শুভজিৎ দত্ত, নাগরাকাটা: ডুয়ার্স-তরাইয়ের বহু চা বাগানের ক্রেশ ব্যবস্থা নিয়ে অভিযোগের অন্ত নেই। সেখানে ব্যতিক্রম মেটেলির ইনডং চা বাগান। ওই বাগানের স্থায়ী ও ভ্রাম্যমাণ দুটি ক্রেশেই রয়েছে সুব্যবস্থা। শিশুদের ক্রেশে রেখে নিশ্চিন্তে কাজ করতে পারেন বাগানের মহিলা শ্রমিকরা। আর বিষয়টিতে ইনডং চা বাগানের মালিক হরিরাম গর্গকে পুরো কৃতিত্ব দিলেন সুপারিন্টেন্ডেন্ট ম্যানেজার রজত দেব। তিনি বলেন, ‘মালিক চান না শ্রমিকরা তাদের ন্যায্য অধিকার থেকে কোনওভাবে বঞ্চিত হোক। তাঁর নির্দেশ ও পরামর্শমতোই ক্রেশের সমস্ত কাজ হয়। শিশুদের সুরক্ষিত রাখতে আমরা বদ্ধপরিকর।’
বাগিচা শ্রম আইন অনুসারে প্রতিটি চা বাগানে ক্রেশ থাকা বাধ্যতামূলক। কর্মরত মহিলা শ্রমিকদের ৩ বছর বয়স পর্যন্ত সন্তানদের ওই ক্রেশে রাখা হয়। দেখভালের জন্য নিয়োগ করা হয় ধাইমা।
ইনডংয়ের স্থায়ী ক্রেশটি দেখতে অনেকটা অঙ্গনওয়াড়ি কেন্দ্রের মতো। রয়েছে শিশুদের জন্য আরামদায়ক বিছানা, ফ্যান, খেলনা থেকে শুরু করে প্রয়োজনীয় সবকিছু। ক্রেশ ঘরটিকে সাজিয়ে তোলা হয়েছে শিশুদের মনের মতো করে। দেওয়ালে আঁকা রয়েছে জনপ্রিয় কার্টুন, বর্ণমালা। চারিদিকে সবুজের সমাহার। ট্র্যাক্টরের একটি ডালাকে রং করে ভ্রাম্যমাণ ক্রেশ তৈরি করা হয়েছে।
প্রতিদিন ২২-২৩টি শিশু ক্রেশে থাকে। বাগানের নিজস্ব ডেয়ারি থেকে আসে গুজরাটের গির প্রজাতির গোরুর দুধ। প্রতিদিন বরাদ্দ ৪ লিটার। সঙ্গে বিস্কুট। ভ্রাম্যমাণ ক্রেশটিকে মহিলা শ্রমিকদের কাজের নির্দিষ্ট সেকশনে নিয়ে যাওয়া হয়। সন্তানের জন্ম দেওয়া মায়েদের বাগানের ভাষায় ‘ছুয়ারি মা’ বলা হয়। ভ্রাম্যমাণ ক্রেশটিকে যেখানে নিয়ে যাওয়া হয় সেখানে ছুয়ারি মায়েদের মেলা বসে।
পঞ্চাশোর্ধ্ব ধাইমা সুশীলা ওরাওঁ বলেন, ‘মালিকের নির্দেশ শিশুদের যেন কোনও অসুবিধা না হয়। সতর্ক হয়ে কাজ করার চেষ্টা করি। আমাদের নিজস্ব পোশাক রয়েছে। বাগান কর্তৃপক্ষেরই দেওয়া।’ চা শ্রমিক সংগঠন ন্যাশনাল ইউনিয়ন অফ প্ল্যান্টেশন ওয়ার্কার্স (এনইউপিডব্লিউ)-এর ইনডং সম্পাদক তথা ইনডং-মাটিয়ালি গ্রাম পঞ্চায়েতের সদস্য সিনু মুন্ডা বলেন, ‘বহু বাগান ঘুরেছি। এমন ক্রেশ দেখিনি। প্রকৃত অর্থেই প্রশংসনীয়।’