মহিলাদের সম্মানহানির অন্যতম দৃষ্টান্ত শৌচাগারের অভাব। প্রধান বিচারপতির মতে, এটিও ব্যক্তিগত মর্যাদার উল্লঙ্ঘন বইকি!
প্রতিটি মানুষের সম্মানিত হওয়ার এবং নীতিগতভাবে সম্মানজনক আচরণ পাওয়ার অধিকার রয়েছে। ১৯৪৮ সালের মানবাধিকারের সর্বজনীন ঘোষণাপত্রের সারসংক্ষেপ থেকে গৃহীত সিদ্ধান্ত সব মানুষেরই মর্যাদার অধিকারকে সুরক্ষিত করতে চায়। ‘অনুচ্ছেদ ১’-এ বলা হয়েছে যে, ‘সমস্ত মানুষ স্বাধীনভাবে জন্মগ্রহণ করে, এবং মর্যাদা ও অধিকারের দিক থেকে সবাই সমান।’
অথচ, বাস্তব বিপরীত। অনেকেই যথাযথ সম্মান পায় না। এমনকী, যথোচিত আত্মসম্মান বজায় রাখতেও ব্যর্থ। তার নেপথ্যে বিবিধ রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক ও সামাজিক ‘কারণ’ সক্রিয়। যেমন– দারিদ্র। মর্যাদার লঙ্ঘনে তার ভূমিকা উল্লেখণীয়। সামাজিক অবিচারও অন্যতম ‘কারণ’। আবার, অনেক সময়ে, রাজনৈতিক অজুহাতে কোনও ব্যক্তি বা গোষ্ঠীর মানবিক সুবিধা কেড়ে নেওয়া হয়। পাশবিক আচরণও মর্যাদা লঙ্ঘনের অন্তর্ভুক্ত। ‘হলোকাস্ট’-এর মতো গণহত্যা, গাজায় ইজরায়েলি তাণ্ডব, রোয়ান্ডায় সংখ্যালঘুদের হত্যা করা– মানবিক মর্যাদা লঙ্ঘনের প্রকৃষ্ট উদাহরণ। দারিদ্রের জেরে আবর্জনার স্তূপ থেকে খুঁটে খাবার খেতে বাধ্য হওয়া, বা বেঁচে থাকার জন্য অন্যদের উপর নির্ভরশীল হওয়াও মর্যাদা-লঙ্ঘন বইকি।
বিভিন্ন উন্নয়নশীল দেশে, বিশেষ করে মহিলাদের মর্যাদা লঙ্ঘনের, একটি উদাহরণ শৌচাগারের অভাব। এই সুবিধা না-থাকায় বর্তমানে বিশ্বের প্রায় ১০০ কোটি মানুষের খোলা জায়গায় শৌচকর্ম করা ছাড়া অন্য উপায় নেই, যা রাষ্ট্রসংঘের উপ-মহাসচিব ব্যক্তিগত মর্যাদার অবমাননা বলে উল্লেখ করেছেন। এই পরিস্থিতিতে সুপ্রিম কোর্টের মহামান্য প্রধান বিচারপতি বি. আর. গভাইয়ের মত কিছুটা আশার আলো দেখায়।
সম্প্রতি, এক অনুষ্ঠানে ‘মর্যাদা’ বিষয়ে তাঁর ‘সার্বিক’ মতপ্রকাশ করতে গিয়ে তিনি বলেন– আত্মসম্মান আমাদের বেঁচে থাকার চাবিকাঠি, তবে গোপনীয়তা বজায় রাখার অধিকার, শারীরিক স্বায়ত্তশাসন ও জীবনের অন্যান্য ক্ষেত্রে নিজের পছন্দকে প্রাধান্য দেওয়াও একইভাবে অপরিহার্য। বলা বাহুল্য, মানবিক মর্যাদারক্ষায় প্রতিফলিত হয় ন্যায়বিচারের প্রয়াস।
কিন্তু আইনের উচ্চাসনে বসে শুধু এই মতপ্রকাশ করলেই কি দায়িত্ব শেষ হয়ে যায়? ব্যবহারিক জীবনে তা কার্যকর করা না-গেলে এই সমস্ত কথার মূল্য কী! ‘স্বচ্ছ ভারত মিশন’-এর আওতায় ভারতকে ‘ওপেন ডেফিকেশন ফ্রি’ (ওডিএফ) বলে ঘোষণা করেছিল কেন্দ্রীয় সরকার। যদিও বাস্তবচিত্র অন্য কথা বলে। ‘মর্যাদা’-র ধারণার সঙ্গে ‘আত্ম’-কে যুক্ত করতে পারলে তবেই তা ‘আত্মমর্যাদা’-র আকাশকে উন্মুক্ত করে। প্রতিটি মানুষের আত্মমর্যাদার গৌরবকে উপলব্ধি করতে হবে আমাদের। বুঝতে হবে, যে যতটুকু ক্ষমতার অধিকারী, সেই আবহেই ক্ষমতার অপব্যবহার করা হয়। এই ত্রুটি সংশোধনের চেষ্টা আমাদের আত্মমর্যাদাকে আরও উচ্চ করে তুলবে।