মহাকুম্ভের পুণ্যাপুণ্য

মহাকুম্ভের পুণ্যাপুণ্য

সিনেমা/বিনোদন/থিয়েটার
Spread the love


মহাকুম্ভে পুণ্যলাভের ভিড়ে পুরুষের যৌনক্ষুধাও পুষ্ট হচ্ছে। লুকিয়ে তোলা মেয়েদের ‘স্নান দৃশ্য’ টাকার বিনিময়ে বিকোচ্ছে সোশ্যাল মিডিয়ায়।

যুদ্ধ বা রাষ্ট্রিক অভ্যুত্থান মেয়েদের জন্য নতুন করে সংকট তৈরি করে। যারা বিজেতা, যারা ক্ষমতাবান, তারা অধিকৃত সামগ্রীর অংশ মনে করে মেয়েদেরও। ফলে যত্রতত্র লুঠতরাজ যেমন চলে, তেমনই মেয়েদের আব্রুহানির ঘটনাও ঘটতে থাকে আনুষঙ্গিক ক্ষয়ক্ষতির বন্ধনীভুক্ত হয়ে। কিন্তু উৎসব বা পার্বণও যে মেয়েদের জন্য বিচিত্র সংকট তৈরি করে না, কে বলল? উৎসবের ভিড়ে মেয়েরা ইচ্ছাকৃত দুর্ব্যবহারের শিকার হয়। উৎসবের জনোচ্ছ্বাসে প্রাণবন্ত হয়ে ওঠার সময়ও মেয়েদের তাই মাথায় রাখতে হয় এ-কথা, কোথাও একটা আগল আছে, কোথাও আছে নিয়ন্ত্রণরেখা, সেই সমীকরণে আলগা দিলে যে কোনও সময় ঘটতে পারে অবাঞ্ছিত ঘটনা।

তাদের শরীরী সৌন্দর্যই একচক্ষু হরিণের মতো মেয়েদের সামনে লাল সংকেত দিতে থাকে। এর আর-একদফা নমুনা আমরা পেলাম এ-বছরের মহাকুম্ভে। আশ্চর্য তিথি-ডোরে ধরা পড়ে প্রয়াগরাজে এই মহাকুম্ভ অনুষ্ঠিত হচ্ছে ১৪৪ বছর পরে। ‘পুণ্যযজ্ঞ’ বললে কম বলা হয় না। কাজেই ত্রিবেণী সঙ্গমে স্নান করে পুণ্যার্জনের আকাঙ্ক্ষা অস্বাভাবিক নয়। কিন্তু ‘ক্রাউড ম্যানেজমেন্ট’ বা ভিড় সামলানোর যেসব দৃষ্টান্ত আমরা ইতোমধ্যে দেখেছি– তা মোটেও আশাপ্রদ নয়। প্রয়াগরাজ-গামী ট্রেনে জনসমাবেশ লাগামছাড়া। এদিকে, পুণ্যার্থী-ভিড়ে লাগাম পরানোর প্রয়াস প্রায় অদৃশ্য। পদপিষ্ট হয়ে নির্মম মৃত্যুকাণ্ডের ঘটনা সাধিত হয়েছে একবার কুম্ভমেলার প্রাঙ্গণে, আর-একবার নয়া দিল্লি রেল স্টেশনে।

প্রশাসনিক ব্যর্থতার সমালোচনায় যে-প্রশ্নটি আস্তে আস্তে ভীষণ গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠছে, তা হল– সোশ্যাল মিডিয়ার অভাবিতপূর্ব অনুপ্রবেশ এবং অকল্পনীয় অপশাসন। রিল্‌সের যুগে মহাকুম্ভ স্বাধীন ‘কনটেন্ট ক্রিয়েটর’-দের মৃগয়াভূমি হয়ে উঠবে, সে সম্ভাবনা ছিলই। কিন্তু সোশ্যাল মিডিয়ার সুবাদে যে নানা কিসিমের ‘বকওয়াশ’ কনটেন্টও পরমার্থের সন্ধান পাবে, তা আগাম আন্দাজ করতে পারেনি সেখানকার প্রশাসন। এই মহাকুম্ভে মেয়েদের স্নানের দৃশ্য লুকিয়ে ‘ভিডিও’ করে সোশ্যাল মিডিয়ায় দেওয়া হয়েছে, এবং সেসব দেখার জন্য নগদ অর্থও গুনতে হবে উপভোক্তাদের। এই ‘খবর’টি আপাতত জাতীয় স্তরে ‘ভাইরাল’। উত্তরপ্রদেশ পুলিশের কাছে দু’টি কেস নথিভুক্ত হয়েওছে।

প্রাথমিক তদন্তে জানা গিয়েছে– সোশ্যাল মিডিয়ার বিভিন্ন প্ল্যাটফর্মে মেয়েদের টাওয়েল বা ভেজা পরিধানের ছবি ‘পোস্ট’ করে প্রোমোশন করা হচ্ছে এবং সেসব ভিডিও কনটেন্ট ‘অ্যাকসেস’ করতে হলে ১,৯৯৯ থেকে ৩,০০০ টাকা অবধি চাওয়া হয়েছে। ‘ওপেন বাথিং’ লিখে ‘সার্চ’ ১২-১২ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত তুঙ্গে ছিল বলে জানিয়েছে ‘টেলিমেট্রিও’, টেলিগ্রামের সার্চ ইঞ্জিন।

অর্থাৎ, পুণ্য-সংগ্রহের পাশাপাশি পুরুষের যৌনক্ষুধাও দিব্যি পুষ্ট হচ্ছে এই আবহে। যে কোনও ধর্মীয় অনুষ্ঠানে মহিলাদের স্নান করার উপলক্ষ তৈরি হলে তা আড়চোখে দেখার প্রবণতাটি নতুন নয়, কিন্তু মানস-প্রশান্তির পাশাপাশি সোশ্যাল মিডিয়াকে ব্যবহার করে দু’-পয়সা রোজগারের ধূর্তামিকে যদি অবিলম্বে দমন না-করা হয়, তা আরও বড় মাথাব্যথার কারণ হয়ে উঠবে।



Source link

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *