মোহনবাগান দিবসের জমকালো অনুষ্ঠানে চাঁদের হাট, মধ্যমণি ‘রত্ন’ টুটু বোস

মোহনবাগান দিবসের জমকালো অনুষ্ঠানে চাঁদের হাট, মধ্যমণি ‘রত্ন’ টুটু বোস

স্বাস্থ্য/HEALTH
Spread the love


সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটাল ডেস্ক: ইতিহাসের আরেক নাম, গর্বের আরেক নাম ‘মোহনবাগান দিবস’। খালি পায়ে ইংরেজ হারানোর স্পর্ধা থেকে আজকের সময়ে দেশের মধ্যে শ্রেষ্ঠত্ব অর্জন, সবেতেই মোহনবাগানের নাম। শুধু ফুটবল নয়, বিভিন্ন ক্রীড়াক্ষেত্র থেকে সামাজিক কর্তব্য, সব কিছুতেই উজ্জ্বল সবুজ-মেরুন পতাকা। মোহনবাগান দিবসে স্বীকৃতি দেওয়া হল ক্রীড়াক্ষেত্রে সাফল্য থেকে বিভিন্ন মাধ্যমের প্রবাদপ্রতিম ব্যক্তিদের। ‘মোহনবাগান রত্ন’-এ ভূষিত স্বপনসাধন বোস। এ বছর মোহনবাগানের সেরা ফুটবলার নির্বাচিত হয়েছেন আপুইয়া। সেরা উদীয়মান ফুটবলারের পুরস্কার পেলেন দীপেন্দু বিশ্বাস। পুরস্কারের ঘোষণা আগেই করা হয়েছিল, মঙ্গলবার নেতাজি ইন্ডোর স্টেডিয়ামে বর্ণাঢ্য অনুষ্ঠানের মাধ্যমে পুরস্কার তুলে দেওয়া হল বিভিন্ন ক্ষেত্রের কৃতিদের।

মোহনবাগান দিবস মানেই সমর্থকদের কাছে উৎসব। সেটা শুরু হয়েছিল সকাল থেকেই। মোহনবাগানের ‘অমর একাদশ’কে শ্রদ্ধার্ঘ্য জানিয়ে শুরু হয় প্রভাত ফেরি। তারপর ক্লাব তাঁবুতে পতাকা উত্তোলন পর্ব। দুপুরে ক্লাবের মাঠে ছিল প্রাক্তনীদের ফুটবল ম্যাচ। সন্ধ্যায় সৌমেন্দ্র-সুরজিতের সঙ্গীতানুষ্ঠানের মূর্ছনায় উদ্বেল নেতাজি ইন্ডোর। প্রবল গর্জনে শোনা যাচ্ছে ‘জয় মোহনবাগান’ স্লোগান। সেই উচ্ছ্বাস, উন্মাদনা সঙ্গে নিয়েই শুরু হল পুরস্কার বিতরণী অনুষ্ঠান।

‘মোহনবাগান দিবস’ উপলক্ষে নেতাজি ইন্ডোরে চাঁদের হাট। ক্রীড়ামন্ত্রী অরূপ বিশ্বাস থেকে প্রাক্তন ক্রিকেটার সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায়, সিএবি সভাপতি স্নেহাশিস গঙ্গোপাধ্যায়, অভিনেতা প্রসেনজিৎ চট্টোপাধ্যায়, মোহনবাগান ক্লাবের সহ-সভাপতি কুণাল ঘোষ, কে নেই সেখানে! ছিলেন হাজার হাজার সমর্থক। মঞ্চ আলো করে সদাউপস্থিত ক্লাব সচিব সৃঞ্জয় বোস ও সভাপতি দেবাশিস দত্ত। মঞ্চে ছিলেন মোহনবাগানের ‘অমর একাদশ’-এর পরিবারবর্গ। এসেছিলেন ‘চিরপ্রতিদ্বন্দ্বী’ ক্লাব ইস্টবেঙ্গল ও মহামেডানের কর্মকর্তারাও।

‘শো স্টপার’ হিসেবে ছিলেন টুটু বোস। ক্লাবের প্রতি তাঁর অবদানের জন্য ‘মোহনবাগান রত্নে’ ভূষিত হলেন তিনি। তাঁকে নিয়ে ভিডিওবার্তায় বক্তব্য রাখেন সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায়, বাইচুং ভুটিয়া, আইএম বিজয়ন, জোসে ব্যারেটো, সুব্রত ভট্টাচার্য প্রমুখ। তাঁকে সংবর্ধনা দেওয়ার আগে ভিডিওবার্তায় বলা হয়েছিল, তিনি সঠিক সময়ে সঠিক সিদ্ধান্ত নেওয়ার মতো মানুষ। এই সম্মান যেন ‘গঙ্গাজলে গঙ্গাপূজা’। আসলে তাঁর আমল থেকেই ‘মোহনবাগান রত্ন’ দেওয়া শুরু হয়। ক্লাব সচিব সৃঞ্জয় বোস ও সভাপতি দেবাশিস দত্ত মিলে তাঁকে মোহনবাগান রত্নে ভূষিত করেন। মঞ্চে তখন চাঁদের হাট। হবে নাই বা কেন! তিনি যে সবুজ-মেরুনের প্রাণভোমরা টুটু বোস।

শুরুতে সংবর্ধনা দেওয়া হয়, দুই ফ্যান ক্লাব মেরিনার্স বেস ক্যাম্প ও মেরিনার্স ডে এক্সট্রিমকে। তারপর একে একে পুরস্কার তুলে দেওয়া হয় কৃতিদের হাতে। উমাকান্ত পালোধি নামাঙ্কিত সেরা সমর্থকের পুরস্কার পান রিপন মণ্ডল। গত মরশুমে জামশেদপুরের বিরুদ্ধে অ্যাওয়ে ম্যাচে হেনস্তার শিকার হতে হয়েছিল রিপনকে। তিনি এই পুরস্কার প্রয়াত কাকাকে উৎসর্গ করেন। প্রতুল চক্রবর্তী নামাঙ্কিত সেরা রেফারির পুরস্কার দেওয়া হয় মিলন দত্তকে। তিনি এই সম্মান উৎসর্গ করেন পরলোকগতা স্ত্রীকে। অঞ্জন মিত্রের নামাঙ্কিত সেরা ক্রীড়া সংগঠকের পুরস্কার পান কমল কুমার মৈত্র।

এরপর মতি নন্দীর নামে সেরা ক্রীড়া সাংবাদিকের মরণোত্তর পুরস্কার পান অরুণ সেনগুপ্ত ও মানস চক্রবর্তী। অরুণ সেনগুপ্তের হয়ে পুরস্কার নিতে উপস্থিত ছিলেন তাঁর মেয়ে। প্রণব বন্দ্যোপাধ্যায়ের নামাঙ্কিত সেরা অ্যাথলিটের পুরস্কার পান অর্চিতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তিনি রাজ্য মিটে ১০০ মিটারে প্রথম, ২০০ মিটারে দ্বিতীয় হয়েছেন। সেরা হকি খেলোয়াড়ের (কেশব দত্ত পুরস্কার) সম্মান পান অর্জুন শর্মা। যিনি ২০২৫-এ হকিতে কলকাতা লিগজয়ী দলেও ছিলেন। অরুণ লালের নামাঙ্কিত সেরা ক্রিকেটার হন রণজ্যোৎ সিং খাইরা। বাংলার হয়েও নিয়মিত খেলেন তিনি।

মোহনবাগানের সেরা উদীয়মান ফুটবলার হয়েছেন তরুণ ডিফেন্ডার দীপেন্দু বিশ্বাস। তিনি মঞ্চে উঠতেই প্রবল চিৎকার। যতই হোক, দীপেন্দু তো ‘ঘরের ছেলে’। নিজেও বলেন, ‘আমি প্রথমে সমর্থক, তারপর ফুটবলার’। তিনি বলেন, “শুভ মোহনবাগান দিবস। সকলকে ধন্যবাদ যে, আমাকে যোগ্য মনে করেছে। আশা করি, আগামী দিনে আরও ভালো হবে। জয় মোহনবাগান।” সুভাষ ভৌমিকের নামাঙ্কিত সেরা ফরওয়ার্ডের পুরস্কার পেলেন জেমি ম্যাকলারেন। আজ যাঁর জন্মদিন। আর শিবদাস ভাদুড়ীর নামাঙ্কিত বর্ষসেরা ফুটবলার হয়েছেন আপুইয়া। জীবনকৃতি পুরস্কার দেওয়া হয় ক্লাবের জার্সিতে দীর্ঘদিন খেলে যাওয়া ক্রিকেটার রাজু মুখোপাধ্যায়কে। তিনি বলেন, “১৭ বছরে মোহনবাগানে আসি। মোহনবাগান আমায় মানুষ করেছে। এই ক্লাব আমার কাছে মা-বাবার থেকে কম নয়।”

মোহনবাগান রত্ন: স্বপনসাধন বোস
সেরা ক্রীড়া সাংবাদিক: অরুণ সেনগুপ্ত, মানস ভট্টাচার্য (দুজনেই মরণোত্তর)
সেরা সমর্থক: রিপন মণ্ডল
সেরা ক্রীড়া সংগঠক: কমল কুমার মৈত্র (অ্যাথলেটিক্স ফেডারেশনের সচিব)
সেরা রেফারি: মিলন দত্ত
সেরা অ্যাথলিট: অর্চিতা বন্দ্যোপাধ্যায়
সেরা হকি খেলোয়াড়: অর্জুন শর্মা
সেরা উদীয়মান ফুটবলার: দীপেন্দু বিশ্বাস
সেরা ফরওয়ার্ড: জেমি ম্যাকলারেন
সেরা ফুটবলার: আপুইয়া
সেরা ক্রিকেটার: রণজ্যোৎ সিং খাইরা
জীবনকৃতি: রাজু মুখোপাধ্যায়



Source link

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *