রয়্যাল আতঙ্কের মাঝে পুরুলিয়ায় রাস্টি স্পটেড ক্যাট, বাংলায় এই প্রথম ক্যামেরাবন্দি ছোট হিংস্র বিড়াল

রয়্যাল আতঙ্কের মাঝে পুরুলিয়ায় রাস্টি স্পটেড ক্যাট, বাংলায় এই প্রথম ক্যামেরাবন্দি ছোট হিংস্র বিড়াল

সিনেমা/বিনোদন/থিয়েটার
Spread the love


সুমিত বিশ্বাস, পুরুলিয়া: রয়্যাল বেঙ্গল টাইগারের আবহেই বাঘের ‘ছোট সহোদর’ও পুরুলিয়ায়! এই প্রথম বাংলায় খোঁজ মিলল মরিচা দাগযুক্ত বিড়াল বা রাস্টি স্পটেড ক্যাটের। ধরা পড়ল বনদপ্তরের ক্যামেরায়। রাজ্যের জঙ্গলে যে বিশ্বের সবচেয়ে ছোট এই বন্যপ্রাণের দেখা মিলবে তা ভাবতে পারেনি রাজ্যের বনবিভাগের বন্যপ্রাণ শাখা। ফলে তাদের কাছে শুধু সুখবরই নয়। জীব বৈচিত্র্যে এক উজ্জ্বল দিক হয়ে রইল পুরুলিয়া। গত সপ্তাহে পুরুলিয়া বনবিভাগের কোটশিলা বনাঞ্চলের সিমনি বিটের জঙ্গলে বনদপ্তরের ট্র্যাপ ক্যামেরায় ধরা দেয় এই বিরল ও বিপন্ন প্রজাতির বিড়াল। বুধবার এই বিষয়টি সামনে আনে পুরুলিয়া বনবিভাগ।

রাজ্যের প্রধান মুখ্য বনপাল তথা চিফ ওয়াইল্ড লাইফ ওয়ার্ডেন দেবল রায় বলেন, ” রাস্টি স্পটেড ক্যাট বাংলায় প্রথম রেকর্ড হল। ছবিও মিলেছে। ট্র্যাপ ক্যামেরায় ধরা পড়া ছবি থেকেই আমরা ওই বন্যপ্রাণকে চিহ্নিত করি।” ফলে খুব স্বাভাবিকভাবেই বন্যপ্রাণ সংরক্ষণ শ্রেণির এক নম্বরে রয়েছে এই বন্যপ্রাণ। আন্তর্জাতিক প্রাকৃতিক সংরক্ষণ সংস্থা এই বন্যপ্রাণকে প্রায় ‘বিপন্ন প্রজাতি’ হিসাবে ঘোষণা করেছে। ভারতের কয়েকটি জায়গায় এই বন্যপ্রাণ দেখা যায়। তবে মূলত শ্রীলঙ্কা ও নেপালে এই বিড়ালের দেখা বেশি পাওয়া যায়। 

Rusty-Spotted-Cat

রাজ্যের বনবিভাগ সূত্রে জানা গিয়েছে, পুরুলিয়া বনবিভাগের সঙ্গে বন্যপ্রাণ নিয়ে কাজ করা হিউম্যান অ্যান্ড এনভায়রনমেন্ট অ্যালায়েন্স লিগ বা হিল একটি বন্যপ্রাণ সংরক্ষণ কাজের সুবাদে ট্র্যাপ ক্যামেরা বসায়। চলতি মাসে ওই ক্যামেরা বসানো হয়েছিল। তাতেই ধরা দিল এই বিরল মরিচা বিড়াল। পুরুলিয়া বনবিভাগের ডিএফও অঞ্জন গুহ বলেন, “এই বিরল বন্যপ্রাণের উপস্থিতি আরও একবার প্রমাণ করে দিল পুরুলিয়ার বনাঞ্চল কতটা সমৃদ্ধশালী। রয়্যাল বেঙ্গল টাইগার, ভল্লুক, লেপার্ড, হায়না, নেকড়ে, হরিণের সঙ্গে বিশ্বের সবচেয়ে ছোট বিড়ালও পুরুলিয়ায় রয়েছে। এর থেকে আরও প্রমাণ মানুষ-বন্যপ্রাণ সংঘাত নয়। বন্যপ্রাণ-মানুষের সহাবস্থানে পুরুলিয়া আক্ষরিক অর্থে দৃষ্টান্ত হয়ে উঠেছে।”

সমৃদ্ধশালী এই বনাঞ্চল জীব বৈচিত্র্যে রীতিমতো টেক্কা দিচ্ছে উত্তরবঙ্গকে। হিলের সম্পাদক শুভ্রজ্যোতি চট্টোপাধ্যায় বলেন, “এই বিড়ালের ছবি তুলতে বন্যপ্রাণপ্রেমীরা বহু টাকা খরচ করে গুজরাট, রাজস্থান, মধ্যপ্রদেশে যান। অথচ বাংলাতেই এই বন্যপ্রাণ রয়েছে। বন্যপ্রাণ সংরক্ষণের সুবাদেই বনদপ্তরকে নিয়ে আমরা ট্র্যাপ ক্যামেরা বসাই। সেখানেই এই ছবি পাওয়া গিয়েছে।”

পুরুলিয়া বনবিভাগ সূত্রে জানা গিয়েছে, পূর্ণবয়স্ক বিড়ালের আকৃতির চেয়ে অনেকটাই ছোট এই মরিচা দাগযুক্ত বিড়াল। পূর্ণবয়স্ক বিড়ালের ওজন যেখানে ৪-৫ কেজি সেখানে তার ওজন দেড় থেকে দু’কিলো। লম্বা মাত্র ২ ফুট। অর্থাৎ বড় খরগোশের থেকেও কম ওজন এই বন্যপ্রাণের। এই বিরল বন্যপ্রাণের উপস্থিতি পর্যটকদের উৎসাহিত করবে। পুরুলিয়া বনবিভাগের আবেদন, পুরুলিয়ার জঙ্গলমহলের জীব বৈচিত্র্যকে আরও তুলে ধরতে আগুন এবং প্লাস্টিককে যে কোন উপায়ে বর্জন করতেই হবে। এই বন্যপ্রাণ পাখি, সাপ, গিরগিটি খেলেও এই বিরল বিড়ালটি এতটাই হিংস্র যে এর থেকে বড় প্রাণীর উপর হামলা করে। অর্থাৎ ছাগল ও সারমেয় শাবকের উপর হামলা করার উদাহরণ রয়েছে। তার দাঁত, নখ ভীষণই ধারালো।

কোটশিলা বনাঞ্চলের সিমনি ছাড়াও অযোধ্যা পাহাড় রেঞ্জেও এই বন্যপ্রাণের চিহ্ন পেয়েছে পুরুলিয়া বনবিভাগ। এই মরিচা দাগযুক্ত বিড়ালটি গুজরাটের ন্যাশনাল পার্ক, মহারাষ্ট্রের তাডোবা-আন্ধারি ব্যাঘ্র প্রকল্প, পিলিভীত টাইগার রিজার্ভ, মহারাষ্ট্রের নাগজিরা অভয়ারণ্যে দেখা মেলে। দেখতে পাওয়া যায় কেওলাদেও ন্যাশনাল পার্ক ও সঞ্জয় গান্ধী ন্যাশনাল পার্কেও। কোটশিলা বনাঞ্চলের সিমনিতে লেপার্ড থাকায় ওই জঙ্গলে অবাধ যাতায়াতে খানিকটা রাশ টেনেছে পুরুলিয়া বনবিভাগ। আর তারই সুফল বিশ্বের সবচেয়ে ছোট বিড়ালের উপস্থিতি।

একনজরে মরিচা দাগযুক্ত বিড়াল

বৈজ্ঞানিক নাম: প্ৰিয়নাইলুরাস রুবিগিনোসাস
ওজন: দেড় থেকে দুই কেজি, লম্বা ২ ফুট
জীবনকাল: ৩ থেকে ৫ বছর
পাখি, সাপ, গিরগিটি খেয়ে বেঁচে থাকে
ভারত, নেপাল ও শ্রীলঙ্কায় বসবাস

Sangbad Pratidin News App

খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ






Source link

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *