সঞ্জীব চট্টোপাধ্যায়
প্রভুর পূজা হবে কোন মন্ত্রে? ‘রাজভোগ’ অপ্রকাশিত একটি পুঁথি। সেখানে আছে পূজাবিধি। তিনজন পুরোহিত তিন দেবতার পূজায় বসবেন। বাসুদেব মন্ত্রে বলভদ্রের পূজা, ভুবনেশ্বরী মন্ত্রে সুভদ্রার আর মন্ত্ররাজ নৃসিংহ মন্ত্রে জগন্নাথ দেবের। রাজা ইন্দ্রদ্যুম্ন আদেশ পেয়েছিলেন, প্রভুকে নৃসিংহ মন্ত্রে পূজা করবে। নরসিংহের পরিচিত মূর্তি হল, একটি মস্তক ও দুটি হাত।
জগন্নাথ দেবের প্রসাদ রূপান্তরিত হবে মহাপ্রসাদে। কীভাবে? আবার পুরাণ। দেবী বিমলা প্রভু জগন্নাথকে তাঁর মন্দিরে প্রবেশের অনুমতি দিয়েছিলেন একটি শর্তে। জগন্নাথ দেবকে নিবেদিত অন্নভোগ পরিচিত হবে ‘প্রসাদ’ নামে। এইবার সেই প্রসাদ নিবেদিত হবে বিমলার কাছে। বিমলা গ্রহণ করার পর প্রসাদ রূপান্তরিত হবে ‘মহাপ্রসাদে’। এই মহাপ্রসাদে আচণ্ডালের অধিকার। চণ্ডাল এবং ব্রাহ্মণ একসঙ্গে এই প্রসাদ গ্রহণ করলেও স্পর্শদোষে উচ্ছিষ্ট অপবিত্র হবে না। শেষতম কণিকাটিও সমানভাবে পবিত্র থাকবে। জগন্নাথ দেব শর্ত মেনে মন্দিরে প্রবেশাধিকার পেয়েছিলেন। প্রতিষ্ঠিত হয়েছিলেন।
এই মহাপ্রসাদ প্রকৃতই মহা-প্রসাদ। স্বয়ং ব্রহ্ম। সারা ভারতের মানুষের কাছে একটি মহাবস্তু। তাঁরা বিশ্বাস করেন, স্বয়ং লক্ষ্মীদেবী রন্ধন করেন আর রত্নবেদিতে দাঁড়িয়ে দেবতারা গ্রহণ করেন।
প্রভু কোন মাসে কী বেশ ধারণ করেন? বেশের রূপান্তর। বৈশাখে চন্দন বেশ। প্রভু মদনমোহন। জ্যৈষ্ঠে হস্তীবেশ। প্রভু তখন গণেশ। আষাঢ়ে গুণ্ডিচা থেকে ফিরে আসার পর স্বর্ণবেশ। শ্রাবণে পরপর দুটি বেশ, চিতালাগি বেশ আর রাহুরেখালাগি বেশ। ভাদ্র মাসে তাঁর শ্রীকৃষ্ণ লীলা। প্রথম বনভোজন বেশ, তারপর কালীয় দমন বেশ, প্রলম্ববধ বেশ, অবশেষে বামন বেশ। আশ্বিনে রাজবেশ। কার্তিকে তাঁর অনেক রূপধারণ। লীলা জমজমাট। শ্রীরাধাদামোদর, ত্রিবিক্রম, বামন, নৃিসংহ, পরশুরাম, সবশেষে রাজাধিরাজ। অঘ্রানে শীতবস্ত্র অঙ্গে, যার নাম ওড়ন। মাঘে পদ্মবেশ। মাঘী পূর্ণিমায় গজোদ্ধারণ বেশ। বসন্ত পঞ্চমীর দিন চাঁচেরি বেশ। ফাল্গুনে কুণ্ডলবেশ, দোল পূর্ণিমায় রাজবেশ। চৈত্রে প্রভু রামরাজা বেশে শ্রীরামচন্দ্র।
এভাবেই জগন্নাথ দেব রূপে-রূপান্তরে, পুরুষোত্তম হয়ে ধরা-ছোঁয়ার বাইরে অনন্ত লীলায় মেতে আছেন।
ওডিশা জগন্নাথ ক্ষেত্র। শ্রীশ্রী জগন্নাথ দেবের পটমণ্ডল। রাজ্য, ধর্ম, সংস্কৃতি শাসন তাঁকে বাদ দিয়ে হতে পারে না। ধর্মানুসরণে, িক জৈন, কি বৌদ্ধ, কোনও সম্প্রদায়ই তা পারেননি। জগন্নাথের ছায়া থেকে কে বেরোবে! অরণ্য গভীর। স্বয়ং মহীরূহ। মহী-শব্দের আশ্রয়ে এই পৃথিবী। মহীতল-ভূতল, মহীধ্র-পর্বত, মহীনাথ-নৃপতি। অরণ্যেই উদ্গীত আরণ্যক বেদান্তের বেদ-অন্ত, শ্রেষ্ঠ জ্ঞান।
একটি শঙ্খ যেন সমুদ্রোত্থিত। মস্তকে পশ্চিমসীমা, সেখানে বসে আছেন নীলকণ্ঠ শিব। শঙ্খের উদর সমুদ্রের জলে। শ্বেতশুভ্র শঙ্খটি মাথা তুলে এক ক্রোশ মাত্র এগিয়েছে। ‘শঙ্খাগ্রে নীলকণ্ঠ স্যাদেৎক্রোশঃ সুদুর্লভঃ।’ এই ক্রোশমাত্র ক্ষেত্র অতি সুদুর্লভ। সাক্ষাৎ নারায়ণের এই ক্ষেত্রটি পরম ধন। ‘সুবর্ণবালুকাকীর্ণং নীলপর্বতশোভিতম্।’ উৎকল খণ্ডে ঋষি জৈমিনি এই কথাই বলছেন। এই ক্ষেত্রের বিস্তার পাঁচ ক্রোশ। এর মধ্যে তীর্থরাজ সমুদ্র তটবর্তী দু-ক্রোশ অতি পবিত্র।
শ্রীভগবান উবাচ, ‘সমুদ্রের উত্তর তীরে মহানদীর দক্ষিণ প্রদেশটি পৃথিবীর মধ্যে সকল তীর্থের ফল প্রদান করেন। একাম্রকানন ভুবনেশ্বর হতে দক্ষিণ সমুদ্রের তটভূমি পর্যন্ত প্রত্যেক পদবিক্ষেপের স্থান উত্তরোত্তর অপেক্ষাকৃত শ্রেষ্ঠ। সিন্ধুতীরে যে স্থানে নীলপর্বত বিরাজমান, পৃথিবীতে সেই স্থানটি গোপনীয়, এমনকি ব্রহ্মারও অতি দুর্লভ।’
কেন দুর্লভ? ইতিহাসে হয়তো যুক্তিগ্রাহ্য উত্তর মিলবে। একথা ঠিক পুরীর মতো সমুদ্রসৈকত দ্বিতীয় আর নেই। গোল্ডেন বিচ, সুবর্ণ সৈকত। সৈকত থেকে শ্রীমন্দির সামান্য দূরত্ব। শ্রীক্ষেত্রের শ্রীমন্দিরের বিপুল বৈভবের পশ্চাতে ১৬ জন নৃপতির প্রয়াস রয়েছে। এঁদের মধ্যে প্রথম নামটি হল অনন্তবর্মন চোড়ঙ্গদেব বা চুড়ঙ্গদেব। তিনি ঘোষণা করেন, ওডিশার রাজাধিরাজ মহাপ্রভু জগন্নাথ দেব, আমি মহাপ্রভুর সামন্তরাজা, রাউত। রাজাধিরাজ জগন্নাথ দেবের মন্দিরের রূপ হল, যেন সুবিশাল একটি দুর্গ। একাধিক প্রাকার ও বাধা অতিক্রম করতে পারলে তবেই তাঁর দর্শন পাওয়া যাবে। ১০.৭ একর জমির ওপর এই মন্দির। দুটি প্রাকার দিয়ে ঘেরা। প্রথমটির নাম মেঘনাদ বেড়া, দ্বিতীয়টির নাম কুর্মবেড়া। চারটি প্রবেশ পথ। সিংহ দুয়ার, সিংহ শৌর্যের প্রতীক। অশ্ব দুয়ার, অশ্ব সামরিক শক্তির প্রতীক। ব্যাঘ্র দুয়ার, ব্যাঘ্র তেজের প্রতীক। হস্তী দুয়ার, হস্তী সম্পদের প্রতীক। আর অপর ব্যাখ্যা হল, সিংহ ধর্ম, হস্তী অর্থ, অশ্ব কর্ম, ব্যাঘ্র মোক্ষের প্রতীক।
জগন্নাথ দেবের দুর্গে সর্বত্র রহস্য। প্রতি পদক্ষেপে রহস্য। সিংহদ্বারের দু’ধারে দেবমণ্ডল। এটি অতিক্রম করলেই সামনে বাইশটি সোপান। দেশীয় ভাষায় ‘বাইশ পহছা’। শুরু হল রহস্যমণ্ডল। এই বাইশটি সিঁড়ি হল যোগদর্শনের বাইশটি তত্ত্ব। ধাপে ধাপে সাজানো, পঞ্চভূত, পঞ্চ কর্মেন্দ্রিয়, পঞ্চ জ্ঞানেন্দ্রিয়, মন, বুদ্ধি, অহংকার, চিত্ত ইত্যাদি। জৈনরা বলেন, এই বাইশটি সিঁড়ি হল তাঁদের বাইশজন তীর্থঙ্কর। এঁদের স্পর্শ নিতে নিতে পৌঁছোতে হবে আদি দেব ঋষভনাথের কাছে। আবার এমন যুক্তিও আছে, জগন্নাথ দেব গোলোকবাসী। তলায় পড়ে আছে অষ্ট বৈকুণ্ঠ, তার তলায় চতুর্দশ ভুবন। হিরণ্যগর্ভ পদ্মাসনে প্রভুর আসন। তাঁর বেদির কাছে যেতে হবে এই চতুর্দশ ভুবন আর অষ্ট বৈকুণ্ঠ অতিক্রম করে। সপ্তভুবনে লুকিয়ে আছে তন্ত্রের ষটচক্র। একটি ঊর্ধ্বলোকের উত্থান সোপান। অধোলোকেও সাতটি তল, অতল, সুতল, বিতল, তলাতল, মহীতল, রসাতল আর পাতাল। এইবার অষ্ট বৈকুণ্ঠের পরিচয় হল শ্রীবৈকুণ্ঠ, কৈবল্য বৈকুণ্ঠ, কারণার্ণব বৈকুণ্ঠ, শেষশায়ী বৈকুণ্ঠ, শ্বেতদ্বীপ বৈকুণ্ঠ, পরব্যোম বৈকুণ্ঠ, গর্ভোদকশায়ী বৈকুণ্ঠ আর কৈলাস।
এই দীর্ঘ, দুস্তর, সাধন-পথ ধরে এগোতে হবে। পথের শেষে ‘ওমেগা পয়েন্টে’ অপেক্ষায় রয়েছেন ভগবান হাত দুটি বাড়িয়ে। সেই কারণেই বোধহয় প্রভুর হাত দুটিই সার। আর দূরবিন দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছেন জগৎ পথের দিকে জগতের নাথ। ‘দয়াসিন্ধুর্বন্ধুঃ সকলজগতাং। রথারূঢ়ো গচ্ছন।’ জ্ঞানমিশ্র ভক্তিই ওডিশার বৈষ্ণবদের সাধন-পথ। বজ্রযানী বৌদ্ধ আর নাথ সম্প্রদায়ের প্রভাবও পড়েছিল। তাঁদের সম্মিলিত দর্শন হল, শ্রীশ্রী জগন্নাথ দেব হলেন পঞ্চমাত্রা, পঞ্চভূত, পঞ্চবীজ, পঞ্চদেব এবং জীব ও পরমাত্মার মিলিত তনু। মানুষ বাইশ রকমের অপরাধে অপরাধী। এই অপরাধ দেবতার কাছে। ওই বাইশটি ধর্ম সোপান উল্লঙ্ঘনে বাইশটি পাপ-স্খলন। বাইশটি ধাপ বাইশটি তীর্থভূমি। পবিত্র থেকে পবিত্রতর হতে হতে পুরুষোত্তম প্রাপ্তি। মূর্তির অভ্যন্তরে আছে ব্রহ্মবস্তু। ব্রহ্মের অপার মহিমা লাভ।
কিন্তু তিনি কে? বৈষ্ণব অথবা শাক্ত। শবরের সেবা অস্বীকার করে রাজা হলেন ওণ্ড্র দেশে। নীল পর্বতে। সমুদ্রের তটে। যেমন শ্রীকৃষ্ণ। গোপীদের কাঁদিয়ে, বৃন্দাবনে ভাসিয়ে, ‘লাল পাগুড়ি দিয়ে মাথে, রাজা হলেন মথুরাতে।’ আবার গীতায় বসে অর্জুনকে বললেন, সখা! ‘যে যথা মাং প্রপদ্যন্তে তাংস্তথৈব ভজ্যাম্যহম।’ যে যেভাবে, যে রূপে আমাকে চায় আমি সেই ভাবে সেই রূপেই তার সেবা, পূজা গ্রহণ করে প্রার্থিত ফল দান করি।
ব্রহ্মার স্তবে সন্তুষ্ট বিষ্ণু বললেন, এটি আমার ক্ষেত্র। এখানে আমি চির আসীন অক্ষয় বট। সমুদ্রতনয়া লক্ষ্মী আমার ক্রোড়ে আসীন। আমি অক্ষয় বট। এখানে পাপ-পুণ্যের বিচার নেই। যমের দণ্ড অচল। এখানে একটা কাকও মৃত্যুর পর সাযুজ্যলাভ করে। তীর্থ-যজ্ঞ, দান-ধ্যানে যে ফল, এই ক্ষেত্রে একদিন মাত্র বাস করলে সেই ফল লাভ। নিমেষমাত্র বাস করলে অশ্বমেধ যজ্ঞের ফল পাওয়া যায়।
যমরাজ বললেন, সে তো হল, এই ক্ষেত্রের এমন জগৎ-ছাড়া মহিমা হল কী করে, যেখানে আমার শাসন অচল? শ্রীবিষ্ণু শ্রীলক্ষ্মীকে বললেন, ‘বলে দাও’। শ্রী তখন শ্রীক্ষেত্রের শক্তি বলয়ের কথা বললেন, ‘এই পঞ্চক্রোশ পরিমিত এলাকায় তোমার দণ্ড অচল। তাহলে শোনো, এই অন্তর্বেদীটি রক্ষার জন্যে আমি আটটি শক্তি কল্পনা করেছিলাম। ইতিমধ্যে মহাদেব উগ্র তপস্যা শুরু করলেন। আমি তখন আমার শরীর থেকে সুন্দরী গৌরীকে তার পত্নীরূপে সৃজন করলুম। গৌরীকে আদেশ করলুম, এই অন্তর্বেদীর চতুর্দিক রক্ষা করো। সেই গৌরী আমার প্রীতির নিমিত্ত অষ্টপ্রকার মূর্তি ধারণ করে অষ্টধা দিক্ষু সংস্থিতা।
বটমূলের অগ্নি কোণে মঙ্গলা, পশ্চিমে বিমলা, শঙ্খের পূর্বভাগ বায়ু কোণে সর্বমঙ্গলা, উত্তর দিকে অর্ধাশনী, ঈশান কোণে লম্বা, দক্ষিণে কালরাত্রী, পূর্বদিকে মরীচিকা, নৈঋতে চণ্ডরূপা। এই ভীষণারূপা অষ্টশক্তির দ্বারা অন্তর্বেদী সর্বতোভাবে রক্ষিত।’
ক্ষেত্রস্বামী ভগবান বিষ্ণু। রুদ্রাণীর অষ্টশক্তির দ্বারা রক্ষিত। এখন রুদ্র কী করেন! তিনি ভগবানকে বললেন, তুমি যেখানে আমিও সেখানে, তোমাকে ছেড়ে থাকা আমার পক্ষে অসম্ভব। রুদ্র আটভাগে বিভক্ত হলেন। ক্ষেত্রস্বামী ভগবান সেই অষ্টরুদ্রকে আটদিকে রেখে নিজে বসলেন মাঝখানে।
মহাদেব নিজেকে এই ভাবে সাজালেন, কপালমোচন, কাম, ক্ষেত্রপাল, যমেশ্বর, মার্কণ্ডেয়েশ্বর, বিশ্বেশ্বর, নীলকণ্ঠ, বটমূলে বটেশ্বর। ব্রহ্মা, বিষ্ণু, মহেশ্বর, গৌরী, লক্ষ্মী সবাই এসে গেলেন। লক্ষ্মীদেবী পিতামহ ব্রহ্মাকে বললেন, ‘আপনি এই অত্যাজ্য ক্ষেত্রে সুবর্ণ বালুকায় আবৃত হয়ে আমাদের সঙ্গে অবস্থান করবেন। সত্যযুগে বিষ্ণুপরায়ণ ও সকল যোগের আহর্তা, শাস্ত্রজ্ঞ এক রাজা জন্মগ্রহণ করবেন, তাঁর নাম হবে ইন্দ্রদ্যুম্ন। তিনি এই পুণ্যক্ষেত্রে আসবেন, মহাভক্তি প্রকাশ করবেন। ভগবান তাঁকে অনুগ্রহ করে একটি দারুতে উৎপন্ন হবেন।’
এক পরম বিষ্ণুভক্ত রাজা সূর্যবংশীয় শ্রী ইন্দ্রদ্যুম্ন মালবদেশে এলেন। অবন্তীনগরে তাঁর রাজধানী। পৃথিবীর শ্রেষ্ঠ যুগ সত্যযুগের সূচনা হল। রাজপুরোহিত বিদ্যাপতি। ইন্দ্রদ্যুম্নের রাজসভায় ভগবৎ প্রেিরত এক বৈষ্ণব এসে শ্রীশ্রী নীলমাধবের কথা শুনিয়ে গেেলন। ব্যাকুলের ব্যাকুলতা গেল। দিকে দিকে অনুসন্ধানকারীরা বেরিয়ে পড়লেন অনুসন্ধানে। অনার্যদেশে রাজপুরোহিত বিদ্যাপতি সুকৌশলে সন্ধান পেলেন শবর পূজিত নীলমাধবের। শবরের নাম ‘বিশ্বাবসু’। শুরু হল জগন্নাথ কাহিনী। দীর্ঘ সময় দীর্ঘ কাহিনী।
ফিরে আসি বাইশধাপের তৃতীয় ধাপে। এই ধাপ পবিত্রতম। শ্রীশ্রী জগন্নাথ দেবের অভিষেক। এই অভিষেকে উপস্থিত থাকার জন্যে সব দেবদেবী নীলাচলে নেমে এসেছেন। শিব তখনও কাশী থেকে এসে পৌঁছোতে পারেননি। বৃদ্ধ বৃষভ বাহনে চড়ে শিব যখন এলেন জগন্নাথ দেব তখন রত্নবেদিতে আরোহণ করে গেছেন। নেমে শিবকে অভ্যর্থনা করার উপায় নেই। বিশ্বনাথ তৃতীয় ধাপ পর্যন্ত উঠে অপেক্ষা করছেন, জগন্নাথ দেব এসে অভ্যর্থনা করবেন। এদিকে অভিষেক শুরু হয়ে গেছে। জগন্নাথ সিংহাসন ছেড়ে উঠতে পারছেন না। বিশ্বনাথ অপমানিত বোধ করে তৃতীয় ধাপে দাঁড়িয়ে পড়েছেন, আর এগোচ্ছেন না। কথাটা জগন্নাথ দেবের কানে গেল। জগন্নাথ দেব বললেন, ‘শিব ওইখানেই অবস্থান করুন। প্রতিবছর রথযাত্রার সময় আমি তাঁকে দর্শন করব।’