‘যুদ্ধের অভিজ্ঞতা লিখতে ইউক্রেনে গেছি’, কলকাতা বইমেলায় আমন্ত্রিত জার্মান কবির সাক্ষাৎকার

‘যুদ্ধের অভিজ্ঞতা লিখতে ইউক্রেনে গেছি’, কলকাতা বইমেলায় আমন্ত্রিত জার্মান কবির সাক্ষাৎকার

জ্যোতিষ খবর/ASTRO
Spread the love


‘পৃথিবীর ইতিহাস হল যুদ্ধের ইতিহাস’, সভ্যতার অহংকারী পতাকায় যেন এই আপ্তবাক্যই বুনে চলেছে রাষ্ট্রশক্তিগুলি। ইজরায়েল-হামাস যুদ্ধে ‘হাফটাইমের বিরতি’ চলছে বটে, কিন্তু ইউক্রেন-রাশিয়া যুদ্ধ অব্যাহত। ২ বছর ১১ মাস ধরা চলা এই যদ্ধে মৃতের সংখ্যা লক্ষাধিক, রেয়াত করা হয়নি শিশুদেরও। ঘরছাড়া এক কোটির বেশি মানুষ। তাই বলে কি “মহৎ সত্য বা রীতি, কিংবা শিল্প অথবা সাধনা” বন্ধ হয়ে যাবে? হবে না। হবে না বলেই বিশ্ব কবিতার অবিংবাদিত সম্রাট রাইনের মারিয়া রিলকের সার্ধশতবর্ষে কলকাতা আন্তর্জাতিক বইমেলার ‘থিম কান্ট্রি’ জার্মানি।  বাংলা ভাষার সবচেয়ে বড় উৎসবে যোগ দিয়েছেন সমকালীন জার্মান কবিতার অন্যতম মুখ উলরিকে আলমুট জান্ডিগ। কবির সঙ্গে আলাপচারিতায়  কিশোর ঘোষ

কলকাতা হল ভারতের সংস্কৃতিক রাজধানী। কেমন লাগছে এই শহরটাকে? কলকাতা আন্তর্জাতিক বইমেলায় আপনার অভিজ্ঞতা কেমন?

জান্ডিগ: সত্যি বলছি ভীষণ ভালো লেগেছে। বইমেলা এবং তাঁর আশপাশের চত্বরটা যেন শহরের মধ্যে আরেকটা শহর! এখানকার মানুষ সত্যিকারের বইপ্রেমী এবং গ্রন্থপাঠক।

যদি প্রশ্ন করি, এই শহরে, এই মেলায় সবচেয়ে বেশি করে কী চোখে পড়ল আপনার?

জান্ডিগ: আমি এখানকার বৈচিত্রের প্রেমে পড়ে গিয়েছি। কত রকমের মানুষ। রাস্তায় ঘুরছে, আড্ডায় কথা বলছে, মন দিয়ে কথা শুনছেও। নতুন কেনা বইয়ের জন্য ব্যাগ কিনছে!

বাংলা কবিতা পড়েছেন কখনও? অনুবাদে?

জান্ডিগ: দুর্ভাগ্যজনক হলেও এটা সত্যি যে আমি বাংলা পড়তে জানি না। তবে রবীন্দ্রনাথ পড়েছি। কারণ জার্মান ভাষায় রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের সম্পূর্ণ অনুবাদ হয়েছে। তিনি জার্মানিতেও একজন রীতিমতো পরিচিত কবি।

এর বাইরে?

জান্ডিগ: ধন্যবাদ জানাই ২০১৫ সালের ম্যাক্স মুলার ভবনের অনুবাদ প্রকল্পটিকে। এর ফলে যশোধরা রায়চৌধুরী, সুমন্ত মুখোপাধ্যায়দের মতো সমসাময়িক বাঙালি কবিদের কবিতার জার্মান অনুবাদ হয়েছে।

কবিতাবিশ্বের অন্যতম শ্রেষ্ঠ সন্তান রাইনার মারিয়া রিলকের জন্মের দেড়শো বছর এটা। আপনার মতো আজকের জার্মান কবিদের কাছে রিলকের গুরুত্ব কতখানি?

জান্ডিগ: রিলকে হলেন সেই কবি, যাঁর কবিতার বই জার্মানির যে কোনও বইয়ের দোকানে পাবেন আপনি। কিন্তু সমসাময়িক কবিরা রিলকের মতো করে কবিতা লিখতে পছন্দ করেন না। যেহেতু এক্সপ্রেশনিজম (অভিব্যক্তিবাদ), ডাডাইজম এবং একটা সময়ের গণহত্যার নৃশংসতা জার্মান ভাষাকে উত্তর-আধুনিক চেতনার নয়া ভাঙচুরের পথে নিয়ে গিয়েছে।

তাহলে আজকের জার্মান কবিতায় রিলকে ঠিক কোথায় দাঁড়িয়ে?

জান্ডিগ: আমরা এখনও রিলকের কবিতা দ্বারা অনুপ্রাণিত হই। বিশেষ করে বলতে হয় তাঁর রচিত সনেট এবং এলিজির কথা।

যা বোঝা গেল তাতে করে নতুন শতাব্দীর জার্মান কবিতায় রিলকের অবস্থান আর সমসাময়িক বাংলা কবিতায় রবীন্দ্রনাথের অবস্থান প্রায় এক।

জান্ডিগ: (হাসি)।

কবিতা থেকে একলাফে যুদ্ধে যাব এবার। এই যে গত প্রায় তিন বছর ধরে ইউক্রেন-রাশিয়া যুদ্ধের জের ইউরোপের বাতাসে মৃত্যুর গন্ধ! গোটা বিশ্ব যার ফল ভুগছে, আর্থিক ভাবে হোক বা রাজনৈতিক ভাবে। রক্তক্ষয়ী এই যুদ্ধে জার্মানির অবস্থান কী? একজন কবি হিসাবে এই মারণ যুদ্ধে নিয়ে কী ভাবছেন আপনি?

জান্ডিগ: জার্মানি ইউক্রেনের পাশে দাঁড়িয়েছে। আমাদের অনেকেরই ইউক্রেনীয় কবিদের সঙ্গে কয়েক দশক ধরে বন্ধুত্ব রয়েছে। ফলে ওঁদের লড়াইটা আমিও জানি। ২০২২ সালে রাশিয়া যখন ইউক্রেনকে আক্রমণ করেছিল, তখন সমস্ত কাজ সরিয়ে রেখে ইউক্রেনকে সমর্থন করেছিলাম আমি। এর পর থেকে যত বেশি করে সম্ভব ইউক্রেনীয় কবিতা অনুবাদ করেছি। এমনকী যুদ্ধের অভিজ্ঞতা লিখব বল ইউক্রেনেও গিয়েছিলাম। জার্মান-ইউক্রেনীয় কবিতার সেতুবন্ধনে অন্যতম মুখ আমি। ইউক্রেনের কবি এবং সঙ্গীত শিল্পীদের সঙ্গে প্রচুর কাজ করেছি।

তাহলে ধরে নেওয়া যায়, সবার উপরে একজন কবির যুদ্ধবিরোধী চেতনাই কাজ করেছে।

জান্ডিগ: ইউটিউবে রাশিয়ার আগ্রাসনের বিরুদ্ধে বেশ কিছু জরুরি কাজের ভিডিও রয়েছে। আমি পূর্ব জার্মানির মানুষ। বুকের ভেতর সোভিয়েত রাশিয়ার ভয় নিয় বড় হয়েছি। ফলে গণতন্ত্রের লড়াইয়ে যোগ দেওয়া ছাড়া অন্য উপায় ছিল না আমার।

অনেক ধন্যবাদ জান্ডিগ। ভারত সফরে প্রবল ব্যস্ততার মধ্যেও আপনি সময় দিয়েছেন। আমার দেশ, আমার শহরে কলকাতায় আসার জন্য আপনাকে অন্তর থেকে ভালোবাসা জানাই। আশা করি ভবিষ্যতে কবিতা এবং অন্য বিষয়ে ভারতে হোক কিংবা জার্মানিতে আপনার সঙ্গে লম্বা কথোপকথনের সুযোগ হবে।

জান্ডিগ: সুন্দর আলাপচারিতার জন্য আপনাকেও ধন্যবাদ জানাই! একজন বাঙালি কবির সঙ্গে কথা বলে খুব ভালো লাগছে।



Source link

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *