ভারত: ৩৫৮ (সুদর্শন ৬১, যশস্বী ৫৮, পন্থ ৫৪, স্টোকস ৭২/৫)
ইংল্যান্ড: ৫৪৪/৭ (রুট ১৫০, স্টোকস ৭৭*, সুন্দর ৫৭/২)
তৃতীয় দিনের শেষে ইংল্যান্ড ১৮৬ রানে এগিয়ে।
সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটাল ডেস্ক: তৃতীয় দিনেই কি ম্যাঞ্চেস্টার টেস্ট বিধি লিখন তৈরি হয়ে গেল? ইংল্যান্ড যেভাবে দাপট দেখিয়ে ৫০০ রান পেরিয়ে গেল, তা কিন্তু শুভমান গিলদের জন্য একরাশ দুশ্চিন্তা রেখে গেল। পিচে বোলারদের জন্য কিছু নেই, এই একটাই সান্ত্বনা টিম ইন্ডিয়ার ব্যাটিংয়ের। কিন্তু ভারতীয় ব্যাটিংয়ে জো রুট হবেন কে? যিনি এদিন ১৫০ করে আউট হলেও টেস্টে সর্বাধিক রানের তালিকায় উঠে এলেন দ্বিতীয় স্থানে। আর জয়ের গন্ধ পাওয়া জোফ্রা আর্চাররা নিশ্চয়ই জশপ্রীত বুমরাহ-মহম্মদ সিরাজদের মতো ‘নির্বিষ’ বোলিং করবেন না? তৃতীয় দিনের শেষে ইংল্যান্ডের রান ৭ উইকেট হারিয়ে ৫৪৪। লিড ১৮৬ রানের। নিশ্চিতভাবেই চতুর্থ দিনে আরও বেশ খানিকক্ষণ ব্যাট করবেন স্টোকসরা। তারপর এত রানের বোঝা মাথায় নিয়ে গিলরা দ্বিতীয় ইনিংসে কতটা লড়াই চালান, তার উপর নির্ভর করছে সিরিজে ভারতের ভাগ্য। কারণ, এই টেস্টে ড্র বা হার হলে কিন্তু সিরিজ জয়ের সুযোগ হাতছাড়া হয়ে যাবে।
প্রথম ইনিংসে ভারত থেমেছিল ৩৫৮ রানে। ভাঙা পা নিয়ে হাফসেঞ্চুরি করে রূপকথা লিখেছিলেন ঋষভ পন্থ। কিন্তু দ্বিতীয় দিনের শেষে বোলিং ব্যর্থতায় বড় রানের ইঙ্গিত দিয়ে রেখেছিল ইংল্যান্ড। তখন তাদের রান ছিল ২ উইকেট হারিয়ে ২২৫। তৃতীয় দিন সকাল থেকে চলল অলি পোপ ও জো রুটের গর্জন। অভিষেক হওয়া অংশুল কাম্বোজের বলে গতি নেই। এই পিচে বুমরাহ-সিরাজরাই কিছু আবিষ্কার করতে পারলেন না, সেখানে অংশুলই বা কী করবেন? একমাত্র কাজ বলতে ব্যাটারের ভুলের জন্য অপেক্ষা করা। পেসারদের সামনে সেই ভুলটা একেবারেই করলেন না দুই ইংরেজ ব্যাটার। বরং প্রায় প্রতি ওভারেই একটি করে চার লিখে রাখলেন ভারতের জন্য। সেখানে একাধিক সিদ্ধান্ত নিতে পারতেন অধিনায়ক গিল। লর্ডসে মতো উইকেটকিপারকে সামনে নিয়ে আসতে পারতেন। বোলিং পরিবর্তনও ঠিকঠাক হল না।
অবশেষে, বহু প্রতীক্ষার পর শুভমান গিল বল তুলে দিলেন ওয়াশিংটন সুন্দরের হাতে। তাঁর বলেই ব্যক্তিগত ৭১ রানের মাথায় ফিরলেন পোপ। তার কিছুক্ষণের মধ্যে দুসরায় বোকা বানালেন হ্যারি ব্রুককে। কেন যে ওয়াশিংটন সুন্দরের হাতে গিল আরও আগে বল তুলে দিলেন না, সেটা ইংল্যান্ডে শার্লক হোমস জীবিত থাকলেও বোধহয় সমাধান করতে পারতেন না। তবে বিশ্ববিখ্যাত গোয়েন্দা হোক বা বৈজ্ঞানিক, সবারই গবেষণার বিষয় হওয়া উচিত জো রুট। ম্যাঞ্চেস্টারে কার্যত শিকড় গেড়ে বসে রইলেন তিনি। অনায়াসে সেঞ্চুরি করে গেলেন। টেস্টে সর্বাধিক রানের তালিকায় রাহুল দ্রাবিড়, জ্যাক ক্যালিস, রিকি পন্টিংদের টপকে এখন রুট (১৩,৪০৯) দ্বিতীয় স্থানে। সামনে শুধু শচীন তেণ্ডুলকর। ৩৮তম সেঞ্চুরিতে ছুঁয়ে ফেললেন কুমার সঙ্গাকারাকে। একগুচ্ছ রেকর্ড গড়লেন। শেষ পর্যন্ত ১৫০ রান করে জাদেজার বলে স্টাম্পড হলেন তিনি। আসলে তার কিছুক্ষণ আগে থেকেই খোঁড়াচ্ছিলেন। জাদেজা বা উইকেটকিপার জুড়েলকে কৃতিত্ব দিয়েও এটা বললে ভুল হয় না যে, চোটের জন্য ঠিক সময়ে ক্রিজে ফিরতে পারলেন না।
যদিও ফিরলেন বেন স্টোকস। ৬৬ রানের মাথায় তিনি পেশিতে টানের জন্য ‘রিটায়ার্ড হার্ট’ হয়ে মাঠ ছেড়েছিলেন। পরে ব্যাট হাতে ফিরলেন। অপরাজিত আছেন ৭৭ রানে। মাঝে বুমরাহর বলে জেমি স্মিথ ও সিরাজের বলে ক্রিস ওকস আউট হয়েছেন। দুজনেরই একটি করে সাফল্য। তবে আপাতত ইংল্যান্ডের রানের গতি থামার কোনও লক্ষণ নেই। লিড রয়েছে ১৮৬ রানের। এর মধ্যে ওকসকে আউট করে ওল্ড ট্র্যাফোর্ডে ক্রিশ্চিয়ানো রোনাল্ডোর মতো ‘সিউউ’ সেলিব্রেশন করেছেন সিরাজ। এই শহরেই রোনাল্ডোর রোনাল্ডো হয়ে ওঠার সফর শুরু। কদিন আগে ম্যাঞ্চেস্টার ইউনাইটেড দলের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেছিল গম্ভীর বাহিনী। তবে বর্তমানের ইউনাইটেড নয়, গিলরা যদি রোনাল্ডোর সময়ের ‘রেড ডেভিলস’দের ফিরিয়ে আনতে পারেন, তবেই মিরাকলের সম্ভাবনা রয়েছে। গম্ভীর কি শেষ মুহূর্ত পর্যন্ত লড়াই করার ‘ফার্গি টাইম’-এর মন্ত্র দিতে পারবেন?