বিশ্বজ্যোতি ভট্টাচার্য, শিলিগুড়ি: উৎসব প্রিয় বাঙালির পুজোর কটা দিন মেনুতে ভালো কিছু থাকবে না এটা হয় নাকি! আলু-ফুলকপি ডালনা, বেগুনি, পটোল পোস্ত, পালং পনীর, ভাপা ইলিশ আরও কত ব্যাঞ্জন। এবার কিন্তু ভিন্ন পরিস্থিতি। দেবীপক্ষের শুরু থেকে বাজারে সবজি ছুয়ে দেখতে দামের আগুনে হাত পুড়ছে অনেকের। তাই পুজোর কয়েকদিন মেনুতে ভালো কিছু রাখার কথা ভাবতে পারছেন না তারা। চলছে বাজেটে কাটছাট করে নিয়মরক্ষা। ওপার বাংলার ইলিশ বাজারে পৌঁছতে ভোজন রসিকরা বেশ আনন্দ পেয়েছিলেন। কিন্তু সেখানেও দাম শুনে সাধের দুয়ারে কাটা বিঁধছে।
এবার পুজো অনেকটা এগিয়ে। বঙ্গ থেকে বর্ষা এখনও বিদায় নেয়নি। সেপ্টেম্বরেও ভারী বর্ষণে ডুবেছে উত্তরের সবজি খেত। বাজারে আমদানি কমেছে। নতুন সবজি মিলতে কেটে যাবে অক্টোবর মাস। তাই দেবীপক্ষের শুরু থেকে সবই মহার্ঘ্য হয়েছে। বাজার ঘুরে আনাজ ছুয়ে দেখতে দামের আগুনে হাত পুড়ছে। প্রতিদিন দাম বাড়ছে। সবই ৬০ টাকা থেকে ৮০ টাকা কেজির মধ্যে ঘোরাফেরা করছে। একমাত্র সস্তা আলু এবং পিয়াজ। আলু ২০ টাকা, পিয়াজ ৩০ টাকা কেজি। অন্য সবজির দাম কেজিতে ২০ টাকা পর্যন্ত বেড়েছে। মহালয়ার আগেও ৪০-৫০ টাকা কেজি দামে বিকিয়েছে বিট, গাজর। সেটাই এখন দ্বিগুণ দামে কিনতে হচ্ছে।
জলপাইগুড়ির ময়নাগুড়ি পুরাতন বাজারের সবজি বিক্রেতা পরিমল রায় জানান, বৃষ্টির জন্য সবজি খেত নষ্ট হয়েছে। পাইকারি বাজারে সবজির আমদানি নেই বললে চলে। যতটুকু মিলছে দাম আকাশছোয়া। ওই কারণে খুচরো বাজারে দাম বেড়েছে। এখন প্রতিটি সবজি মহার্ঘ্য। বেগুনের কেজি প্রতি দাম ৬০ টাকা থেকে চড়েছে ৮০ টাকায়। লঙ্কার দাম ক্রমশ বাড়ছে। রবিবার বাজারে লঙ্কা ১৬০ টাকা কেজি দামে বিকিয়েছে। সবজি বিক্রেতারা জানান, দাম বেড়েছে উচ্ছে, পটল, কচু সহ প্রতিটি আনাজের। যে উচ্ছে কিছুদিন আগেও বাজারে গড়াগড়ি খেয়েছে সেটাই এখন ৬০ টাকা থেকে ৮০ টাকা কেজি দামে বিক্রি হচ্ছে। বিনসের কেজি প্রতি দাম দাঁড়িয়েছে একশো টাকা। কচু চাষি বিশ্বনাথ রায় বলেন, ‘‘প্রথমে আনাবৃষ্টিতে খেতের বেশিরভাগ সবজি শুকিয়ে মরেছে। পরে বাকিটা জলে ডুবে পচে নষ্ট হয়েছে। মাঠে ফসল না থাকায় দাম বাড়ছে।’’
শিলিগুড়ি বিধান মার্কেটের সবজি ব্যবসায়ী স্বপন সাহা বলেন, ‘‘এক পাইকারি বাজার থেকে অন্য বাজারে ঘুরেও সবজি মিলছে না। এবার পুজোর দিনগুলোতে নতুন সবজি মিলবে না। অক্টোবরের শেষে পরিস্থিতি স্বাভাবিক হতে পারে।’’ এদিকে দীর্ঘ প্রতীক্ষার পর শিলিগুড়ির বাজারে পদ্মার পাড়ের ইলিশ পৌঁছাতে অনেকেই আনন্দ পেয়েছিলেন। এমনিতে এবছর প্রথম থেকে ইলিশের চাহিদা ভালো ছিল। পাশাপাশি বাংলাদেশের ইলিশ পাওয়া যাবে কিনা তা নিয়ে সংশয় ছিলই। তাই সাড়ে সাত টন ওপার বাংলার ইলিশ শিলিগুড়ির পাইকারি বাজারে পৌঁছেছে খবর পেয়ে ভোজনরসিকরা খুশি ছিলেন। কিন্তু খুচরো বাজারে দাম শুনে আর সাহস হচ্ছে না ইলিশের নানা ব্যাঞ্জনে ডিস সাজাতে। ফিস মার্কেট অ্যাসোসিয়েশনের সম্পাদক বাপি চৌধুরী জানান, বড় মাপের ইলিশ পাইকারি বিক্রি হচ্ছে ২৩০০ টাকা কেজি দরে। ছোট মাঝারি ওজনের ইলিশের দাম তুলনামূলকভাবে কিছুটা কম। কিন্তু এই বছর ইলিশের স্বাদ ও মানে হয়তো সন্তুষ্ট হবেন ক্রেতারা। খুচরো বাজারে ওই ইলিশ বিক্রি হচ্ছে আড়াই হাজার থেকে দেড় হাজার টাকায়।