আহমেদাবাদে পুলিশ-স্পনসর্ড পোস্টার ক্যাম্পেনে ঘুরিয়ে বলা হল, গভীর রাতে মেয়েরা পার্টি করতে গেলে ধর্ষিতা হতেই পারে। ছিঃ!
দেশপ্রেম কি যুদ্ধ দিয়ে জাহির হয়? ‘অপর’-কে আক্রমণ করার মধ্যে দিয়ে উদ্ভাসিত হয়? ‘অপারেশন সিঁদুর’ ঘিরে জ্যাবজেবে দেশপ্রেমে যারা মাতোয়ারা, তাদের বলার, প্রত্যাঘাতের প্রয়োজন থাকলে অবশ্য পালটা দিতে হবে শত্রুকে– বিশেষত, বিপক্ষ যদি সহ্যশক্তির সীমা অতিক্রম করে যায়– কিন্তু দেশপ্রেমকে রাজনৈতিক ফায়দা লুটতে বা আরও নির্দিষ্ট করে বললে– ভোটের স্বার্থে ব্যবহার করলে– সমালোচনার পরিসর খোলা রাখতেই হবে।
এ দেশের গণতান্ত্রিক কাঠামো সেই অবকাশ দিয়ে রেখেছে নাগরিকদের। ‘অপারেশন সিঁদুর’-এর কার্যবিধির সারাংশ প্রেস তথা দেশের আমজনতার জন্য তুলে ধরার দায়িত্বে ছিলেন কর্নেল সোফিয়া কুরেশি ও উইং কম্যান্ডার ব্যোমিকা সিং। দেশের ইতিহাসে এ-ও প্রথম।
মেয়েরা আর পিছিয়ে নেই, পুরুষের সঙ্গে কাঁধ মিলিয়ে মেয়েরাও জীবনের সর্বত্র পা রাখতে সক্ষম, এ ধারণার শিকড়ে সার-জল পড়েছিল এই দু’জন নারীর উপস্থিতিতে। এর নেপথ্যেও রাজনৈতিক সমীকরণ বিস্তারের ছলনা রয়েছে– এমন অভিযোগ উঠলেও– যুদ্ধের মতো রীতিমতো পুরুষালি শক্তিমত্ততা প্রদর্শনের কর্মকাণ্ডে দু’জন নারীর এভাবে সামনে এগিয়ে আসা ছিল নিঃসন্দেহে চমকপ্রদ ঘটনা। সমগ্র দেশ সাদরে তাঁদের বরণ করেছিল। তাঁদের ভূমিকায় খুশি হয়েছিল।
কিন্তু এর থেকে কি আমরা দুয়ে-দুয়ে চার করার দিকে ঝুঁকতে পারি যে, মেয়েদের অবস্থান সত্যিই বদলেছে ও তাদের অগ্রগতির নেপথ্যে পুরুষরা এমন সহযোগীর ‘রোল’ পালন করছে– যেখানে মেয়েদের যদি প্রয়োজন হয়, তবেই দায়িত্ব পালন করবে পুরুষ, নতুবা মেয়েরা তাদের মতোই এগিয়ে যাবে জীবনপ্রবাহে। তাদের অযাচিত সাহায্যের দরকার নেই। কিন্তু সেই ভাবনা যে গুড়ে বালির মতোই খেল্-পণ্ডকারী তা আরও একবার প্রমাণ হল।
আহমেদাবাদে, পুলিশ-স্পনসর্ড পোস্টার ক্যাম্পেনে, যেসব কথা প্রচারিত ও প্রকাশিত হয়েছে, তা পড়লে চক্ষু ছানাবড়া হতে বাধ্য। লেখা হয়েছে– ‘গভীর রাত্রের পার্টিতে যাওয়া মানে ধর্ষণ বা গণধর্ষণের সম্ভাবনাকে উসকে দেওয়া’। লেখা হয়েছে– ‘ছায়াচ্ছন্ন জায়গায় বন্ধুদের সঙ্গে গেলে চলবে না, আঁধারে একা কোথাও বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়লে, ধর্ষিতা বা গণধর্ষিতা হওয়ার সম্ভাবনা থেকে যায়’। এমন ‘কনটেন্ট’ কি গ্রহণীয়? তাও কিনা মেয়েদের সচেতন করতে চাওয়া কোনও পোস্টারে? ছি-ছি রব উঠেছে, স্বভাবতই। পুলিশের তরফে দোষ ঠেলে দেওয়া হয়েছে সহযোগী সংস্থার দিকে।
কিন্তু ভুললে চলবে কী করে– এমন ‘উপদেশ’ দেওয়ার মানস-কারণটি হল, মেয়েদের পিছড়েবর্গের ভেবে নেওয়া। মেয়েদের আত্মবিকাশের স্বাধীনতাকে অস্বীকার করা, আর ধরে নেওয়া যে, মেয়েদের যৌনতা আগুনের মতোই বিপজ্জনক, সেই আগুন-শিখাকে সামলে রাখতে হবে মেয়েদেরই। তবেই মঙ্গল। ‘গভীর রাত’, ‘বন্ধুবৃত্ত’ এসব সতর্কতার নামে অছিলা মাত্র।