লন্ডনে নজর ঢাকার

লন্ডনে নজর ঢাকার

ব্লগ/BLOG
Spread the love


অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা মুহাম্মদ ইউনূসের আগামী এপ্রিলে বাংলাদেশে নির্বাচন হবে বলে ঘোষণার পরেও জট কাটল না। বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতাদের তৈরি নতুন দল ন্যাশনাল নাগরিক পার্টি (এনসিপি) এবং জামায়াতে ইসলামি ইউনূসের প্রস্তাবকে স্বাগত জানালেও বিএনপি, জাতীয় পার্টি ও বাংলাদেশ কমিউনিস্ট পার্টি তীব্র বিরোধিতা করছে। ইউনূস বর্তমানে লন্ডন সফরে।

খালেদা জিয়ার পুত্র তথা বিএনপি’র ভারপ্রাপ্ত চেয়ারপার্সন তারেক রহমানের সঙ্গে শুক্রবার ভারতীয় সময় দুপুর নাগাদ লন্ডনের একটি হোটেলে তাঁর বৈঠক হওয়ার জোরালো সম্ভাবনা আছে। ইউনূসের অফিস থেকে এই বৈঠক নিয়ে কিছু বলা না হলেও তারেক সম্ভাব্য আলোচনার কথা ঢাকায় গুলশানের বিএনপি অফিসে জানিয়েছেন। খালেদার দল এই আলোচনার সম্ভাবনা নিয়ে যথেষ্ট আশাবাদী।

বিএনপি নেতৃত্ব প্রথম থেকেই চলতি বছরের ডিসেম্বরের মধ্যে সংসদের নির্বাচন চেয়ে আসছে। কিন্তু ইউনূস বরাবর আগামী বছরের জুনে ভোট করানোর পক্ষপাতী ছিলেন। সম্প্রতি রাজনৈতিক চাপের মুখে তিনি জানিয়েছেন, আগামী এপ্রিলের গোড়ায় দেশে নির্বাচন হবে। আওয়ামী লিগকে ইতিমধ্যেই নিষিদ্ধ করায় এই ভোটে তাদের প্রতিদ্বন্দ্বিতা করার সুযোগ নেই।‌

জামায়াতে ইসলামি এবং এনসিপি ইউনূসের ঘোষণাকে স্বাগত জানিয়ে বলেছে, যাবতীয় সংস্কার সেরে ভোট করানোই সঠিক সিদ্ধান্ত। কিন্তু বাংলাদেশ কমিউনিস্ট পার্টি এবং বিএনপি ইউনূসের সিদ্ধান্তের তীব্র সমালোচনা করেছে। এপ্রিলে ভোটের প্রস্তাব প্রসঙ্গে খালেদার দলের বক্তব্য, বাংলাদেশে সাধারণ নির্বাচন করানোর জন্য এপ্রিল কখনও উপযুক্ত সময় হতে পারে না।

তার একাধিক কারণ রয়েছে। প্রথমত, তার ঠিক আগে ইদুলফিতর উৎসব থাকায় কোনও দলই নির্বাচনি প্রচার সেভাবে করে উঠতে পারবে না। দ্বিতীয়ত, দশম এবং দ্বাদশ ক্লাসের বোর্ডের পরীক্ষা হয় এপ্রিলে। তাই ওই সময় ভোট হলে অসুবিধা হবে। তৃতীয়ত, বাংলাদেশে এপ্রিলজুড়ে কালবৈশাখী হয়ে থাকে প্রায় প্রতি বছর।‌ বেশি ঝড়-বৃষ্টি হলে ভোট করানো তখন অসম্ভব হয়ে পড়বে।‌ খালেদার দলের আপত্তিগুলির সারবত্তা নিয়ে কোনও সন্দেহ নেই।

ইউনূসের চলতি লন্ডন সফরের শুরুটা খুব সুখের হয়নি। হিথরো বিমানবন্দরে নামার পর থেকেই ব্রিটেনে বসবাসরত আওয়ামী লিগ নেতাদের বিক্ষোভের মুখে পড়েন বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা। বিক্ষোভকারীদের মধ্যে আওয়ামী লিগের বেশ কয়েকজন প্রাক্তন সাংসদ ছিলেন। হাসিনা দেশ ছাড়ার পর চরম ডামাডোলের মধ্যে এই সাংসদরা ব্রিটেনে পালিয়ে গিয়েছিলেন।

শুধু তাঁদের বিক্ষোভ নয়, ইউনূসকে স্বাগত জানাতে ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী কিয়ের স্টারমারের তরফে কেউ সেদিন হিথরো বিমানবন্দরে হাজির ছিলেন না। বিএনপি নেতা তারেক রহমানের সঙ্গে ইউনূসের সম্ভাব্য বৈঠকটি লন্ডনের কোনও হোটেলে হতে পারে। দেড় দশক ধরে তারেক ব্রিটেনের বাসিন্দা। বিএনপি সূত্রের খবর, তারেক এপ্রিলের পরিবর্তে ফেব্রুয়ারি মাসে ভোট করানোর জন্য চাপ দিতে পারেন ইউনূসকে।‌

ভোটের সময় ছাড়াও দেশের বর্তমান পরিস্থিতি, নির্বাচনি জোট প্রসঙ্গ নিয়ে আলোচনা হতে পারে তারেক ও ইউনূসের।‌ বিএনপি নেতৃত্ব এবং দলের সাধারণ কর্মী-সমর্থকরা এই সম্ভাব্য বৈঠক নিয়ে খুব আশাবাদী। তাঁদের আশা, ইউনূস হয়তো ফেব্রুয়ারিতে জাতীয় নির্বাচন করাতে রাজি হয়ে যেতে পারেন।

বিএনপি’র মহাসচিব মির্জা ইসলাম ফখরুল আলমগীরের ভাষায়, ইউনূস-তারেক বৈঠক বাংলাদেশের বর্তমান পরিস্থিতিতে ‘টার্নিং পয়েন্ট’ হয়ে উঠতে পারে।‌ কেননা, এই বৈঠকে ভোটের স্বার্থ জড়িয়ে আছে বিএনপি এবং ইউনূস, দু’পক্ষেরই।‌ বিএনপি’র ভয়, ভোট যত পিছোবে, তত তাদের জয়ের সম্ভাবনা কমবে। তাড়াতাড়ি হলে তাদের লাভ। আবার ইউনূস মুখে ২০২৬-এর ৩০ জুনের পর এক মুহূর্ত চেয়ারে থাকবেন না বললেও তাঁর নজর যে রাষ্ট্রপতি পদের দিকে, তা এখন স্পষ্ট। তাই সমঝোতার রাস্তা খুঁজছেন তিনিও।



Source link

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *