শাড়ি-পাঞ্জাবির রং মেলান্তি

শাড়ি-পাঞ্জাবির রং মেলান্তি

ব্যবসা-বাণিজ্যের /BUSINESS
Spread the love


শিবশংকর সূত্রধর

কাঙ্ক্ষিত সেই সময় দাঁড়িয়ে দুয়ারে। ‘বাঙালির ভ্যালেন্টাইন্স ডে’। নামকরণ কে করেছিলেন, জানে না কেউ। কিন্তু উৎসাহ-উদ্দীপনায় গা ভাসাতে তৈরি সবাই। পছন্দের শাড়ি ধোয়া-ইস্ত্রির পর সযত্নে রাখা আলমারির প্রথম সারিতে, যাতে সেদিন সকালে খুঁজে পেতে ঝক্কি পোহাতে না হয়। কেউ সরাসরি, কেউ বা ঘুরিয়ে প্রিয় মানুষকে নিজের শাড়ির রং বলে দিয়েছে, যেন ম্যাচিং করে পাঞ্জাবিটা পরে সে আসে। কিন্তু… হাঁদারাম বুঝবে তো রং মেলান্তির অঙ্ক।

সরস্বতীপুজো মানে প্রেমিকা বা ক্রাশকে শাড়িতে দেখে জ্ঞান হারানোর উপক্রম। সরস্বতীপুজো মানে নিমন্ত্রণের অছিলায় গার্লস স্কুলে ঢোকার অনুমতি। সরস্বতীপুজো মানে অঞ্জলির ফাঁকে তাঁর দিকে ফুল ছুড়ে দেওয়া। সারাবছর বইয়ে মুখ গুঁজে রাখা ফার্স্ট বেঞ্চাররাও বাগদেবীর পুজোর দিন পাতা ওলটায় না। কারণ বড়রা বলে দেবীর নাকি সেটা পছন্দ নয়। দিন কাটে দেদার আড্ডা, খাওয়াদাওয়া, ঘোরাফেরা আর প্রেমে। তবে ‘সদা সিঙ্গল’-দের ভরসা বন্ধুরাই।

অনেকদিন আগে থেকে এসবের প্ল্যানিং চলে। এ ব্যাপারে কথা হচ্ছিল কোচবিহারের এবিএন শীল কলেজের পড়ুয়া ঋক চক্রবর্তীর সঙ্গে। কলেজের এক সহপাঠীকে সে মন দিয়ে ফেলেছে। প্রেমে হাবুডুবু খাচ্ছে দুজনেই। বলল, ‘আমাদের এবারই প্রথম সরস্বতীপুজো। তাঁকে প্রথমবার শাড়িতে দেখার এক্সাইটমেন্ট বলে বোঝাতে পারব না। কিন্তু এই অপেক্ষা যেন শেষ হতে চাইছে না।’

পুজোর অন্তত ১০-১২ দিন আগে থেকে স্কুল-কলেজে প্রস্তুতি শুরু হয়ে যায়। সাধারণত পড়ুয়ারাই অন্য স্কুল বা কলেজে গিয়ে তাদের প্রতিষ্ঠানের হয়ে নিমন্ত্রণ জানিয়ে আসে। সেই দায়িত্ব কে নেবে, তা নিয়ে নাকি রীতিমতো কাড়াকাড়ি লেগে যায়!
কিন্তু কেন? দিনহাটার এক বয়েজ স্কুলের ছাত্র খুলল সেই রহস্যের জট, ‘এই একটা সময় গার্লস স্কুলের সীমানা পেরোতে পারি। নিমন্ত্রণের কার্ড হাতে নেওয়া মানে অনুমতিপত্র সঙ্গে থাকা। ওদের স্কুলে ঢোকার সময় বেশ একটা হিরো হিরো ভাব আসে।’ এই কথা শুনে পাশে দাঁড়ানো ওর বন্ধুরা হো হো করে হেসে উঠল।

তবে শুধু ‘নিজেদের স্বার্থে’ নয়। অনেক পড়ুয়াই স্বেচ্ছায় কাঁধে তুলে নেয় সব দায়িত্ব। তেমন একজন জলপাইগুড়ির প্রসন্নদেব মহিলা মহাবিদ্যালয়ের দেবশ্রী কার্জি। তাঁর কথায়, ‘পুজোতে আমরা গোটা কলেজ সুন্দরভাবে সাজিয়ে তুলি। পুজোর বাজার থেকে আলপনা আঁকা- সবকিছুই করতে হয়।’ শুধু কি তাই! নাচতে নাচতে প্রতিমা আনা, পুজোর সকালে জোগাড়, তারপর সবাইকে প্রসাদ দেওয়া। পুজো শেষে অবশ্য নিজেকে সময় দেয় দেবশ্রীর মতো দায়িত্ববানরা। বন্ধুদের সঙ্গে আড্ডা, রিলস বানানো- সব চলে সমানভাবে।

সরস্বতীপুজোয় কোন শাড়িতে সেরা লুক আসবে, তা নিয়ে রীতিমতো গবেষণা চলে। শিলিগুড়ির সূর্য সেন মহাবিদ্যালয়ের ছাত্রী সবিতা রায়ের ব্যাখ্যায়, ‘সরস্বতীপুজো মানেই শাড়ি। প্রতিবার সেটাই পরি। সঙ্গে মানানসই সাজ। এবারেও দারুণ মজা হবে পুজোয়।’

তিথি অনুযায়ী এবছর সরস্বতীপুজো দু’দিন। ২ আর ৩ ফেব্রুয়ারি। কে কোনদিন ঘুরতে বের হবে, প্ল্যানিংয়ের গুরুত্বপূর্ণ পার্ট সেটা। আলিপুরদুয়ার বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র মিলন মাহাতো জানাল, সে কবে ঘুরতে বের হবে, এখনও ঠিক করে উঠতে পারেনি। তবে গার্লফ্রেন্ড স্পষ্ট জানিয়ে দিয়েছে, কোনও একদিন দুপুর শুধু তাঁর জন্য বরাদ্দ করতে হবে। অন্তত তিন ঘণ্টা সময় তো লাগবেই ঘুরতে।

কলেজ লাইফে যতই স্বাধীনতা বা পুজোতে আড়ম্বর থাকুক না কেন, স্কুলজীবনের পুজো প্রত্যেকের কাছে ‘স্পেশাল’। তাই অনেকে কলেজ বা বিশ্ববিদ্যালয়ের গণ্ডিতে পা রাখলেও ছেড়ে আসা ক্যাম্পাসে অন্তত একবার হলেও পা রাখে। ‘স্কুলজীবনে যে আনন্দ আর উত্তেজনা ছিল, তা ফের অনুভব করতে পারি। নস্টালজিয়ার গন্ধ মেখে সেই দিনগুলোকে আবার একটু ছুঁয়ে দেখার সুযোগ পাই। পুরোনো বন্ধুদের সঙ্গে দেখা হলে মন খুলে হাসি। সেজন্যই তো প্রতিবারের মতো এবারও পুজোয় স্কুলে যাব’, বলল জলপাইগুড়ির আনন্দচন্দ্র কলেজ অফ কমার্সের ছাত্র অভিনয় মাহাতো।

লোকে বলে, কলেজে উঠলে নাকি ‘একজোড়া ডানা গজায়।’ সেই কলেজজীবনের প্রথম পুজো একটু বিশেষ তো হবেই। আলিপুরদুয়ার মহিলা কলেজের পড়ুয়া রেশমি ভৌমিকের এবার প্রথম পুজো। জানাল, সকালেই সে কলেজে যাবে। সবাই মিলে আড্ডা দেবে।  আর বাকিটা কী লুকিয়ে গেল তরুণী? হয়তো। মনের কথা জানা কি অত সহজ!

সামনে মাধ্যমিক, উচ্চমাধ্যমিক। তাই ওই পরীক্ষার্থীদের পুজোর আনন্দে ভাটা পড়েছে। সেই দলে শিলিগুড়ির জ্যোৎস্নাময়ী গার্লস হাইস্কুলের মাধ্যমিক পরীক্ষার্থী দেবস্মিতা বৈদ্য।
-কী করবে সারাদিন
-সামনে মাধ্যমিক। তাই ঘোরাঘুরি অনেকটা কম হবে। বন্ধুদের সঙ্গে আড্ডা এবছর আর হল না। তবে ঠাকুরের আশীর্বাদ নিতে স্কুলে যাব।
(তথ্য সহায়তা : তমালিকা দে, অভিজিৎ ঘোষ ও অনিক চৌধুরী)



Source link

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *