কৃষ্ণকুমার দাস এবং ধ্রুবজ্যোতি বন্দ্যোপাধ্যায়: প্রত্যাশামতোই কালীগঞ্জ উপনির্বাচনে উড়ল সবুজ আবির। গত লোকসভা ও বিধানসভার ভোটের ভোটব্যাঙ্ক খোয়াল বিজেপি। ভোট শতাংশ বাড়িয়েও জামানত জব্দ বাম-কং জোটের প্রার্থীর। এই ভোটবাক্সের ফল শুধুমাত্র জয়-পরাজয়ের দিক থেকে নয়, বিধানসভা নির্বাচনের ন্যারেটিভ তৈরির ক্ষেত্রেও অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ বলেই মনে করছে রাজনৈতিক মহল। তাদের দাবি, এবারের নির্বাচনে স্পষ্ট, মেরুকরণের রাজনীতি প্রত্যাখ্যান করছে বাংলার মানুষ। উন্নয়নেই আস্থা তাদের।
নদিয়ার কালীগঞ্জ উপনির্বাচনে ৫০ হাজারের বেশি ভোটের ব্যবধানে শুধু গোহারা নয়, গত বিধানসভা ও লোকসভা নির্বাচনের চেয়েও কম ভোট পেল পদ্ম-শিবির। ২০২১ এবং ২০২৪ সালের নির্বাচনে বিজেপি ৩১ শতাংশের সামান্য কিছু ভোট পেলেও এবার মাত্র ২৮ শতাংশ সমর্থন পেয়েছে পদ্মপ্রার্থী। উলটোদিকে গত বিধানসভা ও লোকসভার চেয়ে এবার তৃণমূল কংগ্রেস প্রার্থীর ভোট শুধু বেড়েছে তাই নয়, শতাংশের বিচারেও ৫৫.১৫ শতাংশ ভোটারের সমর্থন পেয়েছেন জোড়াফুল প্রার্থী আলিফা আহমেদ। ৪ বছর আগে আলিফার বাবা প্রয়াত নাসিরুদ্দিন ৪৬ হাজার ৯৮৭ ভোটের ব্যবধানে জিতেছিলেন, সেখানে তাঁর কন্যা ৫০ হাজার ৪৯ মার্জিনে বিজেপিকে হারিয়ে বিধানসভায় পা রাখবেন। তাৎপর্যপূর্ণ হল, বাম-সমর্থিত কংগ্রেস আগের চেয়ে সামান্য ভোট বাড়িয়ে ১৫.২১ শতাংশ সমর্থন পেলেও তৃতীয় হয়ে যথারীতি জামানত খুইয়েছেন। এই নিয়ে ২০২৪ সালের লোকসভা ভোটের পর বাংলায় গত এক বছরে যে ১১টি উপনির্বাচন হল, তার প্রত্যেকটিতে গোহারা হল বিজেপি, আগের চেয়ে বেশি মার্জিনে জিতলেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের প্রার্থীরা।
গত বিধানসভা এবং লোকসভার চেয়ে বিজেপি ৩ শতাংশ ভোট শুধু কম পায়নি, গণনা শুরুর প্রথম তিন রাউন্ড এবং মাঝে পাঁচ-ছটি রাউন্ডে তৃতীয় স্থানে চলে গিয়েছিলেন পদ্মের প্রার্থী আশিস ঘোষ। তৃণমূলের দাবি, ‘হিন্দুত্বে’র নামে জিগির তুলে যতই শুভেন্দু অধিকারী হইচই করুন না কেন, আসলে বাংলার মানুষ যে ধর্মের নামে বিভেদের রাজনীতিকে প্রত্যাখ্যান করছে, তার প্রমাণ কালীগঞ্জের নির্বাচন। ভোট প্রাপ্তির সমীকরণ বলছে, কালীগঞ্জের হিন্দু ভোটারদের একটা বড় অংশ বিজেপি থেকে তৃণমূলের সরে এসেছে। আর সেই কারণে ২০২১-এর চেয়ে ২০২৫-এ তৃণমূল প্রার্থীর ভোট বেড়েছে এবং বিজেপির ভোট ৩ শতাংশের বেশি কমেছে।
তৃণমূলের তরফে রীতিমতো বিরোধী দলনেতাকে চ্যালেঞ্জ দিয়ে বলা হয়েছে, “আপনি যত মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে অশ্লীল শব্দ প্রয়োগ করে কুৎসিত আক্রমণ করবেন, ধর্মের নামে বিভেদ করতে চাইবেন, ততই বাংলার মানুষ আপনাদের আরও বেশি করে প্রত্যাখ্যান করবে। তবে বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী এদিন তৃণমূলের জয়ের কথা স্বীকার করে নিয়ে বলেছেন, “মানুষকে আরও বোঝাতে হবে ভুল জায়গায় ভোট দেবেন না, তাহলেই হবে।” ভোটের খবর আসতেই এদিন বিধানসভায় তৃণমূল শিবির আরও চাঙ্গা হয়ে যায়। কালীগঞ্জে জয়ী প্রার্থী আলিফার হয়ে প্রচারে যাওয়া পুরমন্ত্রী ফিরহাদ হাকিম বলেন, “বিজেপি যত হিন্দু-হিন্দু বলে বাংলায় প্রচার করবে, ততই মানুষ ধর্মের নামে বিভেদের রাজনীতিকে প্রত্যাখ্যান করবে। কারণ, এখানে রামকৃষ্ণ-বিবেকানন্দ-নিমাই সন্ন্যাসীর মাটি। এখানে কোনও বিভেদ চলবে না।”