শিক্ষক নেতার হোটেলে ‘দেহব্যবসা’

শিক্ষক নেতার হোটেলে ‘দেহব্যবসা’

শিক্ষা
Spread the love


রণজিৎ ঘোষ, শিলিগুড়ি: পেশায় তিনি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের একজন শিক্ষক। শাসকদলের শিক্ষক নেতা হিসাবে নিজেকে জাহির করেন। কিন্তু বিভিন্ন বেআইনি কারবারই তাঁর মূল ব্যবসা। দেহব্যবসা চালানো থেকে বেআইনিভাবে মদ বিক্রি, সবেতেই তিনি সিদ্ধহস্ত বলে অভিযোগ। তিনি খড়িবাড়ির পানিট্যাঙ্কির এশিয়ান হাইওয়ে পার্শ্বস্থ একটি হোটেল কাম রেস্টুরেন্টের মালিক।

তাঁর হোটেলেই দিনরাত দেহব্যবসা এবং মাদকের আসর বসছে বলে অভিযোগ। অভিযোগ, শাসকদলের নেতার তকমা থাকায় প্রশাসন সারা বছর হাত গুটিয়ে থাকে। তাঁর হোটেলে ঘর ভাড়া নিয়ে এক তরুণীকে ধর্ষণের ঘটনার পরেও পুলিশ হোটেল মালিককে গ্রেপ্তার না করায় এই অভিযোগ উঠছে।

জেলা পুলিশের এক কর্তা অবশ্য বলেছেন, ‘ঘটনার তদন্ত চলছে। যে ঘরে ওই তরুণীকে নিয়ে ধর্ষণ করার অভিযোগ, সেই ঘরটি সিল করে দেওয়া হয়েছে।’ স্থানীয়রা বলছেন, বহুবছর ধরেই এই হোটেলে বিভিন্ন অনৈতিক কাজকর্ম চলছে। কয়েক বছর আগে পুলিশ অভিযুক্ত হোটেল মালিককে গ্রেপ্তার করেছিল। কিন্তু কিছুদিন পর থেকেই আবার সেই কারবার রমরমিয়ে চলছে। পশ্চিমবঙ্গ তৃণমূল প্রাথমিক শিক্ষক সমিতির দার্জিলিং জেলা সভানেত্রী অবর্ণা দাস দত্ত বলছেন, ‘পানিট্যাঙ্কির ঘটনাটা আমি কিছুটা শুনেছি। শিক্ষক নেতা বলে কেউ নিজেকে জাহির করলে হবে না। কেউ যদি কোনও অপকর্ম করে থাকে তাহলে তার দায় তাকেই নিতে হবে।’

পানিট্যাঙ্কিতে এশিয়ান হাইওয়ের (২) উড়ালপুলের পাশে বহু বছর ধরে একটি হোটেল কাম রেস্টুরেন্ট চলছে। সেখানে বেশ কিছু বিলাসবহুল ঘরও রয়েছে। যেগুলি প্রচুর টাকায় ভাড়া দেওয়া হয়। এই ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠানটি নিয়ে দীর্ঘদিন ধরেই প্রচুর অভিযোগ রয়েছে। সামনে হোটেল এবং রেস্টুরেন্টের লেবেল সাঁটা থাকলেও বাস্তবে এখানে দেহব্যবসা এবং বারের লাইসেন্স ছাড়াই মদ বিক্রি হয় বলে অভিযোগ। অভিযোগ, বিলাসবহুল ঘরগুলি ঘণ্টার ভিত্তিতে দেহব্যবসার জন্য ভাড়া দেন হোটেল মালিক। এখানে অনেক ভিভিআইপি যেমন আসেন, তেমনই শনি-রবিবার ও ছুটির দিনগুলিতে শিলিগুড়ি, বাগডোগরা, ইসলামপুর সহ বিভিন্ন এলাকার পাশাপাশি বিহার থেকেও বহু মানুষ ফুর্তি করতে আসেন।

এখানেই গত শুক্রবার এক তরুণীকে ধর্ষণের অভিযোগ রয়েছে এক এসএসবি জওয়ানের বিরুদ্ধে। সূত্রের খবর, এসএসবির একাধিক জওয়ান ওই হোটেলে নিয়মিত ফুর্তি করতে যান। কোনওভাবে শুক্রবারের ঘটনায় নির্যাতিতা তরুণী পুরো ঘটনা ফাঁস করে দেওয়ায় ওই জওয়ান গ্রেপ্তার হয়েছেন। অভিযোগ, হোটেল কাম রেস্টুরেন্টটিতে দেহব্যবসার কারবার চালানোর জন্য বিভিন্ন এলাকা থেকে মহিলাদের নিয়ে আসা হয়। ২০১৫ সালে একবার পুলিশ হোটেলটিতে হানা দিয়ে একাধিক তরুণ-তরুণীকে আটক করেছিল। সেই সময় ওই হোটেলের মালিককেও গ্রেপ্তার করা হয়। কিন্তু ছাড়া পেয়ে যান। অভিযুক্ত হোটেল মালিক আবার প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক। একদা তৃণমূল কংগ্রেসের যুব সংগঠনের নেতা ছিলেন। এখন নিজেকে তৃণমূলের শিক্ষক সংগঠনের নেতা বলে জাহির করেন। আর সেই সুবাদেই তিনি পুলিশ প্রশাসনের হাত থেকে সবসময় ছাড় পেয়ে গিয়েছেন।

তৃণমূলের খড়িবাড়ি ব্লক সভাপতি কিশোরীমোহন সিংহ বলছেন, ‘তৃণমূলের নেতা হোক বা না হোক, অন্যায়কারীর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতেই হবে। আমরা পুলিশকে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপের জন্য বলেছি।’ এদিকে, হোটেল মালিক ও প্রাথমিক শিক্ষক বিরাজ রায়ের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি প্রশ্ন শোনার পরেই টেলিফোনের সংযোগ বিচ্ছিন্ন করেন। পরবর্তীতে টেলিফোনে তাঁকে আর ফোনে পাওয়া যায়নি। ফলে তাঁর প্রতিক্রিয়া মেলেনি।



Source link

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *