অর্ণব আইচ: পরিকল্পনা হয়েছিল আগেই। তার জন্য আগাম কিনে নিয়ে আসা হয়েছিল শক্তপোক্ত দড়ি। পরিবারের তিনজন মিলে সিদ্ধান্ত নেওয়ার পর সুইসাইড নোট লেখা হয়। নোটের একেবারে শেষে লেখা হয় তিনজনের নামও। সেখানে শেষকৃত্য ও পারলৌকিক ক্রিয়ার জন্য ‘শেষ ইচ্ছা’ প্রকাশ করে ‘অনুরোধ’ও জানানো হয়েছে। সোমবার বিকেল সাড়ে চারটে থেকে মঙ্গলবার ভোর সাড়ে চারটের মধ্যে গলায় দড়ির ফাঁস দিয়ে ঝুলেই আত্মঘাতী হন কসবার গোল্ড পার্কের বাসিন্দা সরজিৎ, তাঁর স্ত্রী গার্গী ও ছেলে আয়ুষ্মান। উদ্ধার হওয়া সুইসাইড নোটে তিনজনের নাম থাকলেও সেটি কার লেখা, তা জানার জন্য কসবার ফ্ল্যাটে তল্লাশি চালিয়ে হাতের লেখার নমুনা সংগ্রহ করছে পুলিশ।
কসবায় একই পরিবারের তিনজন আত্মঘাতী হওয়ার ঘটনায় ময়নাতদন্তের প্রাথমিক রিপোর্টের সূত্র ধরে পুলিশের হাতে উঠে এসেছে এই চাঞ্চল্যকর তথ্য। কসবার রাজডাঙার তিনতলার ফ্ল্যাটের ডাইনিং হল থেকে উদ্ধার হয় সরজিৎবাবুর ঝুলন্ত দেহ। শোওয়ার ঘরের সিলিং থেকে ঝুলন্ত অবস্থায় উদ্ধার হয় তাঁর স্ত্রী ও ছেলের দেহ। ঘরের মধ্যে থেকে যে সুইসাইড নোট উদ্ধার হয়েছে, তাতে লেখা রয়েছে যে, ইশ্বরের কাছে নিজেদের সমর্পণ করছেন তাঁরা। তারই তলায় লেখা ‘শেষ ইচ্ছা’।
সেখানে লেখা হয়েছে, ‘‘যদি কোনও সহৃদয় ব্যক্তি একই সঙ্গে একই জায়গায় আমাদের তিনজনের দেহ সৎকার করে এবং আরও আমাদের তিনজনের পারলৌকিক ক্রিয়া করেন, তবে আমাদের তিনজনের আত্মা শান্তি লাভ করবে। এটাই আমাদের শেষ অনুরোধ।’’ লালবাজার জানিয়েছে, মৃত গার্গী ভট্টাচার্যর পরিবারের একজন রাজ্য পুলিশের আধিকারিক। তাঁদেরই এক আত্মীয়া ময়নাতদন্তের পর পরিবারের সদস্যদের শেষ ইচ্ছাপূরণ করতে দেহগুলি গ্রহণ করেন।
ময়নাতদন্তের পর চিকিৎসকরা পুলিশকে জানান যে, গলায় ফাঁস দিয়ে ঝোলার ফলেই মৃত্যু হয়েছে তিনজনের। ময়নাতদন্তের ৩৬ থেকে ৪৮ ঘণ্টা আগে, অর্থাৎ সোমবার বিকেল থেকে মঙ্গলবার ভোরের মধ্যে তিনজনের মৃত্যু হয়েছে। তদন্তে পুলিশ জেনেছে, ছোট চাকরির সঙ্গে বিমার এজেন্সি ও দালালি করতেন সরজিৎবাবু। কিন্তু তার সঙ্গে রেসের মাঠে গিয়েও দেদার খরচ করতেন। টাকা জমত না। কসবার বকুলতলায় নিজেদের বাড়ি বিক্রি করেছেন কুড়ি বছর আগে। সেই টাকাও ক্রমে শেষ হয়ে আসে। সম্প্রতি পাঁচশো, হাজার টাকা ধার করেও সংসার চালানোর চেষ্টা করতেন বাড়ির কর্তা। বিশেষভাবে সক্ষম ছেলের চিকিৎসার খরচও ছিল। রবিবার ফোনে এক আত্মীয়ার সঙ্গে শেষ কথা হয় পরিবারের লোকেদের।
সোমবার বিকেলে পরিচারিকা কাজ করে চলে যান। যদিও তার আগেই আত্মহত্যার ছক কষা হয়েছিল। দেনার দায়ে পিঠ ঠেকে যাওয়ায় বেশ কিছুদিন ধরেই তিনজন মিলে আত্মহত্যার পরিকল্পনা করেন। তাই দড়ি কিনে আনা হয়। পুলিশের মতে, সোমবার বিকেলের পর থেকেই আত্মহত্যার প্রস্তুতি নেওয়া হয়। বিশেষ কিছু খাওয়াদাওয়া করেননি কেউই। পুলিশের ধারণা, প্রথমে মা ও ছেলে শোওয়ার ঘরে গলার দড়ি দিয়ে ঝুলে পড়েন। শেষে বাড়ির কর্তা ডাইনিং হলে সিলিং থেকে ঝুলে আত্মঘাতী হন। পুরো ঘটনাটির তদন্ত চলছে বলে জানিয়েছে পুলিশ।