকিস্তানের মধ্যে যুদ্ধ পরিস্থিতি তৈরি হয়েছিল। এই সুযোগকে কাজে লাগিয়ে ঘোলা জলে মাছ ধরতে নেমে পড়েছে চিন-বাংলাদেশ। জানা গিয়েছে, সীমান্তবর্তী রংপুরের লালমনিরহাট জেলায় বেজিংয়ের সহায়তায় বায়ুসেনাঘাঁটি তৈরি করতে চাইছে ঢাকা। তাৎপর্যপূর্ণ ভাবে এই রংপুর ভারতীয় সীমান্ত থেকে মাত্র ২০ কিলোমিটার দূরে।
সূত্রের খবর, ভারতের গোয়েন্দা সংস্থাগুলোর কাছেও এই বায়ুসেনা ঘাঁটি নির্মাণের খবর এসেছে। গোটা পরিস্থিতির উপর তীক্ষ্ণ নজর রাখা হচ্ছে। এক প্রতিরক্ষা আধিকারিক জানিয়েছেন, “সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হল এই বায়ুসেনা ঘাঁটি চিন আর পাকিস্তানকে ব্যবহার করতে দেয় কি না বাংলাদেশ। আমরা এখন এটাই নজরে রাখছি। বাংলাদেশের সম্পূর্ণ অধিকার রয়েছে নিজেদের বায়ুসেনা ঘাঁটির সম্প্রসারণ ঘটানো। কিন্তু সেটা কখনই ভারতের বিরুদ্ধে ব্যবহার করা উচিত নয়।” সমর বিশ্লেষকরা বলছেন, এই বায়ুসেনা ঘাঁটি নির্মাণ হলে বাংলাদেশের আড়ালে সেখান থেকে ভারতীয় সেনার গতিবিধি নজরে রাখবে চিন।
কেন এতটা গুরুত্বপূর্ণ চিকেন নেক? এই এলাকা ‘শিলিগুড়ি করিডর’ নামেও পরিচিত। শিলিগুড়ি শহরে অবস্থিত এই করিডর ভূকৌশলগত দিক দিয়ে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। সবচেয়ে সংকীর্ণ অংশে এটির প্রস্থ প্রায় ২০ কিলোমিটার। নেপাল, ভুটান ও বাংলাদেশ এই তিন দেশের সঙ্গে সীমান্ত ভাগ করে নিয়েছে শিলিগুড়ি করিডর। ভারতের মূল ভূখণ্ডের সঙ্গে উত্তর-পূর্বের সাতটি রাজ্যকে বেঁধে রেখেছে এই সংকীর্ণ স্থলভাগ। যার তুলনা করা চলে মুরগির গলার সঙ্গে।
সমরশাস্ত্রের সূত্র মেনে ভারতের মতো মহাশক্তিধর দেশকে দুর্বল করতে এই শিলিগুড়ি করিডরকেই পাখির চোখ করেছে বিভিন্ন জঙ্গি সংগঠন। তিনটি দেশের সীমান্ত এক জায়গায় মেশায় এই পথেই অস্ত্রশস্ত্র, মাদক ও জাল নোট ভারতে পাচার করার ছক কষেছে জেহাদিরা। পাশাপাশি সীমান্তের ছিদ্রপথে সন্ত্রাসবাদীদের এদেশে প্রবেশের রাস্তা তৈরি করারও পরিকল্পনা রয়েছে তাদের। এই চিকেন নেক টার্গেট পাকিস্তানেরও। এই অঞ্চলকে ভারতের থেকে আলাদা করে দিতে চায় চিনও। বিশ্লেষকরা বলছেন, যুদ্ধ লাগলে চিনের সঙ্গে হাত মিলিয়ে এই গুরুত্বপূর্ণ চিকেন নেককে নিশানা করতে পারে পাকিস্তান। সঙ্গী হতে পারে ‘নতুন’ বাংলাদেশও। কিন্তু সব রকমভাবে প্রস্তুত ভারতও। উত্তরবঙ্গের ওদলাবাড়ির সাওগাঁ বস্তির অদূরে অবস্থিত তিস্তা ফিল্ড ফায়ারিং রেঞ্জে ৩ দিন ধরে যুদ্ধের এই মহরা চলেছে। মহড়া শেষে একটি প্রেস বিজ্ঞপ্তি দেয় ভারতীয় সেনা। ইস্টার্ন কমান্ডের তরফে জানানো হয়, যে কোনও যুদ্ধ পরিস্থিতি মোকাবিলায় ভারতীয় সেনা একশো শতাংশ প্রস্তুত।