রাস্তা তৈরিতে বেনিয়ম হচ্ছে না তো? সরকারি কাজে ‘নজরদারি’তে অযোধ্যা পাহাড়বাসীই

রাস্তা তৈরিতে বেনিয়ম হচ্ছে না তো? সরকারি কাজে ‘নজরদারি’তে অযোধ্যা পাহাড়বাসীই

বৈশিষ্ট্যযুক্ত/FEATURED
Spread the love


সুমিত বিশ্বাস, পুরুলিয়া: উন্নয়নের কাজ সঠিকভাবে হচ্ছে তো? গ্রামবাসীদের নিয়ে গঠিত কমিটিই রাস্তার কাজ পরিদর্শন করল। উন্নয়নের কাজে সমস্ত রকম বেনিয়ম রুখতে পুরুলিয়ার অযোধ্যা পাহাড় আদিবাসী উন্নয়ন কমিটি এভাবেই প্রশাসনের কাজের শরিক হয়েছে। আসলে আবারও কয়েক বছর পর অযোধ্যা পাহাড়ে নতুন করে বহিরাগতদের উস্কানিতে পাহাড়ের মানুষজনকে বিভ্রান্ত করার কাজ চলছে। আর সেই কারণেই নিজেদের উন্নয়ন বুঝে নিতে একেবারে ফ্রন্ট ফুটে অযোধ্যা পাহাড় আদিবাসী উন্নয়ন কমিটি।

কিছুদিন আগে পুরুলিয়া জেলা পুলিশের নাইট ম্যারাথন নিয়ে পাহাড় জুড়ে প্রচার হয়েছে। সেইসঙ্গে এই পাহাড়ে যারা উন্নয়নের বিরোধিতা করেছেন, তাদের বিরুদ্ধে সরব হয়ে প্রশাসনের পাশে থাকার বার্তা দিয়ে হাজারের বেশি মানুষ যোগদান করেছেন অযোধ্যা পাহাড়ের র‍্যালিতে। আর তারপরেই বৃহস্পতিবার অযোধ্যা পাহাড় ও পাহাড়তলি এলাকায় দীর্ঘদিনের দাবি পূরণে রাস্তার কাজ পরিদর্শন। অযোধ্যা পাহাড় আদিবাসী উন্নয়ন কমিটি বাঘমুন্ডির ছাতরাজেরা থেকে বলরামপুরের খুনটাড়, বাঘমুন্ডির আমকোচা থেকে বড়গোড়া ছাড়াও উরমা স্টেশন থেকে খুনটাড় হয়ে হেদেলবেড়ায় নির্মীয়মাণ রাস্তার কাজ পরিদর্শন করেছে।

সরকারি প্রকল্পের কাজ পরিদর্শনে অযোধ্যা পাহাড় আদিবাসী উন্নয়ন কমিটি।
নিজস্ব চিত্র।

গত ডিসেম্বরের প্রায় মাঝামাঝিতে পুরুলিয়ার পুলিশ সুপার অভিজিৎ বন্দ্যোপাধ্যায়-সহ তাঁর টিম ওই এলাকায় পরিদর্শনে গিয়ে রাস্তার হতশ্রী চেহারা দেখতে পান। এরপরেই ওই এলাকায় রাস্তার মাধ্যমে যাতে অযোধ্যা পাহাড়ের গ্রামগুলির সঙ্গে যোগাযোগ মসৃণ করা যায় সে বিষয়ে জেলা প্রশাসনকে জানানো হয়। প্রশাসন দ্রুত পদক্ষেপও করে। ওই এলাকার রাস্তা নির্মাণে অর্থ বরাদ্দ হয়। এই কাজগুলি কেমন হচ্ছে তা রূপায়ণকারী সংস্থার সঙ্গে কথা বলার পাশাপাশি স্থানীয় বাসিন্দাদের সঙ্গে বৈঠক করে ওই কমিটি। ওই সংগঠনের সভাপতি বলিবাস মুর্মু বলেন, “পুলিশ সুপার পরিদর্শনের পর বড়গোড়া, ছাতরাজেরা, আমকোচা, খুনটাড় এলাকায় যেসব রাস্তা নির্মাণ হচ্ছে। এই কাজগুলি সঠিকভাবে হচ্ছে কিনা, তা দেখতেই আমাদের পরিদর্শন। ওই রাস্তাগুলির মাধ্যমে দীর্ঘদিনের দাবি পূরণ হওয়ায় তা নির্মাণে যাতে কোনওরকম বেনিয়ম না হয়, সেটা নজরে রাখছি। পাহাড়ে সামগ্রিক উন্নয়নের সঙ্গে আমরা সবসময় রয়েছি। যারা এই উন্নয়নে বাধা দেবে, তাদের ছেড়ে কথা বলা হবে না।”

এই পাহাড় অতীতে ছিল অবহেলিত, উপেক্ষিত। আর তারপর বাম আমলে মাওবাদীদের শক্ত ঘাঁটি। রাজ্যে পালাবদলের পর ছবিটা বদলেছে। দেরিতে হলেও সামগ্রিক উন্নয়নে এগিয়ে এসেছে গ্রামবাসীদের নিয়ে গঠিত কমিটি। পুরুলিয়া জেলা প্রশাসন এই বিষয়ে কিছু বলতে না চাইলেও উন্নয়নের পথকে আরও প্রশস্ত করতে অযোধ্যা পাহাড়ে গ্রামবাসীদের কমিটি যেভাবে কাজ করছে তাতে পুলিশ ও সাধারণ প্রশাসনের সুবিধাই হচ্ছে।

রাস্তা পরিদর্শন করে বেশ কিছু বিষয়ে অসন্তোষ প্রকাশ করেছে গ্রামবাসীদের কমিটি। নিজস্ব ছবি।

পুরুলিয়া জেলা পরিষদ সূত্রে জানা গিয়েছে, বাঘমুন্ডির আমকোচা থেকে বড়গোড়া স্কুল পর্যন্ত ৫২২ মিটার রাস্তা। সেইসঙ্গে উরমা স্টেশন থেকে খুনটাড় হয়ে বলরামপুরের হেদেলবেড়া পর্যন্ত ৩.৭০ কিমি রাস্তা নির্মাণের কাজ চলছে। ওই দিন বাঘমুন্ডি ব্লকের অযোধ্যা গ্রাম পঞ্চায়েতের বড়গোড়া গ্রামে গাছের তলায় বসে ওই উন্নয়ন কমিটি এলাকার মানুষজনের সঙ্গে বৈঠক করেন। বৈঠকে শুধু বড়গোড়া নয়। লাগোয়া ধানচাটানি, লুকুইচাটানি, আমকোচার মত বিভিন্ন গ্রামের মানুষজন সেই বৈঠকে আসেন। বৈঠক থেকে ওই কমিটি বলে, এই রাস্তা কারও দয়ার দান নয়। এ রাস্তা তাদের অধিকার। পুলিশ সুপারের উদ্যোগেই এই রাস্তার কাজ হচ্ছে। উন্নয়নের কাজ যাতে ভালোভাবে হয় তা এলাকার মানুষজনকে বুঝে নিতে হবে।

সরকারি নির্দেশিকা অনুযায়ী নির্মাণ সামগ্রী যাতে এই কাজে সঠিকভাবে ব্যবহার করা হয় সেদিকেও লক্ষ্য রাখার কথা বলে ওই কমিটি। ওই দিন ওই কমিটি রূপায়নকারী সংস্থার সঙ্গে কথা বলার পাশাপাশি কয়েকটি বিষয়ে অসন্তোষ প্রকাশ করেন। তাঁরা জানান, হেদেলবেড়া থেকে খুনটাড় রাস্তার কাজে কিছু ত্রুটি দেখা যাচ্ছে। সেখানে চারটি ভিন্ন ভিন্ন কোম্পানির সিমেন্ট ব্যবহার করা হচ্ছে। এই বিষয়টি সংশ্লিষ্ট সংস্থাকে জানিয়ে দেওয়া হয়েছে। তারা এই বিষয়ে যথাযথ ব্যবস্থা নেবেন বলে ওই কমিটিকে জানান।

Sangbad Pratidin News App

খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ






Source link

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *