সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটাল ডেস্ক: রাজ্যপাল এবং রাষ্ট্রপতিকে বিল পাশ করানো নিয়ে সিদ্ধান্ত নিতে হবে নির্দিষ্ট সময়সীমার মধ্যেই। তামিলনাড়ুর সরকার বনাম রাজ্যপাল দ্বন্দ্বে পুরনো রায়ই বহাল রাখল সুপ্রিম কোর্ট। শীর্ষ আদালত বলছে, তামিলনাড়ুতে বিল পাশ করানো নিয়ে এমন ‘বিরূপ পরিস্থিতি’ তৈরি হয়েছে। ফলে সংবিধানের মর্যাদা রক্ষার জন্য হস্তক্ষেপ করতে বাধ্য হয়েছে সুপ্রিম কোর্ট। শীর্ষ আদালতের প্রেসিডেন্সিয়াল রেফারেন্স বেঞ্চ, এ নিয়ে মতামত দিতে পারে শুধু। ওই রায় খারিজ করতে পারে না। যার অর্থ, বিচারবিভাগ এবং প্রশাসনের দ্বন্দ্বে বড়সড় ধাক্কা খেল কেন্দ্রের নরেন্দ্র মোদি সরকার।
গত ১২ এপ্রিল সুপ্রিম কোর্টের দুই সদস্যের ডিভিশন বেঞ্চ রায় দেয়, আইনসভায় পাশ করা কোনও বিল রাজ্যপাল বা রাষ্ট্রপতি কেউই অনির্দিষ্টকালের জন্য আটকে রাখতে পারেন না। ওই বিল নিয়ে নির্দিষ্ট সময়সীমার মধ্যে সিদ্ধান্ত নিতে হবে তাদের। কিন্তু প্রশ্ন উঠছিল, সুপ্রিম কোর্ট রাজ্যপাল বা রাষ্ট্রপতিকে এভাবে ‘নির্দেশ’ দিতে পারে কি? সুপ্রিম কোর্ট পালটা যুক্তিতে বলে, সংবিধানের ১৪২ নম্বর অনুচ্ছেদ অনুযায়ী, শীর্ষ আদালত ‘সুবিচার প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে’ আইনের ঊর্ধ্বে গিয়ে বিশেষ রায় দিতেই পারে। এ ক্ষেত্রেও তেমনটাই করেছে সুপ্রিম কোর্ট।
কিন্তু শীর্ষ আদালতের সেই রায়ে আপত্তি জানান খোদ রাষ্ট্রপতি দ্রৌপদী মুর্মু। সংবিধানের ১৪৩ ধারা প্রদত্ত বিশেষ অধিকার বলে শীর্ষ আদালতের ওই রায় নিয়ে ১৪টি প্রশ্ন তুলে দেন তিনি। যার ফলে ওই রায় পর্যালোচনার জন্য পাঁচ সদস্যের প্রেসিডেন্সিয়াল রেফারেন্স বেঞ্চ তৈরি হয়। প্রধান বিচারপতি বি আর গাভাইয়ের নেতৃত্বের পাঁচ সদস্যের ওই বেঞ্চে কেন্দ্র জানিয়েছিল, রাজ্যপাল এবং রাষ্ট্রপতির দপ্তর রাজনৈতিকভাবে স্বয়ংসম্পন্ন। গণতান্ত্রিক প্রশাসনের থেকেও উৎকৃষ্ট আদর্শে বিশ্বাসী। তাই রাষ্ট্রপতি বা রাজ্যপালের দপ্তরে যদি কোনও ত্রুটি থেকেও থাকে তাহলে সেটা ঠিক করতে হবে রাজনৈতিক ভাবে। অকারণ বিচারবিভাগের হস্তক্ষেপে সাংবিধানিক সংকট তৈরি হবে। পালটা মামলাকারীদের তরফে তামিলনাড়ু সরকার এবং কেরল সরকার দাবি করে, রাষ্ট্রপতির তোলা প্রশ্নের ভিত্তিতে যদি সুপ্রিম কোর্ট রায় বদলায়, তাহলে বিচারবিভাগের স্বাধীনতা নিয়ে বড়সড় প্রশ্ন উঠে যাবে।
দু’পক্ষের সওয়াল শোনার পর শীর্ষ আদালত জানিয়ে দেয়, প্রেসিডেন্সিয়াল রেফারেন্স বেঞ্চ শুধু ‘উপদেষ্টা’র ভূমিকায় অবতীর্ণ হতে পারে। কোনওভাবেই ১২ এপ্রিলের রায় বদলানো তাঁদের কাজ নয়। যার অর্থ, ১২ এপ্রিলের রায় বদলাচ্ছে না। তামিলনাড়ুর রাজ্যপাল এবং রাষ্ট্রপতিকে বিল পাশ করানো বা ফেরত পাঠানোর সিদ্ধান্ত নিতে হবে নির্দিষ্ট সময়সীমার মধ্যেই।