নির্মল ধর: রাতের আঁধার! গোরস্থানে গা ছমছম। অশরীরীদের ভিড়ে দাঁড়িয়ে অঙ্কুশ এবং ঐন্দ্রিলা। কাচুমাচু মুখে ভয়ে সিঁটিয়ে রয়েছেন দুই তারকা! আচমকাই কেন কবরস্থানে? সেই সন্ধান করতেই প্রেক্ষাগৃহে গিয়েছিলাম। সাবজেক্ট দেখে প্রথমেই ‘যমালয়ে জীবন্ত ভানু’ নামের বেশ জমজমাট বাংলা ছবিটির কথা মনে পড়ল। কিন্তু কোথায় কী? ‘চন্দ্রবিন্দু’তে যেন তার উলাটপুরান ঘটল। মর্ত্যে নেমে এলো মৃত মানুষ! ভাগ্যিস, কলকাতায় ঘটেনি সেই অর্ধভৌতিক ঘটনা! ঘটেছে সাগরপাড়ের বিলেতে, লন্ডন শহরে। যেখানে রয়েছে তিন মৃত ‘আধা সাহেব’। দম্পতি অনন্ত ও পার্বতী মার্টিন আর জয়ন্ত নামের বিপত্নীক বাঙালি তরুণ। সকলে একই সমাধিস্থলে প্রায় পাশাপাশি শয়ান। আর জ্যান্ত মানুষ হিসেবেও রয়েছেন তিনজন। ঝকঝকে তরুণ অরূপ, তাঁর ফ্রেন্ড ফিলোসফার, গাইড হিসেবে মাঝবয়সি খুড়ো আর সদ্য বিধবা তরুণী মীরা। এই ছ’জনের বাকবিতন্ডা, খুনসুটিপনা, প্রেম নিয়ে সে এক জগাখিচুড়ি চিত্রনাট্য রচনা করেছেন আদিত্য সেনগুপ্ত।
আর সেই চিত্রনাট্য নিয়ে ‘চন্দ্রবিন্দু’ বানিয়েছেন রাজা চন্দ। অভিযোগ চিত্রনাট্য নিয়ে। ছবিটা না হয়েছে নিছক কমেডি, না ভৌতিক। গল্পটা কীরকম? অরূপের বাবা লন্ডন শহরে ‘বুক ওয়ার্ম’ নামের একটি বিশাল বইয়ের দোকানের মালিক। ছেলে নিজেও লেখালেখি করতে চায়। মজার ব্যাপার অতবড় দোকানে একটিবারের জন্যও অন্তত একজন বই কেনার খদ্দের দেখা গেল না। কিংবা অরূপকে এক মিনিটের জন্যেও কম্পিউটারের সামনে বা খাতাকলম নিয়ে কিছু লিখতে দেখলাম না! আরেকটি প্লট এতটাই অগভীর যে অবাকই হলাম বেশ। স্বামী জয়ন্তর মৃত্যুর পরক্ষণেই মীরার বাড়ি ফেরার পথে অরূপের সঙ্গে পরিচয় ঘটে। আর সেই পর্ব শেষ হতে না হতেই দেখলাম প্রেমে পড়ার জন্য হাঁকুপাকু করে উঠছে মীরা। আর অন্যদিকে মৃত বাবা-মা কবর থেকে উঠে তাঁদের প্রেমকাহিনি দেখতে থাকে। মৃত স্বামী জয়ন্তও ভূত হয়ে মীরাকে অনুসরণ করে। গল্পে রাখা হয়েছে কিছু সাহেব ভূতও। তাঁরা আবার ইংরেজি বলেছে বাংলা উচ্চারণে!
ভূত আর মানুষের এমন বাক্যালাপ, একে-অপরকে ছুঁতে পারা বা না পারা নিয়ে মজার মজার দৃশ্য তৈরি করা যেত। কিন্তু সেপথে না হেঁটে চোখের তলায় কালো রং দিয়ে তিনজনকে ভূত সাজিয়ে সে এক হাস্যকর ও অবিশ্বাস্য কিছু দৃশ্যের জোড়াতালিতে ‘চন্দ্রবিন্দু’ ছবিটির সত্যিই ‘চন্দ্রবিন্দু-প্রাপ্তি’ ঘটিয়েছেন পরিচালক। মনে হল, লন্ডনের ট্যুর ডায়েরি দেখতে বসেছি। আর এমন প্রাণহীন চিত্রনাট্যে প্রাণ সঞ্চার করার আপ্রাণ চেষ্টা করেছেন শান্তিলাল, তুলিকা বসু, অঙ্কুশ, ঐন্দ্রিলা বা অনির্বাণ চক্রবর্তীর মতো ভালো অভিনেতারা। তাঁদের জন্য একবার ‘চন্দ্রবিন্দু’ দেখাই যায়।