ধ্রুবজ্যোতি বন্দ্যোপাধ্যায়: বাংলার মানুষের নামে সংকল্প! মহাপ্রভু জগন্নাথ দেবের সামনে নিবেদন করা ৩০০ কেজি খোয়া ক্ষীরের মহাপ্রসাদ রওনা হল জেলায়-জেলায় বিতরণের জন্য।
‘রেফ্রিজারেটেড ভ্যানে’ সেই প্রসাদ পৌঁছে দেওয়া হবে নির্দিষ্ট গন্তব্যে। তা ঠিকমতো সব জায়গায় পৌঁছনোর জন্য প্রশাসনের তরফে যথাযথ ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। এই প্রক্রিয়ায় যাতে কোনও ছেদ না পড়ে তার জন্য সমস্ত বিধায়ককেও বিষয়টি নজরে রাখতে বলা হয়েছে। ১৭ জুন থেকে ২৭ জুনের মধ্যে এই মহাপ্রসাদ বিলি সেরে ফেলার কথা। নিয়ম মেনে তা হচ্ছে কিনা নজরে রাখছেন তথ্য ও সংস্কৃতিমন্ত্রী ইন্দ্রনীল সেন।
জগন্নাথের প্রসাদ বিলি উপলক্ষে সোমবার সকাল থেকে সাজ-সাজ রব দিঘার মন্দির চত্বরে। সকাল দশটার মধ্যেই কলকাতা থেকে ৩০০ কেজি খোয়া ক্ষীর পৌঁছে যায় দিঘার মন্দিরে। রাজভোগের পরে বিশেষ পুজো অনুষ্ঠানে জগন্নাথদেবের সামনে ক্ষীর নিবেদন করা হয় পিতলের থালায়। ৩০টি থালায় ৩০টি বাক্সে ১০ কেজি করে ক্ষীর ভরে তাতে জেলার নাম লিখে সেই বাক্স নিয়ে মন্দিরে পৌঁছে যান ৩০ জন মহিলা। পিছনে খোল-করতাল সহযোগে কীর্তন করতে করতে চলে বিরাট শোভাযাত্রা। মা বিমলাকে তা নিবেদন করার পর প্রভু জগন্নাথ দেবের সামনে তা অর্পণ করা হয়। ছিলেন ইসকনের সহ সভাপতি রাধারমণ দাস, পূর্ব মেদিনীপুরের জেলাশাসক পূর্ণেন্দু মাজি-সহ জেলা প্রশাসনের আধিকারিকরা। রাধারমণ দাসের কথায়, “জগন্নাথ দেবের মাহাত্ম্য তো অপার। রাজ্যজুড়ে সকল মানুষের কাছে এবার তাঁর প্রসাদ পৌঁছে যাবে। রাজ্যের সকল মানুষের মঙ্গলকামনায় তাঁদের নামেই সংকল্প করে প্রভুকে ভোগ নিবেদন করা হয়েছে। প্রভুকে বলা হয়েছে যাতে সকলের জীবনে সুখ-সমৃদ্ধি নেমে আসে।”
পূর্ব মেদিনীপুর জেলার জন্য প্রসাদি ক্ষীর এর পরই তুলে দেওয়া হয় ব্লক ও জেলার প্রতিনিধিদের হাতে। জেলার ২৫টি ব্লক এবং সমস্ত পুরসভার তরফ থেকে একজন করে প্রতিনিধি সেখানে ছিলেন। ব্লকে ব্লকে প্রসাদ পৌঁছতেই বেজে ওঠে শঙ্খ, কাঁসর ঘন্টা। বাকি জেলাগুলির ক্ষেত্রে প্রসাদ নিয়ে রওনা হয়েছে ‘রেফ্রিজারেটেড ভ্যান’। প্রত্যেক জেলাশাসকের নির্দেশ মতো প্রতিটি ব্লকে মিষ্টি তৈরির জন্য ময়রাদের নামের তালিকা ইতিমধ্যে তৈরি করে দেওয়া হয়েছে। সেখান থেকেই গজা ও পেঁড়া বানানো হবে। সঙ্গে আলাদা একটি সন্দেশ, সেই সন্দেশেই মিশবে প্রসাদি খোয়া খীর। প্রসাদি বাক্স বিলি হবে রেশন দোকান থেকে। প্রসাদের সঙ্গে জগন্নাথ মন্দিরের একটি ছবিও থাকবে বাক্সে। পুরো প্যাকেজিংয়ের দায়িত্বে রয়েছে রাজ্যের বিভিন্ন প্রান্তের স্বনির্ভর গোষ্ঠী। দক্ষিণবঙ্গের ক্ষেত্রে জেলায় জেলায় সড়কপথে এবং উত্তরবঙ্গে বিমানের মাধ্যমে প্রসাদ পৌঁছবে ও রেফ্রিজারেটেড বাক্সে। তার পর সেখান থেকে রেশন দোকানের মাধ্যমে তা গ্রাহকদের হাতে তুলে দেওয়া হবে।
১১ জুন জগন্নাথ দেবের স্নানযাত্রা। এই স্নানযাত্রার পর মহাপ্রভুর জ্বর আসে। ১২ জুন থেকে ২৫ জুন পর্যন্ত শাস্ত্রীয় বিধি মেনে সেই সময়টায় ভক্তদের দর্শন বন্ধ। স্নানযাত্রার দিন মন্দিরে উপস্থিত থাকবেন হিডকোর ভাইস চেয়ারম্যান হরিকৃষ্ণ দ্বিবেদি ও জেলাশাসক। ২৬ জুন অর্থাৎ রথযাত্রার একদিন আগে আবার মন্দিরের দ্বার খুলবে। ওই দিন বিপুল জনসমাগম হবে ধরে নিয়েই কড়া নিরাপত্তার ব্যবস্থা করছে প্রশাসন। একইভাবে রথযাত্রার ন’দিনের মাথায় ৫ জুলাই উল্টো রথের দিনও নিরাপত্তা কড়াকড়ি করা রয়েছে। তবে পুরীর মন্দিরের রীতিতে যেমন সেই শাস্ত্রীয় বিধি মেনে মন্দিরে ফেরার দিনই জগন্নাথ, বলরাম, সুভদ্রা ‘গৃহে’ ঢুকতে পারবেন না। লক্ষ্মীদেবী তাঁদের ঘরে ঢুকতে দেবেন না। ৬ ও ৭ জুলাই মন্দিরের বাইরেই রথে দর্শন দেবেন মহাপ্রভু। ৮ জুলাই মন্দিরে প্রবেশ করবেন তাঁরা।